নারীর কাছ থেকে ‘জোরপূর্বক স্বাক্ষর নিলেন’ সিলেট পাসপোর্ট অফিসের পরিচালক মাজহার!

সিলেট

সিলেট বিভাগীয় পাসপোর্ট অফিসে নারীকে হয়রানি ও তাঁর কাছ থেকে জোরপূর্বক একটি কাগজে স্বাক্ষর নিয়েছেন পরিচালক- এমন গুরুতর অভিযোগ পাওয়া গেছে। 

এ বিষয়ে সিলেট বিভাগীয় পাসপোর্ট অফিসের পরিচালক মাজহারুল ইসলামের বিরুদ্ধে সিলেটের মোগলাবাজার থানার গোটাটিকর পাঠানপাড়া এলাকার ৫৩ বছর বয়েসি এক নারী সংশ্লিষ্ট থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। পরে অভিযোগটি তদন্তের নির্দেশ দেন সিলেট মেট্রোপলিটন ম্যাজেস্ট্রেট (আমলি) আদালত-৫।

অভিযোগপত্রে উল্লেখ-  ওই নারী পাসপোর্ট তৈরির জন্য নিয়ম অনুযায়ী ব্যাংক চালানের টাকা জমা দিয়ে গত ১০ নভেম্বর সিলেট বিভাগীয় পাসপোর্ট অফিসে ফাইল জমা দেন। কিন্তু টানা কয়েকদিন পাসপোর্ট অফিসে গিয়ে অবশেষে ওই নারীকে এক কর্মকর্তা জানান- ফাইলে বিশেষ চিহ্ন না থাকায় তা অনলাইনে নিবন্ধন করা হচ্ছে ন। এভাবে ওই নারী হয়রানির শিকার হয়ে গত ১৪ নভেম্বর সিলেট বিভাগীয় কমিশনারের অফিসে গিয়ে অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনারকে বিষয়টি অবগত করে পাসপোর্ট পেতে তাঁর সহযোগিতা চান। পরে অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার পাসপোর্ট অফিসে গিয়ে ওই নারীকে নিয়ম অনুযায়ী ফিঙ্গার নিয়ে পাসপোর্ট দিতে সুপারিশ করেন।

কিন্তু এ ঘটনায় ওই নারীর উপর ক্ষেপে যান পাসপোর্ট অফিসের কর্মকর্তারা। তারা অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনারের চাকরি করেন না এবং ওই নারী কেন বিভাগীয় কমিশনার অফিসে গেলেন এ নিয়ে তাকে গালিগালাজ করেন। তখন সাহারা খানম বাধ্য হয়ে পাসপোর্ট অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহা পরিচালক উম্মে সালমা তানজিয়ার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে কল দিয়ে বিষয়টি জানালে তিনি তাকে সিলেট বিভাগীয় পাসপোর্ট অফিসের পরিচালক মাজহারুল ইসলামের কাছে গিয়ে তাঁর নাম বলতে বলেন।

সালমা তানজিয়ার এ কথায় পাসপোর্ট তৈরি গিয়ে ভোগান্তির শিকার ওই নারী ১৬ নভেম্বর সকাল সকাল ১১টার দিকে সিলেট বিভাগীয় পাসপোর্ট অফিসের পরিচালক মাজহারুল ইসলাম কক্ষে গিয়ে তাকে পাসপোর্ট অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালকের কথা বললে তিনি ওই নারীকে সেখানে দাঁড়িয়ে থাকতে বলেন। প্রায় ২ ঘন্টা পর কক্ষে ফিরে মাজহারুল ওই নারীকে বলেন- ‘আপনার পাসপোর্টের জন্য জনৈক ছয়েফ খানকে ৮ হাজার টাকা দিয়েছেন মর্মে একটি কাগজে লিখিত দিলে আপনার ফিঙ্গার নেওয়া হবে।’ এ কথা শুনে সাহারা খানম পাসপোর্ট করার জন্য কাউকে কোন টাকা দেই নাই বলে জানান এবং কোনো লিখিত অভিযোগ দিতে অস্বীকার করেন। এসময় পাসপোর্ট অফিসের পরিচালক মাজহারুল ইসলাম তাঁকে বিভিন্ন ধরনের ভয়ভীতি প্রদান করেন। একপর্যায়ে তিনি তার অফিসে কর্মরত আরও ২ জন কর্মকর্তাকে ডেকে নিয়ে এসে কক্ষের দরজা বন্ধ করে দেন। তখন ওই নারী প্রাণ ও ইজ্জতের ভয়ে মাজহারুলের কথামতো একটি সাদা কাগজে ‘ছয়েফ খানকে আমার পাসপোর্টের জন্য ৮ হাজার টাকা দিয়েছি’ লিখে দেন। পরে ওই নারীর পাসপোর্টের জন্য তার ফিঙ্গার নেওয়া হয়।

এ ঘটনায় ওই নারী সিলেটের মোগলাবাজার থানায় গত ১৬ নভেম্বর লিখিত অভিযো দায়ের করেন।

এ বিষয়ে মাজহারুল ইসলাম মুঠোফোনে সিলেটভিউ-কে বলেন- ওই মহিলাই তো উল্টো আমার কাছে অভিযোগ করেছেন যে, তাঁর কাছ থেকে পাসপোর্ট তৈরি করে দেওয়ার নামে এক ব্যক্তি ৮ হাজার টাকা নিয়েছেন। এ বিষয়ে তিনি আমার কাছে লিখিত অভিযোগও দিয়েছেন। আমি তাঁর কাছ থেকে জোরপূর্বক লিখিত কোনো কিছু নেইনি।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন- তাঁকে কোনোভাবেই হয়রানি করা হয়নি। প্রথমদিন অনলাইন ওই নারীর ডাটা নেয়নি বলেই প্রথম দিন ফিঙ্গার নেওয়া যায়নি। তবে পরদিনই ফিঙ্গার নেওয়া হয়েছে। তদন্ত করলেই সব অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণিত হবে।

মোগলাবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শামসুদ্দুহা পিপিএম সিলেটভিউ-কে বলেন- এ বিষয়ে এখনও মামলা হয়নি। আদালতের নির্দেশে অভিযোগটি তদন্ত করছি আমরা। সত্যতা পেলে এ বিষয়ে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *