বিএনপির সমাবেশ: ফাঁকা নেই সিলেটের কোন কমিউনিটি সেন্টার

সিলেট

নগরের কদমতলী এলাকার বাসিন্দা তায়েফ আহমদের গায়ে হলুদ ১৮ নভেম্বর। গায়ে হলুদের আয়োজন করতে ওই রাতের জন্য দক্ষিণ সুরমার চন্ডিপুল এলাকার ময়ুর কুঞ্জ কমিউনিটি সেন্টার ভাড়া করতে গিয়েছিলেন তিনি। তবে সেন্টারটি ফাঁকা পাওয়া যায়নি।

এরপর নগরের আরও কয়েকটি সেন্টার ঘুরেও ১৮ নভেম্বর রাতের জন্য কোনো কমিউনিটি সেন্টারই ফাঁকা পাননি তায়েফ।

তিনি বলেন, ‘ওই রাতের জন্য নগরের কোনো সেন্টারই ফাঁকা পাওয়া যাচ্ছে না। সব বুকিং হয়ে গেছে। তাই একটি রেস্তোরাঁয় গায়ে হলুদের আয়োজন করবো।’

তায়েফের কথার সূত্র ধরে সোমবার সিলেট নগরের আগ্রা, মালঞ্চ, নুরে আলা, সাজিদ আলীসহ অন্তত ৮টি কমিউনিটি সেন্টারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সবগুলোই ১৮ নভেম্বর রাতের জন্য ভাড়া হয়ে গেছে। বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ও সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর পক্ষে এগুলো বুকিং নেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।

১৯ নভেম্বর সিলেটে বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশ। ওইদিন দুপুরে নগরের আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে সমাবেশ শুরু হবে। ওই সমবেশ সফলে ৬টি কমিটি করেছে বিএনপি। মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী হলেন- আবাসন ব্যাস্থাপনা কমিটির আহ্বায়ক।

বিএনপি নেতারা জানিয়েছেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলে সমাবেশের দিন সকালেই বিভাগের ৪ লাখ নেতা-কর্মী সিলেটে আসবেন। তবে অন্যান্য বিভাগে যেভাবে সমাবেশের দুদিন আগে থেকে পরিবহন ধর্মঘট ডাকা হয়েছে, সিলেটেও এমনটি হতে পারে ধরে নিয়ে বিকল্প ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

এ ক্ষেত্রে আগেই সিলেট চলে আসবেন বিএনপির নেতা-কর্মীরা। নগরের কমিউনিটি সেন্টারগুলোতে তারা থাকবেন। এ উদ্দেশেই কমিউনিটি সেন্টারগুলো বরাদ্দ নেয়া হয়েছে।

সিলেট জেলা বিএনপির এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর পক্ষ থেকে নগরের অন্তত ২৫টি কমিউনিটি সেন্টার ১৮ নভেম্বর রাতের জন্য বুকিং নেয়া হয়েছে। সেখানেই কর্মীদের থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা হচ্ছে।

এ ছাড়া নগরের খোলা মাঠগুলোতেও কর্মী-সমর্থকদের রাত্রি যাপনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

সোমবার বিকেলে নগরের সোবহানীঘাট এলাকার আগ্রা কমিউনিটি সেন্টারে পরিচয় গোপন করে ১৮ নভেম্বরের জন্য বুকিং নেয়ার আগ্রহ প্রকাশ করলে ওই সেন্টারের ব্যবস্থাপক সুমন মিয়া জানান, ১৮ নভেম্বর দিনের জন্য বুকিং দেয়া যাবে। তবে সন্ধ্যার পর থেকে পুরো রাতের জন্য আগেই বুকিং হয়ে গেছে। মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর পক্ষ থেকে এই বুকিং নেয়া হয়েছে।

সুমন মিয়া বলেন, ‘১৮ নভেম্বর রাতের জন্য নগরের কোনো সেন্টারই ফাঁকা পাবেন না। বিএনপির লোকজন থাকার জন্য নগরের ২২টি কমিউনিটি সেন্টার ওই রাতের জন্য বরাদ্দ নেয়া হয়েছে বলে শুনেছি।’

নেতা-কর্মীদের জন্য বিএনপির কমিউনিটি সেন্টার ভাড়া নেয়ার বিষয়টি অবগত আছেন জানিয়ে সিলেট মহানগর পুলিশের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘আমরাও এমনটি শুনেছি। কয়েকটি সেন্টার ভাড়া নেয়া হয়েছে বলে নিশ্চিতও হয়েছি। বাকিগুলোর বিষয়ে খোঁজ নিচ্ছি।’

কমিউনিটি সেন্টার ছাড়াও বিএনপির নেতা-কর্মীদের জন্য নগরের বিভিন্ন মসজিদে রাত্রিযাপনের ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে নতুন তথ্যও দেন পুলিশের ওই কর্মকর্তা।

বিভিন্ন গণমাধ্যমে সিলেটের সমাবেশে ৪ লাখ লোক সমাগম হবে বললেও বিএনপি নেতা এ নগরীতে দুই থেকে আড়াই লাখ লোক সমাগম ঘটানোর লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছেন বলে জানা গেছে।

কমিউনিটি সেন্টার বরাদ্দ নেয়ার বিষয়ে সিলেট সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর সঙ্গে মোবাইলে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।

তবে এ বিষয়ে সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী বলেন, ‘এ পর্যন্ত যতগুলো বিভাগে বিএনপি গণসমাবেশ করেছে সবগুলোতে আগে থেকে সরকার ধর্মঘট ডাকিয়েছে। সিলেটেও এমনটি হতে পারে বলে আমাদের শঙ্কা। তাই আগে থেকেই আমার বিভিন্ন বিকল্প ব্যবস্থা নিয়ে রেখেছি।’

কী ব্যবস্থা নিয়েছেন তা প্রকাশে অনীহা জানিয়ে আব্দুল কাইয়ুম বলেন, ‘কৌশলগত কারণে সব এখন বলা যাবে না। শুধু এটুকু বলতে পারি- কোনা বাধাই আমাদের সমাবেশে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পরবে না।’

এদিকে, সিলেটে বিএনপির সমাবেশের আগে পরিবহন ধর্মঘট ডাকা নিয়ে এখন পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এ বিষয়ে সোমবার ঢাকায় সিলেটের পরিবহন শ্রমিক সংগঠনগুলোর নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি ও আওয়ামী লীগের সভাপতি মন্ডলীর সদস্য শাহজাহান খান।

বৈঠক শেষে সিলেট জেলা বাস-মিনিবাস শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মো. মইনুল ইসলাম বলেন, ‘সিলেটে ধর্মঘটের কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। আমরা বিএনপির গণসমাবেশের সময়ও গাড়ি স্বাভাবিকভাবে চলাচল করার পক্ষে।’

সোমবার দুপুরে সিলেটের সমাবেশস্থল আলীয় মাদ্রাসা মাঠ পরিদর্শন করেন বিএনপি নেতারা। এ সময় বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা খন্দকার আবদুল মুক্তাদির বলেন, ‘আমরা মনে করছি, পরিবহন শ্রমিকেরা গণসমাবেশের আগে ধর্মঘট দেবেন না। আমরা সমাবেশ আয়োজনে পরিবহন শ্রমিকদের সহযোগিতা চাইছি।’

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *