ঢাকায় ১০ ডিসেম্বর বিএনপির মহাসমাবেশ নির্বিঘ্ন করতে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই মহাসমাবেশের আগে পরিবহণ ধর্মঘট যেন না হয়, সেজন্য সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরকে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলেছেন। রোববার বিকালে গণভবনে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার জনপ্রতিনিধি মনোনয়ন বোর্ডের সভায় তিনি এ নির্দেশ দেন। বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশগুলোর আগে ধর্মঘট ডাকা নিয়ে বিরক্তি প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এসব (বিএনপির সমাবেশের আগে পরিবহণ ধর্মঘট) কারা করছে? কেন করছে? এতে করে সরকারের বদনাম হয়। সভায় উপস্থিত আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা যুগান্তরকে এ তথ্য জানান।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উদ্ধৃত করে কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, ‘রাজনৈতিক কর্মসূচিতে বাধা দেওয়া যাবে না। বিএনপি মিছিল-সমাবেশ করলে ক্ষতি কোথায়? তবে গণতান্ত্রিক অধিকারের নামে তারা (বিএনপি) আবারও যদি আগুন সন্ত্রাস, জ্বালাও-পোড়াও করে তাহলে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।’
মনোনয়ন বোর্ডের সভায় অনির্ধারিত আলোচনায় ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় বিএনপির মহাসমাবেশের প্রসঙ্গটি আসে। এ সময় শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি ঘোষণা দিয়েছে তারা ১০ লাখ লোকের সমাগম করবে। এ জন্য তারা পল্টনে তাদের পার্টি অফিসের সামনে কর্মসূচি করতে চায়। কিন্তু সেখানে এত (দশ লাখ) লোকের সমাগম করা সম্ভব নয়।
আওয়ামী লীগের একজন নেতা জানান, মনোনয়ন বোর্ডের সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বিএনপির ১০ ডিসেম্বরের কর্মসূচির বিষয়ে অনেকটাই ইতিবাচক দেখা গেছে। তার এই মনোভাব জেনে দলের নেতারা বিস্মিত হয়েছেন। সভায় স্থানীয় সরকার জনপ্রতিনিধি মনোনয়ন বোর্ডের সদস্য তোফায়েল আহমেদ, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, কাজী জাফরউল্লাহ, ড. আবদুর রাজ্জাক, ফারুক খান, রমেশ চন্দ্র সেন, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, রশিদুল আলম, মাহবুবউল আলম হানিফ, ড. হাছান মাহমুদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
আওয়ামী লীগ নেতারা জানান, সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আন্তরিকতা প্রকাশ করে বলেন, তারা (বিএনপি) সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রোগ্রাম করুক। তারা যেন শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করতে পারে সেজন্য সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে। তাদের কর্মসূচি পালনে সরকার কোনো ধরনের বাধা সৃষ্টি করবে না। এজন্য আওয়ামী লীগ সরকার আন্তরিক। সে কারণে আমাদের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগের সম্মেলনের তারিখ এগিয়ে নিয়ে আসা হয়েছে।
সূত্র জানায়, সভায় উপস্থিত আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বাস মলিক-শ্রমিকরা বিএনপির কর্মসূচির আগে যেন ধর্মঘট ও হরতাল ডাকতে না পারে সেজন্য আগে থেকেই তাদের সঙ্গে কথা বলতে হবে। বিএনপিকে কর্মসূচি পালন করার সুযোগ দিতে হবে। তারা চট্টগ্রাম ও কুমিল্লায় সমাবেশ করেছে। এতে সরকারের কী হয়েছে? অন্য জায়গায় কর্মসূচি পালনের আগে পরিবহণ ধর্মঘট কেন? এতে করে তো সরকারের বদনাম হয়। ওরা মিডিয়াতে কাভারেজ বেশি পায়। তিনি বলেন, বিএনপি গণতান্ত্রিক আন্দোলন করতেই পারে। বাধা দেব না। কিন্তু যদি সন্ত্রাস-নৈরাজ্য করে তাহলে আইন তার নিজস্ব গতিতে চলবে।
মনোনয়ন বোর্ডের সভায় শেখ হাসিনা উপস্থিত নেতাদের আওয়ামী লীগের সম্মেলনের জন্য সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে স্থাপিত মঞ্চ ও শামিয়ানা ৭ ডিম্বেরের মধ্যে অপসারণ করতে নির্দেশ দেন। তিনি বলেন, আমরা চাই বিএনপি শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করুক। তারা তাদের সাংগঠনিক শক্তি দেখাক। সেজন্য কোনো বাধা দেওয়া হবে না। এজন্য সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ছাত্রলীগের সম্মেলন এগিয়ে ৬ ডিসেম্বর করা হয়েছে। এই সম্মেলন ছিল ৮ ও ৯ ডিসেম্বর। সভায় প্রধানমন্ত্রী ডলার সংকট নিয়েও কথা বলেন। এ বিষয়ে বিএনপি নেতাদের বক্তব্যের সমালোচনা করে তিনি বলেন, অনেকেই বলছেন, দেশে ডলার সংকট। রিজার্ভ নেই। রিজার্ভ কোথায় গেল? তাদের উদ্দেশে বলি, যেহেতু যুদ্ধ লেগেছে, দাম বেড়েছে সবকিছুর। তারপরও আমরা খরচ করছি, আমদানি করছি; যাতে দেশের মানুষের খাদ্যের ঘাটতি না হয়। কাউকে কোনো ধরনের সমস্যায় পড়তে না হয়।
এদিকে রোববার সন্ধ্যায় গণভবনে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রলীগের সভাপতি ইব্রাহিম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমান হৃদয় এবং দক্ষিণের সভাপতি মেহেদি হাসান ও সাধারণ সম্পাদক জুবায়ের আহমেদ। তারা ৩ ডিসেম্বর অনুষ্ঠেয় ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ ছাত্রলীগের সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দাওয়াত কার্ড দেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঢাকায় বিএনপির ১০ ডিসেম্বরের মহাসমাবেশ নিয়ে ইতিবাচক মনোভাব প্রকাশ করেন বলে ওই নেতাদের একজন যুগান্তরকে জানিয়েছেন।
শেয়ার করুন