সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক) নির্বাচনকে ঘিরে দিনভর প্রার্থী ও সমর্থকদের প্রচার-প্রচারণায় সরগরম হয়ে উঠছে নগরী। নগরের অলিগলি ছেয়ে গেছে পোস্টার এবং ব্যানারে। নগরের পাশাপাশি সিসিকের ৩৭ নং ওয়ার্ড এলাকায় শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় অবস্থান করায় এখানেও চলছে প্রচারণা এবং জনসংযোগ। দিনভর মাইকিং আর ঢোল-তবলার আওয়াজে সৃষ্টি হচ্ছে উচ্চ মাত্রার শব্দদূষণ। যা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
সরেজমিনে দেখা যায়, শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় তথা ৩৭ নং ওয়ার্ডে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দুপুর ২টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে জনসংযোগ করেন প্রার্থী সমর্থিত নেতা কর্মীরা। কেউ সিএনজি আবার কেউ ব্যাটারি চালিত অটোরিকশায় বিভিন্ন স্লোগানে জনসংযোগ করেন। আবার দেশের জনপ্রিয় গানগুলোর কথা পাল্টে প্রার্থীদের ভোট প্রার্থনায় ব্যবহার করা হচ্ছে জনপ্রিয় এসব গানের সুর। এতে কখনো খাইরুন সুন্দরী, টুনির মা, বিয়াইন সাব আবার কখনো বা মান্নার জনপ্রিয় আম্মাজান গানের সুরেও বেজে উঠে নির্বাচনী গান। এতে যেমন শব্দ দূষণ হচ্ছে, তেমনি বিরক্ত হচ্ছেন শিক্ষার্থীরা।
তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে মাইক নিয়ে প্রবেশ করতে না পারলেও পাশ্ববর্তী এলাকার মাইকের তীব্র শব্দ এসে সমস্যা সৃষ্টি করে আবাসিক হল গুলোতে। এর পাশাপাশি উচ্চ শব্দের প্রভাব পড়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মকর্তা কোয়ার্টার ও শিক্ষাভবন ‘সি’ এবং ‘ই’ এর এর ক্লাসরুমে।
অপরদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে অনেক শিক্ষার্থীদের মাইকিং দেখলে কান চেপে ধরে দূরে সরে যেতে দেখা গেছে। মাইকিং এর প্রভাব পড়ছে নগরীর মদিনা মার্কেট এলাকায় সাবহল সামাদ হাউসে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান গেইটে থাকা সাব হল আমির ও ফজল কমপ্লেক্স এবং শিক্ষক কর্মকর্তাদের কোয়ার্টার সাইফুনেও।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে উচ্চমাত্রায় মাইকিং করায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শিক্ষার্থীরা। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় গেইটের আশপাশে ভাড়া বাসায় থাকেন অনেক শিক্ষক। ফলে শিক্ষকরা ক্লাসের বাহিরে বাসায় বসে অনলাইন ক্লাস, প্রেজেন্টেশন ও অনলাইন নির্ভর বিভিন্ন জরুরী বৈঠকে সমস্যায় পড়ছেন বলেও জানান।
যদিও নির্বাচন কমিশনের আচরণবিধি অনুযায়ী, নির্বাচনী প্রচারকাজে একটি ওয়ার্ডে একের অধিক মাইক ও নির্বাচনী এলাকায় মাইক বা শব্দের মাত্রা বৃদ্ধি করে এমন অন্য কোনো যন্ত্রের ব্যবহার করা যাবে না। বেলা দুইটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত মাইকিং করে প্রচারণা চালানোর নিয়ম থাকলেও, সেটি মানা হচ্ছে না বলে অভিযোগ জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
আবার বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫-এর ক্ষমতাবলে শব্দ দূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা-২০০৬ প্রণয়ন করা হয়৷ বিধিমালার আওতায় নীরব, আবাসিক, মিশ্র, বাণিজ্যিক ও শিল্প এলাকা চিহ্নিত করে শব্দের মানমাত্রা নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে৷
বিশ্ববিদ্যালয়ের সফটওয়ার প্রকৌশল বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সাব্বির হাসান বলেন, ‘সিলেট সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন উপলক্ষে উচ্চ আওয়াজে বিশ্ববিদ্যালয় ও এর আশেপাশের এলাকায় মাইকিং করা হচ্ছে। যার ফলে বিশ্ববিদ্যালয় ও এর আশেপাশের এলাকার আবাসিক হল ও মেসের শিক্ষার্থীদের পড়ালেখায় ব্যাঘাত ঘটছে। আমরা যারা বঙ্গবন্ধু হলে থাকি তাদের বড় সমস্যার কারণ হচ্ছে পাশের এলাকাগুলোতে তীব্র স্বরে মাইকিং ও মাইকে নির্বাচনী গান বাজানো। তাই প্রশাসনের উচিত মাইকিং করার বিষয়টিতে সীমাবদ্ধতার ব্যবস্থা করা।’
সিলেট নগরীর মদিনা মার্কেট এলাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাব-হল সামাদ সাউজের আবাসিক শিক্ষার্থী তাসফিয়া ফারহানা ঐশী বলেন, ‘মাইকিং ও গান বাজনার বিকট শব্দে শব্দদূষণের সৃষ্টি হচ্ছে। আমাদের অনেকের পরীক্ষা চলতেছে যার ফলে বিকট শব্দের কারণে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় অসুবিধা হচ্ছে।’
বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় মাইকিং বিষয়ে সচেতনতা সম্পর্কে তাগিদ দেয়া হয়েছে কিনা এসব বিষয়ে জানতে চাইলে ৩৭নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদপ্রার্থী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী বিজিত লাল বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় শ্রদ্ধা ও সম্মানের জায়গা। এর আশেপাশে প্রচারণার বিষয়ে সবাইকে সচেতন হতে হবে। বিশেষ করে মাইকিং এর ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। প্রচারণা করা হয় ভোট দিতে উদ্বুদ্ধ করার জন্য, কিন্তু এই প্রচারণায় যদি আবার কেউ বিক্ষুব্ধ হয়ে যায় তাহলে ফল আসবে ভিন্ন। সুতরাং নির্বাচনে অংশ নেয়া সকল প্রার্থীকে এসব বিষয়ে সচেতন থাকা জরুরী।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে মাইকিং নিষিদ্ধ। বাহিরে যারা মাইকিং করে এসব বিষয়ে বাধা দেয়ার এখতিয়ার আমাদের নেই। তবে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা থাকেন এমন এলাকায় সহনশীল মাত্রায় মাইক বাজানোর জন্য অনুরোধ থাকবে।
এদিকে সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ফয়সাল কাদের সূত্রে জানা যায়, ‘নির্বাচনী প্রচার-প্রচরণা বন্ধ রাখতে তো আর বলতে পারবো না। তবে দুপুর ২টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত মাইক ব্যবহার করা যাবে। কিন্তু কেউ যদি এর ব্যত্যয় ঘটায়, তাহলে তিনি নির্বাচনি বিধি লঙ্ঘন করছেন। তা যদি আমাদের চোখে পড়ে, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
শেয়ার করুন