৮ বিভাগের মাঝে খারাপ বায়ুমান সিলেটের

সিলেট

শুধু ঢাকা নয়, সিলেটের বাতাসেও বিষ ছড়িয়ে পড়েছে। অপরিকল্পিত উন্নয়নের হাত ধরে বিষাক্ত বাতাস বইছে ‘নির্মল বায়ুর’ সিলেটে। নাজুক হয়ে পড়েছে সিলেটের বায়ুমান। বুধবার সকালে দেশের ৮টি বিভাগীয় শহরের বায়ুর মানের হিসাব নিয়ে দেখা যায়, সিলেট নগরীর বায়ুর মান সবচেয়ে খারাপ।

বুধবার সকাল পৌনে ৯টায় আইকিউএয়ারের মানসূচকে এ নগরীর বায়ুর মান ছিল ২১৮। বায়ুর এ মানকে ‘খুব অস্বাস্থ্যকর’ হিসেবে গণ্য করা হয়। ঠিক এ সময়েই বিশ্বের ১২৬ নগরীর মধ্যে বায়ুদূষণে তৃতীয় স্থানে আছে ঢাকা। আইকিউএয়ারের মানসূচকে ঢাকার গড় বায়ুমান ১৭৯। এ মানকে ‘অস্বাস্থ্যকর’ বলে গণ্য করা হয়। দেখা যাচ্ছে, রাজধানীর চেয়েও সিলেটের বায়ুর মান নাজুক।

বায়ুদূষণের এ চিত্র তুলে ধরেছে সুইজারল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ার। প্রতিষ্ঠানটি বায়ুদূষণের পরিস্থিতি নিয়মিত তুলে ধরে। বাতাসের মান নিয়ে তৈরি করা এই লাইভ বা তাৎক্ষণিক সূচক একটি নির্দিষ্ট শহরের বাতাস কতটা নির্মল বা দূষিত, সে সম্পর্কে মানুষকে তথ্য দেয় ও সতর্ক করে।বুধবার সকালে ঢাকা ও সিলেট ছাড়া বাকি বিভাগীয় শহরের মধ্যে চট্টগ্রামের বায়ু মান ১১৯, রাজশাহী ১৭৪, খুলনা ১১৯, রংপুর ১৬৫, ময়মনসিংহ ১৬৩ ও বরিশাল ৯৯।

বুধবার আইকিউএয়ারের দেওয়া সতর্কবার্তায় ঢাকাবাসীর উদ্দেশে পরামর্শ, বাইরে বের হলে সুস্বাস্থ্যের জন্য অবশ্যই মাস্ক পরতে হবে। খোলা স্থানে ব্যায়াম করা যাবে না। আরও একটি পরামর্শ, ঘরের জানালা বন্ধ রাখতে হবে। এসব সতর্কবার্তা ঢাকাসহ দেশের যেসব বিভাগীয় শহরে দূষণের মাত্রা বেশি সেখানেও প্রযোজ্য।

সিলেটে বুধবার সকালে বায়ুর যে মান তাকে ‘অস্বাভাবিক’ বলছেন পরিবেশ অধিদপ্তরের সিলেটের সহকারী পরিচালক মো. বদরুল হুদা। তিনি বলেন, নগরীতে প্রচুর ধুলা আছে, কোথাও কোথাও বর্জ্য পোড়ানো হয়। কিন্তু বায়ুর মান এতটা খারাপ হবে, তা ভাবিনি। বিষয়টি নিয়ে আমরা তৎপর হব। এ বিষয়ে খোঁজ নেব।

এরই মধ্যে গত মঙ্গলবার আইকিউএয়ারের ‘বৈশ্বিক বায়ুমান প্রতিবেদন ২০২৪’ তুলে ধরা হয়েছে। ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী, বায়ুদূষণে ২০২৪ সালে দেশ হিসেবে দ্বিতীয় অবস্থানে ছিল বাংলাদেশ। আর নগর হিসেবে বিশ্বের তৃতীয় শীর্ষ দূষিত নগর ছিল ঢাকা। ২০২৩ সালে বায়ুদূষণে বাংলাদেশ শীর্ষে ছিল। নগর হিসেবে ঢাকার অবস্থান ছিল দ্বিতীয়। গত বছর (২০২৪) বায়ুদূষণে শীর্ষ দেশ ছিল আফ্রিকার চাদ। আর নগর হিসেবে শীর্ষে ছিল ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লি।

সার্বিকভাবে বায়ুদূষণে আগের বছরের তুলনায় গত বছর বাংলাদেশের অবস্থানের সামান্য পরিবর্তন হয়েছে। তবে এই পরিবর্তনকে তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন না পরিবেশবাদী ও গবেষকেরা। তাঁরা বলছেন, দূষণ আরও বিস্তৃত হচ্ছে, এবারের প্রতিবেদন সেই বাস্তবতাকে তুলে ধরেছে। কারণ, আগে দেখা গেছে যে রাজধানীর তুলনায় দেশের সার্বিক গড় বায়ুমান কিছুটা ভালো থাকত। কিন্তু এবারের প্রতিবেদনে দেখা গেছে, বাংলাদেশ এবং দেশের সবচেয়ে দূষিত নগরী ঢাকার বায়ুর মান প্রায় একই। উভয়ের মান ৭৮।

গত ডিসেম্বর, জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে এক দিনও নির্মল বায়ু পাননি রাজধানীবাসী। চলতি মাসেরও একই হাল। দূষণসংক্রান্ত বিষয় নিয়ে গবেষণাপ্রতিষ্ঠান ক্যাপসের এক জরিপে দেখা গেছে, ডিসেম্বরে যত বায়ুদূষণ ছিল, তা গত ৯ বছরে সর্বোচ্চ। আবার গত জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিতেও দূষণের মান ছিল ৯ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।

ঢাকার বায়ুদূষণের প্রধান উপাদান হলো বাতাসে অতিক্ষুদ্র বস্তুকণা বা পিএম ২.৫-এর উপস্থিতি। ঢাকার বাতাসে এর উপস্থিতি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মানমাত্রার চেয়ে ১৭ গুণ বেশি।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *