স্টাফ রিপোর্টার: বাংলাদেশে ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা ৯০ লাখের বেশি। প্রতিদিন এই সংখ্যা বাড়ছে। ডায়াবেটিস নিয়ে কাজ করা বারডেমসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্রে এতথ্য জানা গেছে। এরফলে আক্রান্তদের অন্ধত্ববরণসহ অঙ্গহানি হচ্ছে প্রতিনিয়ত। সময় যতো বাড়ছে ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা বাড়ছেই। তবে সবচেয়ে আশঙ্কার বিষয় হলো এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি সংখ্যা হলো শিশুরা। সারাদেশের মতো সিলেটেও শিশুদের মাঝে ডায়াবেটিসের সংক্রমন বাড়ছে। যার সংখ্যা প্রায় ১০ শতাংশ। মূলত এটা টাইপ-১ ডায়াবেটিস। তবে সময়মতো রোগ ধরা পড়লে এবং সঠিক চিকিৎসা নিলে শিশুটি সুস্থ থাকে। শিশুদের মায়ের দুধ ঠিকমতো না খাওয়ানো, ফাস্টফুড ও চর্বি জাতীয় খাবারের অভ্যাস বৃদ্ধি এবং খেলাধুলা বা ব্যায়াম থেকে দূরে থাকার জন্যই শিশুদের মধ্যে এর প্রবণতা বেশি বলে জানান বিশেষজ্ঞরা।
সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সূত্র জানায়, এখানে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের মধ্যে প্রায় ১০ শতাংশ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। এর মধ্যে ২ থেকে ৩ শতাংশ শিশু ও কিশোর রোগী থাকে। ২০১৮ সাল থেকে হাসপাতালের এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগ হিসেবে একটি ওয়ার্ড চালু করা হয়েছে। ওই ওয়ার্ডে প্রতিদিন ২০-২১ জন রোগী ভর্তি থাকেন।
ওসমানী হাসপাতালের এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগের প্রধান ও সহযোগী অধ্যাপক শাহ ইমরান বলেন, বর্তমানে বড়োদের পাশাপাশি শূন্য বয়স থেকে কিশোর এবং তরুণ বয়সে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা বাড়ছে। এ জন্য সচেতনতার বিকল্প নেই। তিনি বলেন, ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তির চোখ, কিডনি, পায়ে সংক্রমণসহ নানান রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়েন। এ জন্য ডায়াবেটিস হওয়ার আগে সচেতন হওয়া প্রয়োজন।
এদিকে, সিলেটে ডায়াবেটিক সমিতি পরিচালিত সিলেট ডায়াবেটিক অ্যান্ড জেনারেল হাসপাতালে বর্তমানে প্রতিদিন প্রায় ৩০০ জন ডায়াবেটিসের চিকিৎসা নিচ্ছেন। এর বাইরে উপজেলা পর্যায়ের বিভিন্ন হাসপাতালেও ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিরা চিকিৎসা নিচ্ছেন। এর মধ্যে প্রায় ১০ শতাংশ শিশুর ডায়াবেটিস রয়েছে।
শিশুদের ডায়াবেটিস প্রতিরোধে বিশেষজ্ঞরা বলছেন বাচ্চাদের স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, খেলাধুলা ও ব্যায়াম এবং মায়ের জন্মের পর মায়ের দুধ খাওয়া নিশ্চিত করতে হবে। এ ব্যাপারে বিশিষ্ট শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. আবিদ হোসেন মোল্লা এবং শিশু হরমোন বিশেষজ্ঞ ডা. ফৌজিয়া মোহসিন বলেন অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তে নিরাপদ ও স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। বিশেষ করে ফাস্ট ফুড ও চর্বিজাতীয় খাবার পিৎজা, বার্গার, কোল্ড ড্রিংকস, চিপস, চকোলেট ইত্যাদি খাবার বাদ দিকে হবে। খাদ্যতালিকায় তাজা ফল ও শাকসবজি রাখতে হবে।
খেলাধুলা ও ব্যায়ামের দিকে নজর দিতে হবে। শিশুরা যাতে মুটিয়ে না যায়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। খোলা মাঠে প্রতিদিন কমপে এক ঘণ্টার মতো খেলাধুলা করা বা ব্যায়াম করার অভ্যাস করতে হবে। বেশিণ টিভি না দেখা, মোবাইল ফোন বা কম্পিউটারে দুই ঘণ্টার বেশি থাকা বা অবস্থান করা ঠিক নয়। বসে বসে ভিডিও দেখা বা কম্পিউটার গেমস খেলার অভ্যাস বন্ধ করাসহ জোরে হাঁটা বা জগিং, সাঁতার কাটা, সাইকিংয়ের মতো ব্যায়াম বেছে নিতে হবে। শিশুরা যাতে স্বাভাবিক শারীরিক ওজনের হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। জন্মের পর ছয় মাস পর্যন্ত শিশুকে মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানো নিশ্চিত করতে হবে।
তবে তারা বলেন ঠিক কী কারণে টাইপ-১ ডায়াবেটিস হয়, সে সম্পর্কে এখনো পুরোপুরি নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে এখন পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে রিস্ক ফ্যাক্টরগুলো হলো, পরিবারের রোগের ইতিহাস থাকলে অর্থাৎ বংশগত (চার-সাত বছর এবং ১০-১৪ বছর বয়সীদের)। তবে এর ব্যতিক্রমও আছে। পরিবেশগত কিছু উপাদানের সংমিশ্রণ। মাম্পস, রুবেলা, ককজেকি ধরনের ভাইরাসের কারণে অগ্ন্যাশয়ের ইনসুলিন উৎপাদনকারী সেল নষ্ট হলে। জন্মের প্রথম ছয় মাস মায়ের দুধ পান না করালে ইত্যাদি।
টাইপ-১ ডায়াবেটিসের লণগুলো অনেকটা হঠাৎ করেই আসে। এর কিছু লণ হলো: অস্বাভাবিক তৃষ্ণা পাওয়া বা বেশি বেশি পানি পান করা। বারবার প্রস্রাব করা। তীব্র ুধা অনুভব করা। রাতে ঘুম ভেঙে পানি বা খাবার খাওয়া। কোনো কারণ ছাড়াই দ্রুত ওজন কমে যাওয়া। অবসাদ, কান্তি ও দুর্বলতা অনুভব করা। অল্পতে হাঁপিয়ে পড়া, কাজে উৎসাহ কম থাকা। ত হলে বা কাটাছেঁড়া থাকলে শুকাতে বেশি সময় লাগা। যেকোনো রোগজীবাণু তাদের বেশি আক্রান্ত করতে পারে এবং পর্যাপ্ত অ্যান্টিবায়োটিক সেবনের পরও ইনফেকশন নিয়ন্ত্রণে না আসা। বিরক্ত বা অস্বাভাবিক আচরণ, মানসিক অবস্থার পরিবর্তন। দৃষ্টিশক্তি কমে যাওয়া বা চোখে ঝাপসা দেখা। তাই শিশুর এসব বিষয় নজরে এলে দ্রুত অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
শেয়ার করুন