কারাগারগুলোয় জনবল সংকট বিরাজ করার সংবাদ অনভিপ্রেত। দেশে মোট কারাগারের সংখ্যা ৬৮টি। এর মধ্যে ১৩টি কেন্দ্রীয় কারাগার এবং ৫৫টি জেলা কারাগার। এসব কারাগারে বন্দি ধারণক্ষমতা ৪২ হাজার ৬২৬ হলেও ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত সেখানে বন্দির সংখ্যা ছিল ৮৬ হাজারের বেশি, যা ধারণক্ষমতার দ্বিগুণেরও বেশি। এতে প্রত্যাশিত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন কারাবন্দিরা। উপরন্তু নানারকম অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনা সেখানে জেঁকে বসেছে, যা মোটেই কাম্য নয়। উল্লেখ্য, ৬৮ কারাগারে দায়িত্ব পালনের জন্য পুরুষ কারারক্ষী রয়েছেন ৮ হাজার ৫৬৫ জন এবং মহিলা ৬১৭ জন। জেল কোড অনুযায়ী আটজন বন্দির বিপরীতে একজন কারারক্ষী থাকার কথা।
কিন্তু বাস্তবে একজন কারারক্ষীকে এর চেয়েও বেশি বন্দি সামলাতে হচ্ছে। তাছাড়া দেশের অন্য কোনো বাহিনীর দৈনিক দুবার ডিউটি না থাকলেও কারারক্ষীদের ক্ষেত্রে রয়েছে দুই শিফটে ডিউটি; অথচ অতিরিক্ত ডিউটির জন্য নেই কোনো বাড়তি সুবিধা। এটি অমানবিক। দেখা গেছে, কারারক্ষীদের মধ্যে কারও বিরুদ্ধে অপরাধের প্রমাণ পাওয়া সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের পর সংকট আরও গভীর হয়। কেননা, আইনি কারণে ওই পদে নতুন লোক নিয়োগ দেওয়া সম্ভব হয় না। এ পরিপ্রেক্ষিতে অনেক বিভাগ ও পদ শূন্য থাকায় সীমিত জনবল দিয়ে কার্যক্রম চালাতে কারা কর্তৃপক্ষকে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
বন্দিদের বিষয়ে কর্তৃপক্ষ কারাফটকে একটি অঙ্গীকারনামা লিখে রেখেছেন-‘রাখিব নিরাপদ, দেখাব আলোর পথ।’ আমরাও চাই-দেশের প্রতিটি কারাগারে এমন পরিবেশ তৈরি হোক, যাতে কারাগার থেকে বের হওয়া প্রত্যেক বন্দি বাস্তবিক অর্থেই ‘আলোর পথের অভিযাত্রী’ হয়ে উঠতে সক্ষম হয়। কিন্তু প্রশ্ন হলো, সীমিত জনবল দিয়ে এ অঙ্গীকারনামা আদৌ কি পূরণ সম্ভব? বন্দি ধারণক্ষমতা বাড়ানোর পাশাপাশি কারাগারগুলোকে প্রকৃত সংশোধনাগার হিসাবে প্রতিষ্ঠা করতে চায় সরকার। সরকারের এ উদ্যোগ প্রশংসনীয়; তবে এর পাশাপাশি কারাগারে বন্দির সংখ্যা হ্রাস করার উদ্যোগও থাকা দরকার। বলার অপেক্ষা রাখে না, এক্ষেত্রে বড় প্রতিবন্ধকতা হলো স্বীকৃত কারাবন্দিদের সঠিক পরামর্শ ও আইনি সহায়তা প্রদানে অপ্রতুলতা এবং প্রচলিত বিচারব্যবস্থার মন্থরগতি
এ থেকে উত্তরণে প্রয়োজনে আইনের পরিবর্তন ও প্রয়োগের পাশাপাশি প্রক্রিয়াগত পরিবর্তনও জরুরি। কারাগারগুলোয় বিচারাধীন নারী-পুরুষের পাশাপাশি সাজাপ্রাপ্ত কয়েদিরাও রয়েছেন। কারাগারে থাকা অপরাধীরা কারা কর্তৃপক্ষের সংস্পর্শে এসে নীতি-নৈতিকতা ও আদর্শের চর্চা করে সংশোধিত হওয়ার পথ বেছে নেবে, এটাই প্রত্যাশিত। এ প্রত্যাশা পূরণে অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর হওয়ার পাশাপাশি কারাগারগুলোয় বিরাজমান জনবল সংকট দ্রুত নিরসনের পদক্ষেপ নেওয়া হবে, এটাই প্রত্যাশা।
শেয়ার করুন