সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে জাতীয়পাটির মেয়রপ্রার্থী নজরুল ইসলাম বাবুলের ‘মুন্নি’ ও ‘ছালমাকাণ্ড’ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হওয়ায় বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েছেন জাপা নেতাকর্মীরা।দলীয় প্রার্থীর জন্য ভোট চাইতে গিয়ে ভোটারদেরকে উল্টো ‘মুন্নি’ ও ‘ছালমাকাণ্ডের’ উত্তর দিতে হচ্ছে তাদের। বিব্রতকর এমন পরিস্থিতিতে ক্ষুব্ধ হয়ে জাতীয় পার্টির অনেক নেতাকর্মী প্রচারণায় নামছেন না। ভোটের মাঠ থেকে নিজেদের গুটিয়ে নিয়েছেন।
যদিও জাতীয়পাটির মেয়রপ্রার্থী নজরুল ইসলাম বাবুল ‘ভাইরাল হওয়া গোপন ভিডিওটি তাঁর নয়’ বলে দাবি করেছেন। বুধবার নিজের প্রধান নির্বাচনী কার্যালয়ে জরুরি সংবাদ সম্মেলনে বাবুল বলেন, ‘আমাকে হেয়প্রতিপন্ন করতে ভুয়া ভিডিও ফেসবুকে ছড়ানো হয়েছে। এতে এডিট করে আমার ছবি যুক্ত করা হয়েছে। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাই এটি ছড়িয়েছে। নির্বাচনে নিশ্চিত পরাজয়ের বিষয়টি অনুধাবন করে প্রতিপক্ষ আওয়ামী লীগের কর্মী-সমর্থকরা সিলেটে এই নগ্ন খেলায় মেতে উঠেছে।’
তবে, মেয়রপ্রার্থী বাবুল তাঁর অফিসের ছালমা নামের স্টাফের সঙ্গে গোপন ‘কথোপকথন’র অডিও ফাঁস হওয়া নিয়ে কোনো মন্তব্য করেন নি।
দু’দিন আগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে নজরুল ইসলাম বাবুলের দু’টি দু’টি গোপন অডিও.ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে। এ নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় উঠে। বাদ পড়েননি তাঁর প্রচারণায় থাকা জাপার নেতাকর্মীরাও।ঘরে-বাইরে বিব্রতর প্রশ্নেমুখে পড়তে হয় তাদের। এ কারণে অনেকই নির্বাচনী কাজে অংশ নেয়া থেকে বিরত থাকেন। এমনটি বুঝতে পেরে বুধবার সংবাদ সম্মেলনে আসেন বাবুল।
এ ব্যাপারে নাম প্রকাশ না করার শর্তে জাতীয়পার্টি ও যুব সংহতির একাধিক নেতাকর্মী জানান, এমনতি্ই মেয়রপ্রার্থী নিয়ে দলে বিভাজন আছে। একটি বলয়ের নেতাকর্মী ছাড়া দলটির বড় অংশই নির্বাচনী মাঠে নেই।এমতাবস্থায় দলীয়প্রার্থী বাবুলের গোপন অডিও-ভিডিও নিয়ে নানা তীর্যক কথা শুনতে হচ্ছে। ভোটারদের কাছে গেলেই বিষয়টি জানতে চায়, ঘরেও এ নিয়ে প্রশ্ন আছে। মান সম্মানের ভয়ে দু’দিন ধরে প্রচারণায় নামছেন না বলেও জানান তাঁরা।তাদের মতে, বাবুলের ‘মুন্নি’ ও ‘ছালমাকাণ্ড’ ভোটে মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।
তবে, বাবুলের ‘মুন্নি’ ও ‘ছালমাকাণ্ড’ আওয়ামী লীগের সৃষ্টি বলে দাবি করেছেন জাতীয় পাটির চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা আব্দুল্লাহ সিদ্দিকী।
তিনি বলেন, দলীয় মেয়রপ্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর ভরাডুবির আশঙ্কায় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা ভুয়া ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়েছে।তিনি ভোটারদের সচেতন দাবি করে বলেন, এ ধরণের ভুয়া অডিও-ভিডিও ভোটে কোনো প্রভাব পড়বে না।
উল্লেখ্য, সিসিক নির্বাচনে জাতীয় পার্টি মনোনীত মেয়র প্রার্থী ও মহানগর জাতীয় পার্টির আহ্বায়ক নজরুল ইসলাম বাবুলের একটি গোপন ভিডিও সোমবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফাঁস হয়।বাবুলের ৩১ সেকেন্ডের ভিডিওতে দেখা যায়, একটি ডাইনিং টেবিলের চেয়ারে বসে নাস্তা করছেন নজরুল ইসলাম বাবুল। এ সময় ক্যামেরার পেছন থেকে এক নারী মুন্নি নাম উচ্চারণ করে শারীরিক সম্পর্কে প্রশ্ন করেন। জবাবে বাবুল বলেন, আরে বাবা আমি কত কিছু করছি। ওই নারী ফের বাবুলকে প্রশ্ন করেন- ‘তুমি মুন্নিকে করছো?’ তখন আমি কত কিছু করছি বলে ক্ষেপে যান বাবুল। এ সময় চেয়ার থেকে উঠে ওই নারীর ক্যামেরা ঝাপটে ধরেন এবং অশ্লীল ভাষায় গালাগালি শুরু করেন বাবুল। একপর্যায়ে ওই নারী খবরদার বলে বাবুলকে ধমক দেন এবং বাবুলও তার সেই কথার উত্তরে বলেন, ‘তুই ভিডিও করছ কিতা। লাথ মারিয়া পেট পাটাইলিমু’।
এর পর পরই ছালমা নামের তাঁরই অফিসের এক নারী স্টাফের সঙ্গে নজরুল ইসলাম বাবুলের আরেকটি গোপন ‘কথোপকথন’র অডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ১৩ মিনিট ৪১ সেকেন্ডের এই অডিও কথোপকথনেও রয়েছে প্রেম-প্রণয়ের সঙ্গে অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি।যা পাঠকের কাছে তুলে ধরার মতো নয়।
এমন অডিও-ভিডিও সামাজিক যোগযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে তোলপাড় শুরু হয় নগরজুড়ে। রাজনীতি অঙ্গনের মানুষসহ বিভিন্ন শ্রেণির লোকজন বাবুলের নৈতিকতা নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন।
এ ব্যাপারে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সিলেটের সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘স্বাভাবিকভাবেই এগুলো তাঁর নির্বাচনে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। অশালীনতা মেনে নেওয়া যায় না। সব জায়গায় শালীনতা রেখে প্রতিযোগিতা হোক।’
শেয়ার করুন