গত মঙ্গলবার ২০২১-২২ সেশনে নবীন শিক্ষার্থীদের বরণ করে নিয়েছে শাবি। নবীনদের ক্লাস শুরু হওয়ার পরপরই ক্যাম্পাস, আবাসিক হল ও আশপাশের মেসগুলোয় চলে ‘পরিচিত হওয়ার’ নামে র্যাগিং। শিক্ষার্থী জানিয়েছেন, প্রতিষ্ঠানে নতুন হওয়ায় তারা মুখ বুজে এ অত্যাচার সহ্য করছেন। তাদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। কারণ, ঠিকভাবে না হাঁটলেও র্যাগ দেওয়া হচ্ছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক নবীন শিক্ষার্থী সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, রাতে হলের গ্রুপের সিনিয়ররা তাদের ফোন করে রুমে ডেকে নেন। সঙ্গে যারা আছে, তাদেরও নিয়ে যেতে বলেন। নবীনদের দিয়ে বিভিন্ন ধরনের আপত্তিকর অঙ্গভঙ্গি, ইশারা-ইঙ্গিত, বিভিন্ন ধরনের হাসি-বিদ্রুপ করতে জোর করেন। তাদের কথায় অসম্মতি জানালে বাবা-মাকে তুলে গালিগালাজ করেন। বিভিন্ন ধরনের হুমকিও দেন কিছু সিনিয়র।
জানা গেছে, আবাসিক হলগুলোয় ওঠা নবীনদের প্রতিদিন গভীর রাত পর্যন্ত পরিচয়ের নামে মানসিকভাবে নির্যাতন করছেন সিনিয়ররা। গত মঙ্গলবার থেকে আবাসিক হলগুলো ঘটে যাওয়া র্যাগিংয়ের ঘটনা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখেছেন শাবিপ্রবির নতুন শিক্ষার্থীরা। এতে এই প্ল্যাটফর্মে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় ওঠে।
নবীনদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘শিষ্টাচার’ শেখানো বা সিনিয়রদের সঙ্গে পরিচয়ের নামে বিভিন্ন কায়দায় নির্যতন-নাজেহাল করা হচ্ছে। সালাম না দেওয়া, ঠিক মতো না হাঁটা, কারো দিকে তাকানোয় র্যাগ দেওয়া হচ্ছে। কয়েকজনকে মানসিক ও শারীরিকভাবে নির্যাতনেরও অভিযোগ উঠেছে ক্যাম্পাসের কিছু সিনিয়রের বিরুদ্ধে। অথচ শাবিতে নাকি র্যাগিং কালচার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। প্রশাসনও এনিয়ে কঠোর অবস্থানে রয়েছে।
কিন্তু এসব কথার তোয়াক্কা করেন না পুরনো বা ইমিডিয়েট সিনিয়ররা। পালা করে নতুন শিক্ষার্থী সে ছেলে বা মেয়ে হোক ‘র্যাগ’ দেওয়া হয়। কাউকে গান গাইতে বলে, ভালো না লাগলে পেন ড্রাইভ দিয়ে দেয়াল মাপানো হচ্ছে। কাউকে আবার নাচতে বলা হয়। আবাসিক হলগুলোয় আবার বিভিন্ন ‘সিস্টেমে’ র্যাগ দেওয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশের মেসের র্যাগিং সিস্টেমও ভিন্ন ভিন্ন। এতে ভয়ের মধ্যে রয়েছেন নতুন ছাত্র-ছাত্রীরা। ভয়ে-আতঙ্কে কাউকে কিছু মুখ ফুটে বলতেও পারছেন না তারা।
র্যাগিংয়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থীরা। হোসাইন আহমেদ নামে সাবেক এক শিক্ষার্থী ফেসবুকে লিখেছেন- ‘শহীদ মিনারে উঠে প্রথম সেমিস্টারের অনেক স্টুডেন্টদের দেখেছি গ্রুপ করে বসে আড্ডা দিচ্ছে। একটু দূরে লক্ষ্য করলাম কয়েকজন ছাত্র নতুন দুইটা ছেলেকে র্যাগ দিচ্ছে। অনেকবার ভাবছি গিয়ে কিছু বলে আসবো বা কর্তৃপক্ষকে জানাবো। কিন্তু সাথে মানুষ থাকায় ঝামেলায় যেতে চাইনি। কয়েক জায়গায় ব্যানারে র্যাগিং নিষিদ্ধ লেখাও আছে। কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি, আপনারা শহীদ মিনারসহ সম্ভাব্য জায়গাগুলো একটু নজরদারিতে রাখবেন প্লিজ।’
এস এম সানি নামে আরেক শিক্ষার্থী লিখেছেন, ‘এলাকার এক ছোট ভাই হল থেকে অসুস্থ হয়ে আজ বাড়িতে ফিরছে। রাত ৩-৪টা পর্যন্ত ধরে রাখা এটাকে র্যাগ বলে না, অমানুষিক নির্যাতন বলে।’
শাবির প্রভোস্ট স্ট্যান্ডিং কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. মিজানুর রহমান খান বলেন, গত বছরের মতো হলের রুমগুলো নজরদারিতে রাখা হয়েছে। র্যাগিংয়ের ক্ষেত্রে হল প্রশাসন সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। যদি হলে এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটে, তাহলে হলের নিয়ম অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ছাত্র উপদেশ ও নির্দেশনা পরিচালক অধ্যাপক আমিনা পারভীন বলেন, র্যাগিং নিয়ে আমাদের শৃঙ্খলা কমিটি সজাগ অবস্থানে রয়েছে। ক্যাম্পাসে বিভিন্ন স্থানে র্যাগিং নিষিদ্ধ সংবলিত ব্যানার টানিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এরপরও যদি এমন কোনো ঘটনা ঘটে, সেক্ষেত্রে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো. কামরুজ্জামান চৌধুরী বলেন, র্যাগিংয়ে যাকে পাওয়া যাবে তার বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যারা এমন পরিস্থিতির শিকার হবে তারা যাতে আমাদের সাথে তাৎক্ষণিক যোগাযোগ করে। ভুক্তভোগীর পরিচয় গোপন রেখে অভিযুক্তদের কঠোর শাস্তির আওতায় নিয়ে আসা হবে।