নিজস্ব প্রতিবেদক:
রাঙ্গামাটি জেলার বরকল উপজেলায় সরকারী উন্নয়ন কাজ বাস্তবায়নে বাঁধা সৃষ্টি, বর্তমান সরকারের ভাবমূর্তি এবং সুনাম ক্ষুন্ন করার জন্য একটি কুচক্রী মহল ষড়যন্ত্র করে চলছে বলে অভিযোগ করেছেন উপজেলার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষক।
চক্রান্তকারীরা মুঠোফোনে এবং সরেজমিনে স্থানীয় সাংবাদিকদের কাছে গিয়ে তারা এসব বানোয়াত ও ভিত্তিহীন অভিযোগ করছেন বলে তাঁরা বলেছেন।
বরকল উপজেলায় একটি স্বার্থান্বেসী মহল ও সেরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কতিপয় শিক্ষকসহ যোগসাজস করে তাদের ব্যাক্তি স্বার্থ চরিতার্থ ও হাসিল করার জন্য উদ্দেশ্য প্রনোদিতভাবে কতিপয় স্থানীয় সংবাদকর্মীদের বিভ্রান্ত করে এবং তাদেরকে মিথ্যা, ভূল, বানোয়াট এবং অসত্য তথ্য দিয়ে বরকলের প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগকে নিয়ে মিথ্যা, ভূল এবং বিভ্রান্টিকর সংবাদ পরিবেশন করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন শিক্ষকরা।
নিকসান্দ্রা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো: হারুন রশীদ বলেছে, সম্প্রতি স্থানীয় এক সংবাদকর্মী উড়াল মনি চাকমা ওরফে হিমেল চাকমা তার অনলাইন পত্রিকায় বরকল উপজেলাকে নিয়ে “রাঙ্গামাটিতে ২৩টি বেসরকারী প্রাথমিকের শিক্ষার্থীরা এখনও বই পায়নি” শিরনামে একটি মিথ্যা ও অসত্য রিপোর্ট প্রকাশ করেছেন। যাতে করে বর্তমান সরকারের সুনাম ও ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করা হয়েছে এবং বরকল উপজেলার প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগেরও দুর্নাম হয়েছে বহুগুণে। এছাড়াও হরিনা সঃ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো কবিরসহ একাধিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক উক্ত অভিযোগের বিষয়গুলো ভিত্তিহীন বলে দাবী করেছেন।বিদ্যালয়ের বিশেষ বরাদ্ধসহ সকল বরাদ্ধই শিক্ষক আর ম্যানেজিং কমিটির মাধ্যমে সম্পাদিত হয়।এখানে আর্থিক লেনদেনের কোন রকম সুযোগ নেই।তাছাড়া সুষ্পষ্ট প্রমান ছাড়া কাউকে দোষী করা ঠিক নয়।
উড়াল মনি কেমনে শুধুমাত্র একটি স্কুল জাক্কোবাজেই বেঃপ্রাঃবিঃ পরিদর্শন করে ২৩টি স্কুলের রিপোর্ট করলেন তা সম্পূর্ণ প্রশ্ন থেকে যায় বলেছেন হারুন।
বই না পাওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, কোন স্কুলে যদি পেয়ে থাকে তাহলে সেই স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক কি করছিলেন, এতদিন কেন শিক্ষা অফিসে যোগাযোগ করেনাই। সেক্ষেত্রে তাঁর গাফিলিতি ও ব্যর্থটা রয়েছে। আর বেসরকারী স্কুলের প্রধান শিক্ষকরা যদি অনলাইনে এন্ট্রি করে বইয়েরে চাহিদা না দেয় তাহলে তারা কেমনে বই পাবে। আসলে এসব বই না পাওয়ার অভিযোগ ভিত্তিহীন ও ষড়যন্ত্র ছাড়া কিছুইনা বলেছেন হারুন।
জানা যায়, রামুক্যাছড়ি বেসরকারী প্রা:বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও একজন ইউপি মেম্বার রসিক চাকমা, বেসরকারী ঠিকাদার সোহাগ চাকমা ও বেসরকারী সংস্থা (এনজিও) সুবর্ণভূমি ফাউন্ডেশনের কো-অর্ডিনেটর মানবাশীষ চাকমাসহ কিছু লোক এসব ষড়যন্ত্র করছেন একটি বিশেষ মহলের ইন্ধনে।
এ ব্যাপারে বরকল মডেল স:প্রা: বিদ্যালয়ের শিক্ষক দীপক কর্মকার বলেছেন, যে কোন বেসরকারী স্কুলে বইয়ের চাহিদা দিয়ে অনলাইনে এন্ট্রি করতে হয় এবং প্রতি বছর মার্চ মাসের মধ্যেই পরবর্তী বছরে বই পাওয়ার জন্য এ কাজটি করতে হয়। তারা যদি সরকারী নিয়ম অনুসরন করে চাহিদা দিতে ব্যর্থ হয় তাহলে কিভাবে বই পাবে বলেছেন দীপক।
প্রধান শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও ভাইবোনছড়া স:প্রা:বি: প্রধান শিক্ষক বিমলেন্দু চাকমা বলেছেন, ২৩টি বেসরকারী স্কুলের বই পায়নি যে সংবাদটি প্রকাশ করা হয়েছে সেটি আসলে সম্পূর্ণ মিথ্যা ও উদ্দেশ্য প্রনোদিত। কারন বেসরকারী স্কুলে যে বই দেওয়া হয়েছে তার রেকর্ড বই বিতরণ রেজিস্টার খাতায় প্রত্যেকের স্বাক্ষর রয়েছে। তবে হয়তো শতবাগ পায়নি সেটি হতে পারে।
মরাঠেগা বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুপন চাকমা জানান, তাঁর স্কুলে মোট ৫০ জন ছাত্র-ছাত্রী রয়েছে। সে ৪৫ জন ছাত্র-ছাত্রীর জন্য বই পেয়েছেন। বাকীদের পুরোনো বই দিয়ে মিটিয়ে দিয়েছেন তিনি।
প্রধান শিক্ষক হারুন রশীদ আরো জানিয়েছেন, রিপোর্টার উড়াল মনি চাকমা (হিমেল) প্রথমে তাঁর কাছ থেকে স্কুলের রুটিন সংস্কার কাজের বিষয়ে এবং কত টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে সে বিষয়ে জানতে চেয়েছিল। কিন্তু তিনি তা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন।
জানা যায়, সম্প্রতি কিছু হলুদ সাংবাদিক নামে-বেনামে ও বিভিন্ন মোবাইল ফোন নাম্বার থেকে স্কুল সংস্কারের বরাদ্দ আসছে বলে চাঁদা দাবী করছে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার (ইউপিএও) কাছ থেকে। যার অডিও রেকর্ডও রয়েছে ইউপিএও’র কাছে।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো: আব্দুস সালাম বলেছেন, বই বিতরণ রেজিস্টার দেখলে বুঝা যায় যে, বছরের শুরুতেই উপজেলা শিক্ষ অফিসার গোডাউনের উদ্বৃত্ত বই থেকে প্রতিটি বেসরকারী স্কুলে বই প্রদান করা হয়েছে।
তিনি বলেন, বছরের শুরুতেই বেসরকারী প্রধান শিক্ষকরা শিক্ষা বিভাগের পিইএমইএস (প্রাইমারী এডুকেশন ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিষ্টেম) এর নির্দিষ্ট ফরম পূরণ করে স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের তথ্যদিয়ে চাহিদা এন্ট্রি করতে হয়। কিন্তু তারা তা না করলে কোত্থেকে বই পাবে। এমনকি শিক্ষা অফিসের মাসিক সমন্বয় সভায়ও বেসরকারী শিক্ষকরা উপস্থিত থাকেন না। শিক্ষা অফিসের সাথে তথ্য আদান-প্রদান করেননা তারা।
শিক্ষা অফিসার জানান, এসমস্ত সেরকারী স্কুলের বাস্তব ভিত্তিক জনস্বার্থে কোন ভূমিকা নেই। হাতে গোনা শুধুমাত্র ৫/৭ টি স্কুলের অস্থিত্ব রয়েছে। বাকী সব বিদ্যালয় গুলি নাম সর্বোচ্ছ। সেগুলিতে নিয়মিত পাঠদান হয়না। তাই এ সমস্ত বিদ্যালয় সমূহকে অতি দ্রুত আইনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। তিনি আরো জানিয়েছেন, ইমার্জেন্সি ও রুটিন মেরামত এবং উপবৃত্তি প্রদান এসব প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগের রুটিন কাজ। স্কুল লেভেল ইমপ্রুভমেন্ট প্লান (সিলিপ) প্রকল্পের অধীনে এসব কাজ করা হয়ে থাকে।
সরেজমিনে পরিদর্শনকালে বিভিন্ন সরকারী স্কুলের প্রধান শিক্ষকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, উপজেলা শিক্ষা অফিসার উক্ত ফান্ডসমূহ যথাসময়ে স্ব স্ব স্কুলের হিসাব নম্বরে ট্রান্সফার করে দিয়েছেন। তাছাড়া উক্ত অর্থের কাজ আগামী জুন পর্যন্ত সময়সীমা রয়েছে।