এ টি এম তুরাব :
শীত শেষ হতে না হতেই সিলেট নগরীতে বেড়েছে মশার উপদ্রব। আসছে বর্ষা, উঁকি দিচ্ছে ডেঙ্গু আতঙ্ক। মশার উৎপাত ভাবিয়ে তুলছে নগরবাসীকে। দিনের বেলাতেও বাড়িঘরে মশার উৎপাত চলে। সন্ধ্যা থেকে মশার আক্রমণে ঘরে বাইরে টেকা দায়। খোলা জায়গায় আরো বেশি। মশা মারতে সিটি করপোরেশেন কোন কোন এলাকায় ওষুধ ছিটানো হলেও তাতে খুব একটা কাজ হয় না বলে অভিযোগ অনেকের।
সিটি করপোরেশন মশা নিয়ন্ত্রণে ওষুধ ছিটানোর দাবি করলেও নগরবাসী তা মানতে নারাজ। বর্ষা মৌসুম শুরুর আগেই নগরীজুড়ে বেড়েছে মশার উপদ্রব। অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে জনজীবন। বাসা বাড়িতে মশারি, কয়েল স্প্রে ও ম্যাজিক ব্যাট ব্যবহার করে মশা থেকে নিস্তার পাওয়ার চেষ্টা করছে নগরবাসী। উপশহর, যতরপুর, সোনারপাড়া, শিবগঞ্জ, মেন্দিবাগ, মাছিমপুর, ছড়ারপার, সুবিদবাজারসহ বিভিন্ন এলাকার মানুষের অভিযোগ, সিটি করপোরেশন থেকে ওষুধ ছিটানো হয় না। আর হলেও তা নামকাওয়াস্তে। মশানিধন কর্মীরা বলছেন, ড্রেন ও খালগুলো অপরিষ্কার থাকায় নিয়মিত ওষুধ ছিটানোর পরও মশা কমছে না।
নগরবাসীর অভিযোগ, সিটি করপোরেশনের (সিসিক) অধিকাংশ নালা-নর্দমা ও খাল নিয়মিত পরিষ্কার না করায় মশার প্রজননস্থলে পরিণত হয়েছে। এতে চরম ভোগান্তির পাশাপাশি মানুষের দৈনন্দিন কাজ ব্যাহত হচ্ছে। ঘরোয়াভাবে মশা তাড়ানোর কোনো ফর্মুলাই কাজে আসছে না। দিনে দিনে পরিস্থিতি অসহনীয় হয়ে উঠেছে। এ নিয়ে ক্ষোভ বাড়ছে নগরবাসীর। তবে মশা নিধন কার্যক্রম চলমান বলে দাবি সিসিকের।
বিভিন্ন এলাকা ঘুরে ও বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সিটি করপোরেশনের মশক নিধন কর্মসূচির ফল খুবই সামান্য। গত ফেব্রæয়ারির শুরু থেকেই নগরীতে মশার প্রকোপ বেড়েছে। আগে শুধু রাতেই মশার উৎপাত ছিল। এখন দিনের বেলায়ও মশার যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ জনজীবন। কয়েল, স্প্রে, ইলেকট্রিক ব্যাট ব্যবহারসহ ভুক্তভোগীরা ঘরোয়াভাবে মশা তাড়ানোর নানা পদ্ধতি প্রয়োগের চেষ্টা চালালেও তা কোনো কাজেই আসছে না।
সিসিক কর্তৃপক্ষ বলছে, মশা নিধনের জন্য তাদের কোনো জনবলই নেই। নগরীর ২৭টি ওয়ার্ডে একযোগে মশক নিধন অভিযান চালাতে হলে প্রয়োজন অন্তত ১৫০ জন কর্মী। কিন্তু এ কাজের জন্য সিটি করপোরেশনের কোনো জনবল নেই। মাত্র দু’জন স্প্রে ম্যান রয়েছেন। নিয়মিত ওষুধ ছিটানো সম্ভব না হওয়ায় মশার বংশ বৃদ্ধিও কমছে না বলে দাবি সংশ্লিষ্টদের।
শিবগঞ্জ এলাকার বাসিন্দা আফজাল হোসেন বলেন, নগরীর ড্রেনেজ ব্যবস্থা উন্নয়নে খোঁড়াখুঁড়ি চলছে দীর্ঘদিন থেকে। এতে বাসাবাড়ির পানি নিষ্কাশনের কোনো পথ নেই। অত্যন্ত ধীরগতিতে চলমান এ কাজের জন্য ড্রেনগুলোয় পানি চলাচল একেবারেই বন্ধ। অনেক এলাকায় ড্রেনের পানি চলে এসেছে সড়কের ওপর। দীর্ঘদিন জমে থাকা এসব নোংরা পানি মশার প্রজনন ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। এছাড়া নগরীর ডাস্টবিন ও আবর্জনা ফেলার স্থানগুলো নিয়মিত পরিষ্কার না করায় মশার বংশবিস্তার হচ্ছে।
যতরপুর এলাকার বাসিন্দা মমতাজ বেগম , মশার যন্ত্রণায় ঘরে থাকা যায় না। শুধু রাতেই নয়, দিনের বেলায়ও মশার যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ আমরা। দিনের বেলায় কয়েল জ্বালানোর পরও মশা যায় না। দু-এক মাস পরপর সিটি করপোরেশন মশার ওষুধ ছিটায়, কিন্তু কোনো লাভ হয় না। আমার মনে হয় এই ওষুধের কার্যকারিতা নেই। ওষুধ ছিটানোর পর বাইরের সব মশা ঘরে ঢুকে যায়। একটি মশাও মরে না। মশার জ¦ালায় বাচ্চারা দিনের বেলায় ঘুমাতে পারে না।
উপশহরের বাসিন্দা পপি বেগম, মশার উৎপাতে থাকাটাই এখানে দায়। বিশেষ করে বাচ্চা ও শিশু নিয়ে বেশি আতঙ্কে থাকি। কেন না ডেঙ্গুর ভয় তো আছেই!
সিলেট সিটি কর্পোরেশনের (সিসিক) প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. জাহিদুল ইসলাম জানান, ঋতু পরিবর্তনের সময় স্বাভাবিকভাবে মশার উপদ্রব বাড়ে। জনবল সংকটের কারণে একযোগে পুরো নগরীতে অভিযান করা যাচ্ছে না। ফলে ওষুধ ছিটিয়েও কাঙ্খিত ফল মিলছে না। বিচ্ছিন্নভাবে ওষুধ ছিটিয়ে মশার যন্ত্রণা থেকে নগরবাসীকে মুক্তি দেওয়া সম্ভব নয়। এ জন্য প্রয়োজন একযোগে পুরো নগরীতে ওষুধ ছিটানো ও পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম চালানো। এ ছাড়া অন্তত ১০ দিন অন্তত মশার প্রজননের স্থানগুলোতে ওষুধ ছিটাতে হবে। তাহলে মশার উপদ্রব কমানো সম্ভব হবে।
শেয়ার করুন