কয়েক বছরের ধারাবাহিকতায় এবারও শতভাগ দেশীয় পশু দিয়ে কোরবানি সম্পন্ন করা যাবে। বিভিন্ন খামার এবং প্রান্তিক কৃষকে কাছে আসন্ন কোরবানির জন্য পর্যাপ্ত গবাদিপশু মজুদ রয়েছে। ফলে কোরবানির জন্য ভারত কিংবা মিয়ানমার থেকে কোনো পশু আমদানি করতে হবে না। বর্তমানে দেশে কোরবানি যোগ্য পশুর সংখ্যা রয়েছে ১ কোটি ২১ লাখ। এটি আসন্ন কোরবানি ঈদের চাহিদার তুলনায় প্রায় ১৬ লাখ বেশি। প্রাণী সম্পদ অধিদফতর এবং বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মারর্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিডিএফএ) সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মারর্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিডিএফএ) সভাপতি মোহাম্মদ ইমরান হোসেন বলেন, ‘বর্তমানে দেশের বিভিন্ন খামারিদের উৎপাদিত এবং গৃহস্তে পাালিত গবাদিপশুর সংখ্যা ১ কোটি ২১ লাখের বেশি হবে। আসন্ন কোরবানি ঈদে ১ কোটি ৫ লাখের তো চাহিদা থাকতে পারে। কারণ গত বছর ঈদুল আজহায় ৯৯ লাখ ৫০ হাজার পশু কোরবানি হয়েছে। এ বছর সর্বোচ্চ ৫ শতাংশ বাড়তে পারে। ফলে ১ কোটি ৫ লাখ পশু কোরবানির হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ফলে বরাবরের মতো এবারও শতভাগ দেশীয় পশু দিয়ে কোরবানি করা সম্ভব হবে।’
এবার কোরবানির পশুর দাম কেমন হতে পারে এমন প্রশ্নের জবাবে বিডিএফএ সভাপতি বলেন, ‘পরিবহন খরচ, পশু খাদ্য এবং অনান্য উপকরণের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় এবার কোরবানি পশুর দাম গতবছরের তুলনায় ৫ শতাংশ হারে বাড়তে পারে। তবে এতে কোরবানির কোন সমস্যা হবে বলে মনে করছি না।’
অন্যদিকে প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের মহাপরিচালক ডা. মো. এমদাদুল হক তালুকদার বলেন, ‘বিগত কয়েক বছরের ধারাবাহিকতায় এবারও আমরা দেশীয় পশু দিয়ে শতভাগ কোরবানি করা সম্ভব হবে। দেশের বাইরে থেকে কোরবানির জন্য কোন পশু আমদানি করতে হবে না। বরং চাহিদার চেয়ে আরও ২১/২২ লাখ উদ্বৃদ্ধ থাকবে।’
তিনি বলেন, ‘এখন পর্যন্ত আমাদের খামারিতে কী পরিমাণ পশু রয়েছে, তার চূড়ান্ত তালিকা আগামী ২/৩ দিনের মধ্যে পাওয়া যাবে। তবে আশা করছি, আমাদের পশুর সংখ্যা ১ কোটি ২২/২৩ লাখ হবে।’প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক আরও বলেন, ‘গত বছর আমাদের ৯৯ লাখ ৫০ হাজার পশু ৭৬৩টি পশু কোরবানি হয়েছিল। এবার সারাদেশে হয়তো ১ কোটির চেয়ে কিছু বেশি হবে। তারপরেও আমাদের ২০/২১ লাখ উদ্ধৃদ্ধ থেকে যাবে।’
জানা গেছে, কোরবানির ঈদ সামনে রেখে দেশের কিছু অসাধু খামারি বেশি লাভের আশায় ও স্থানীয় পশু ডাক্তার ও ফার্মেসির প্ররোচনায় গবাদিপশু মোটাতাজাকরণে জন্য বিভিন্ন ট্যাবলেট, পাউডার ও ইনজেকশন ব্যবহার করে থাকে। এ সব ব্যবহার রোধে ভেটেরিনারি ফার্মেসিগুলোকে কঠোর নজরদারিতে রাখা হয়েছে। পাশাপাশি পরিচালনা করা হচ্ছে মোবাইল কোর্ট। পাশাপাশি ফার্মেসিগুলো যাতে এসব পণ্য বিক্রি করতে না পারে সে জন্য উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তারা কাজ করছেন।
পাশাপাশি খামারিরা এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি সচেতন। তারা অনেককিছু হিসেবে করে পশুকে লালন পালন করেন।
জানা গেছে, ২০২২ সালে পবিত্রঈদুল আজহায় সারাদেশে ৯৯ লাখ ৫০ হাজার ৭৬৩টি পশু কোরবানি করা হয়েছে। গত বছর দেশে কোরবানির জন্য সারাদেশের খামারি ও গৃহস্থদের কাছে ১ কোটি ২১ লাখ ২৪ হাজার ৩৮৯টি কোরবানিযোগ্য পশু প্রস্তুত ছিল। ফলে গত বছর ২১ লাখ ৭৩ হাজার ৬২৪টি গবাদিপশু উদ্ধৃদ্ধ ছিল। ২০২১ সালে সারাদেশে কোরবানি হওয়া পশুর পরিমাণ ছিল ৯০ লাখ ৯৩ হাজার ২৪২টি। বিপরীতে ২০২১ সালে দেশে কোরবানিযোগ্য পশু ছিলো ১ কোটি ১৯ লাখ ১৬ হাজার ৭৬৫টি।
কোন সালে কত পশু কোরবানি হয়েছে : করোনাভাইরাস মহামারির কারণে দেশের অর্থনীতি মন্দার কারণে ২০২০ ও ২০২১ সালে দেশে কোরবানির চাহিদা কমে গিয়েছিল। ২০১৭ সালে দেশে মোট কোরবানি হয়েছে ১ কোটি ৪ লাখ ২১ হাজার ৯৫৬টি, ২০১৮ সালে তা বেড়ে হয় ১ কোটি ৫ লাখ ৬৯ হাজার হাজার ৭০টি। ২০১৯ সালে তা আরও বেড়ে হয় ১ কোটি ৬ লাখ ১৪ হাজার ২৮১টি। করোনা অর্থনীতি মন্দার কারণে ২০২০ সাল থেকে কোরবানি দেওয়ার পরিমাণ কমতে শুরু করে। ২০২০ সালে দেশে কোরবানি হয় মাত্র ৯৪ লাখ ৫০ হাজার ২৬৩টি পশু। ২০২১ সালে তা আরও কমে কোরবানি হওয়া পশুর সংখ্যা কমে ৯০ লাখ ৯২ হাজার ২৪২টি নেমে আসে।
শেয়ার করুন