সিলেটে ‘নতুন প্রজাতির সাপ’ পেয়েছে বাংলাদেশ

মৌলভীবাজার

সিলেট বিভাগের মৌলভীবাজারে একটি নতুন প্রজাতির ‘ঢোঁড়া সাপ’ পেয়েছে বাংলাদেশ। এর নাম ‘দাগিঘাড়-ঢোঁড়া’। ইংরেজি নাম Bar-necked Keelback। এ নিয়ে দেশে বিচরণকারী রেকর্ডকৃত সাপ প্রজাতির সংখ্যা দাঁড়ালো ৯৪টিতে।

ইতোপূর্বে গবেষকরা বাংলাদেশের সমতল, নদী-বিল-জলাভূমি ও সামুদ্রিক প্রেক্ষাপটে ৯৩টি সাপের বিচরণ রেকর্ড করেছেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ডিপ ইকোলজি অ্যান্ড স্নেক রেসকিউ ফাউন্ডেশনের রিসার্চ অ্যান্ড পাবলিকেশন উইংয়ের চারজন গবেষক এ গবেষণা কাজটি সম্পন্ন করেন। এ সম্পর্কিত একটি গবেষণা প্রবন্ধ সম্প্রতি ২৫ নভেম্বর দেশের শীর্ষস্থানীয় বিজ্ঞান সাময়িকী বাংলাদেশ জার্নাল অব জুয়োলজিতে প্রকাশিত হয়েছে। ওই গবেষকরা দেশের প্রথিতযশা বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে ওই নতুন প্রজাতি সম্পর্কে নিশ্চিত হয়েছেন।

ওই চার গবেষক দলের অন্যতম গবেষক ও বন্যপ্রাণী আলোকচিত্রী আদনান আজাদ বলেন, দেশে নতুন প্রজাতি একটি সাপ রেকর্ডভুক্ত হলো। এর নাম ‘দাগিঘাড়-ঢোঁড়া’। এর ইংরেজি নাম Bar-necked Keelback। দেশে সাপটির উপস্থিতি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য ও উপাত্ত সংগ্রহে প্রায় দেড়বছর যাবত ডিপ ইকোলজির গবেষক ও ভলান্টিয়াররা মাঠ পর্যায়ে কাজ করেছেন। এ সাপের বাইটকেস হিস্ট্রিও লিপিবদ্ধ করেন তারা।

তিনি আরও বলেন, গবেষক ও ভলান্টিয়াররা দেশের ১৬টি জেলায় অবস্থিত নদী ও জলাভূমিগুলো পর্যবেক্ষণ করেছেন। সেখানে বেশ কয়েকবার এ সাপটির দেখা পাওয়া গেছে। কিন্তু সাধারণ ঢোঁড়া সাপ মনে করে বিষয়টিকে গুরুত্ব দেননি তারা। ২০১৯ সালে বন্যপ্রাণী বিষয়ক একটি বইতে বিশেষ দাগটি তাদের নজরে আসে। এরপর তা অন্যান্য তথ্য-উপাত্ত মিলিয়ে ও বিশেষজ্ঞদের দেখানোর পর নিশ্চিত হয়েছেন এটা বাংলাদেশের নতুন জাতের সাপ।

দেশের প্রথিতযশা বন্যপ্রাণী গবেষক ও আলোকচিত্রী প্রফেসর ড. মনিরুল খান বলেন, এ সাপটি দেশের যে কয় জায়গায় পাওয়া গেছে তাতে মনে হচ্ছে সারাদেশেই আছে। এ সাপটি অনেকটা আমাদের সাধারণ ঢোঁড়া (Checkered Keelback) সাপের মতোই দেখতে বিধায় অভারলুক (উপেক্ষিত) হয়েছে এতদিন। সাধারণ ঢোঁড়া থেকে এর খুব বড় ধরনের শারীরিক পার্থক্য নেই। তাই এতদিন ধরে সাপটি আমাদের প্রকৃতিতে বসবাস করলেও পৃথক একটি প্রজাতির বলে তাকে চিহ্নিত করা যায়নি। এ সাপটি প্রচলিত নাম নেই, ‘দাগিঘাড়-ঢোঁড়া’ বলা যেতে পারে।

দেশে ইতোপূর্বে এর আগে ৯৩ প্রজাতির সাপ দেখা গেছে। এর মধ্যে ঢোঁড়া সাপের প্রজাতি রয়েছে ছয়টি। সম্প্রতি ‘লালঘাড়-ঢোঁড়া’ তালিকাভুক্ত হওয়ায় দেশে সাপের প্রজাতির সংখ্যা এখন ৯৪টি বলে জানান প্রফেসর মনিরুল খান।

ঢোঁড়া সাপ দেশের পরিচিত সাপের মধ্যে অন্যতম। ছোট মাছ, ব্যাঙ, ইঁদুরসহ ক্ষতিকর প্রাণী খেয়ে এরা খাদ্য শৃঙ্খলের এক অসাধারণ ভুমিকা পালন করে। তবে ক্রমাগত মানুষের আবাসভূমির বিস্তার, কৃষি জমিতে কীটনাশক প্রয়োগ, জলাশয় ভরাট করে বসতি স্থাপনে এদের আবাসস্থল সংকোচনের পাশাপাশি জলাভূমি দূষিত হয়ে যাওয়ায় এরা খাদ্য ও আশ্রয় হারিয়ে বিপন্ন হয়ে পড়ছে।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *