সিলেটের প্রেক্ষাপটে আমরা নির্বাচনে যাব’- সোমবার সিলেটের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর দেয়া এমন বক্তব্যে তার দল বিএনপিতে দেখা দিয়েছে অস্বস্তি। তবে বিএনপি নেতাদের প্রত্যাশা, এটাই আরিফের শেষ কথা হবে না। শেষ পর্যন্ত আরিফ নির্বাচনে যাবেন না বলে বিশ্বাস তাদের।
সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য। সিটি নির্বাচনে বিএনপি অংশ না নেয়ার ঘোষণা দিয়েছে। তবে প্রথম থেকেই আরিফুল হকের প্রার্থী হওয়া নিয়ে গুঞ্জন ছিলো আরিফ নিজেও বিভিন্ন সময় বক্তব্যে প্রার্থী হওয়ার ব্যাপারে ইঙ্গিত দেয়ায় গুঞ্জন আরো ঘণীভূত হয়। এর মধ্যে সোমবার মে দিবসের অনুষ্ঠানে আরিফুল হক অনেকটা স্পষ্ট করেই সিলেট সিটি নির্বাচনে অংশ নেয়ার ঘোষণা দেন।
আরিফের এমন ঘোষণায় তার প্রার্থিতা নিয়ে জল্পনা-কল্পনার অবসান হলো বলে মনে করেছিলেন নগরের বাসিন্দারা। তবে বিএনপি নেতাদের ভাষ্য, সোমবারের বক্তব্য আরিফের চূড়ান্ত অবস্থান না-ও হতে পারে। ফলে আরিফের প্রার্থিতা নিয়ে রহস্য এখনও ‘শেষ হয়েও হইলো না শেষ’।
প্রার্থী হওয়ার আভাস দিয়ে আরিফের বক্তব্য প্রসঙ্গে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে সিলেট মহানগর বিএনপির সভাপতি নাসিম হোসাইন বলেন, ‘মে দিবসে আরিফুল হক নির্বাচনে অংশ নেয়ার একটা আভাস দিয়েছেন। তবে এখনও স্পষ্ট ঘোষণা দেননি। আমার মনে হয় নির্বাচনী বাজারে আলোচনায় থাকার জন্যই তিনি এমনটি বলেছেন। তবে শেষ পর্যন্ত আরিফ প্রার্থী হবেন না বলেই আমার বিশ্বাস।’
নাসিম হোসাইন বলেন, ‘আরিফুল হক বিএনপিতে আমাদের চেয়ে দায়িত্বশীল পর্যায়ে আছেন। তিনি দলের কেন্দ্রীয় নেতা। ফলে দলের অবস্থানের বাইরে যাওয়ার মতো বোকামি তিনি হয়তো করবেন না।’
প্রার্থিতা নিয়ে জল্পনা-কল্পনার মধ্যেই সোমবার মে দিবস উপলক্ষে সিলেট নগরে বিশাল মহড়া দেন আরিফুল হক চৌধুরী। দুপুরে নিজ অনুসারীদের নিয়ে মে দিবসের বিশাল শোভাযাত্রার আয়োজন করেন তিনি। ওইদিন সিলেট জেলা ও মহানগর শ্রমিক দলের পক্ষ থেকে মে দিবসের শোভাযাত্রা করা হলেও আরিফুল হক তাতে অংশ না নিয়ে নিজের অনুসারীদের নিয়ে আলাদা অনুষ্ঠান করেন।
নগরের রেজিস্টারি মাঠে ‘জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দল ও সহযোগী বিভিন্ন সংগঠনের’ ব্যানারে ওই শোভাযাত্রার শুরুতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, ‘আমরা এখন অধিকার আদায়ের লড়াইয়ে আছি। অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে আগামী সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আমাদের দল (বিএনপি) অংশগ্রহণ করবে না। তবে সিলেটের প্রেক্ষাপটে আমরা নির্বাচনে যাব।’
আরিফুল হকের এই বক্তব্যে সিলেট বিএনপিতে তোলআড় শুরু হয়। এ নিয়ে অস্বস্তি প্রকাশ করেন অনেক নেতা। তবে প্রকাশ্যে তারা এ ব্যাপারে কিছু বলতে চাননি। বিএনপির মধ্যম সারির একাধিক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “আরিফুল হতের সঙ্গে মন্ত্রী-এমপিসহ সরকারের শীর্ষপর্যায়ের লোকদের সখ্য দীর্ঘদিন ধরেই বিএনপি পর্যবেক্ষণ করছে। সরকারের পক্ষ থেকে তাকে প্রার্থী হওয়ার প্রলোভন দেয়া হচ্ছে।
“সিলেটে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মতো আরেকটি ‘উকিল সাত্তার মডেলের’ নির্বাচন করতে পারে সরকার। এমন অবস্থায় আরিফ সরকারের প্রলোভনে পা দিলে তা বিএনপির চলমান আন্দোলনের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।”
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও গত সংসদ নির্বাচনে সিলেট-১ আসনে বিএনপির প্রার্থী খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির এ প্রসঙ্গে বলেন, দেশের ৫টি সিটিতে নির্বাচন হচ্ছে। কোথাও বিএনপি অংশ নেবে না। সিলেট তার থেকে আলাদা কিছু নয়। ফলে সিলেটে আলাদাভাবে নির্বাচনে অংশ নেয়ার কিছু নেই।’
আরিফুল হকের বক্তব্য প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘কেউ ব্যক্তিগতভাবে কিছু বলে থাকলে এটা তার বিষয়। তার বক্তব্যকে দলীয়ভাবে দেখার সুযোগ নেই।’
আরিফুল হক প্রার্থী হলে তা বিএনপির চলমান সরকারবিরোধী আন্দোলনে কোনো প্রভাব ফেলবে কি না জানতে চাইলে মুক্তাদির বলেন, ‘আমি দলীয় অবস্থান ব্যাখ্যা করতে পারি। কোনো ব্যক্তির অবস্থান নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি নই।’
শেয়ার করুন