রাঙামাটির বরকলে ব্যবসায়ী মুনসুর আলীর বিরুদ্ধে ধর্ষন চেষ্টার অভিযোগ

জাতীয়

আরিফুল ইসলাম:

প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে। অনেকে আবার এসব খবর পড়তে পড়তে বিরক্ত। কাজের কাজ তো কিছুই হয় না। শুধু খবর পড়ে কী লাভ? হ্যাঁ, কোনো স্বাভাবিক মানুষই ধর্ষণের পক্ষে নয়। সবাই চায় ধর্ষকের সাজা হোক। তাহলে ধর্ষণ থামছে না কেন? ধর্ষণ সমাজের কোনো নতুন ঘটনা নয়। এ কথা সত্য। সে জন্যই কি এটাকে প্রাচীন প্রথা বলে জিইয়ে রাখতে চাই আমরা!

 

 

২০০২ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত নারী-শিশু নির্যাতনের আট হাজার মামলার পরিস্থিতি নিয়ে দীর্ঘ অনুসন্ধান করে দেখা গেছে, অর্ধেক মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে ঠিকই, কিন্তু সাজা হয়েছে মাত্র ৩ শতাংশ মামলায় (প্রথম আলো, ১৮ মার্চ, ২০১৮)। স্বল্প পরিসরে এই অনুসন্ধান থেকেই ধর্ষকের শাস্তি না হওয়ার বিষয়টি আঁচ করা যায়। রাঙ্গামাটি জেলার বরকল উপজেলাধীন আইমাছড়া ইউনিয়নের কলাবুনিয়া গ্রামের বাসীন্দা ও স্থানীয় যুবলীগ নেতা মো মুনছুর আলীর বিরুদ্ধে স্বপ্না বেগম নামক এক গৃহবধূকে ধর্ষন ও পরবর্তীতে বিয়ের করে এক মাস পরে তালাক দিয়ে একটা শিশু কন্যাসহ তার বাড়ি হতে বের করে দেবার পর পুনরায় ধর্ষন করার মত সর্বশেষ আরেকটি ঘটনা জানলাম।

এ বিষয়ে ভুক্তভোগী স্বপ্না বেগম জানান,বিগত ২০০৮ সালের দিগে তিনি এবং তার পরিবার চট্টগ্রাম হতে থাকার উদ্দেশ্যে কলাবুনিয়াতে তার বোন জেসমিন বেগম ও তার স্বামী মুনসুর আলীর কাছে আসে।এরপর তারা আলাদা বাড়িঘড় করে সেখানে বসবাস শুরু করে।এরপর তার বোন জেসমিন বেগম জমজ সন্তান জন্ম দিলে সংসারিক কাজ ও দোকানের রান্না করার জন্য স্বপ্নাকে তাদের বাসায় নিয়ে আসে। এরপর থেকে তৎকালীন ১৪ বছর বয়সী স্বপ্না জেসমিন বেগম ও তার স্বামী মুনসুরের সাথে থাকতে শুরু করে।
স্বপ্নার ভাষ্যমতে প্রায়শই রাতে তাকে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে মুনসুর আলী তাকে ধর্ষন করত।এ বিষয়ে স্বপ্না বেগম তার বোনকে বললে সে তাকে ভয় ভীতি দেখিয়ে চুপ করিয়ে দিত।এভাবে দিনের পর দিন মুনছুর কতৃক অনিচ্ছাকৃত জোরপূর্বক শারীরিক সম্পর্কের কারনে স্বপ্না গর্ভবতী হয়ে পড়েন।
পড়ে বিষয়টি এলাকায় জানাজানি হলে মুনছুর ও তার স্ত্রী মিলে স্বপ্নার ঔরসজাত সন্তানকে নষ্ট করার জন্য ভু্ষনছড়া ইউনিয়নের এরাবুনিয়া বাজারে জৈনেক গ্রাম্য চিকিৎসকের দোকান থেকে গর্ভপাতের ওষুধ এনে খাওয়ায়।তাতে কাজ না হওয়ায় পরবর্তীতে কলাবুনিয়া বাজার হতে পুনরায় ওষুধ কিনে খাওয়ায়।এতে করে স্বপ্না অসুস্থ হয়ে গেলে তাকে চিকিৎসার কথা বলে মুনসুর আলী তাকে রাঙ্গামাটি নিয়ে যায়।সেখানে গিয়ে চেকাপ করানোর পর তারা জানতে পারেন যে স্বপ্নার গর্ভকালের বয়স ৬ মাসের বেশি হয়ে গেছে।বাচ্চা নস্ট হবে না জেনেও স্বপ্না রাঙামাটি হোটেলে রেখে বিভীন্ন ওষুধ খাওয়াতে থাকে। এতে করে স্বপ্না অবস্থা আরো,খারাপ হয়ে যায়।পরবর্তীতে এলাকাবাসীর চাপে মুনসুর আলী স্বপ্নাকে পুনরায় এলাকায় ফিরিয়ে এনে গা ঢাকা দেয়।এরপর পুলিশসহ এলাকাবাসীর সহায়তায় মুণসুরকে ধরে আনা হলে সে রাঙামাটি কোর্টে গিয়ে ৬০,০০০টাকা দেনমোহর দিয়ে স্বপ্নাকে বিয়ে করেন এবং মুনসুরের দোকানে অর্ধেক স্বপ্নার নামে লিখে দেয়।এরপর বাচ্চা ভুমিষ্ঠ হবার কিছু দিন পর জেসমিন বেগম ও মুনসুর আলী তাকে বিভীন্ন ভয় ভীতি দেখিয়ে তালাকনামায় জোর স্বাক্ষর নিয়ে নেয়।এসময় স্বপ্নার বাচ্চার খরচ মুনসুরের বহন করার কথা থাকলেও বর্তমানে উক্ত বাচ্চার কোন খোজখবরই রাখছেন না তিনি।এরপর স্বপ্না তার বাচ্চার লালনপালনের খরচ যোগাতে চট্টগ্রাম চলে যায়।এসময়েও মুনসুর তার পাশবিক স্বার্থ চরিতার্থ করার লক্ষে প্রায় স্বপ্নাকে ফোন করে বিরক্ত করত।বিগত কিছুদিন আগে স্বপ্না অসুস্থতার কারনে এলাকায় ফিরে আসে।এরপর থেকে বিভিন্ন সময়ে মুনসর পুনরায় স্বপ্নাকে শারীরিকভাবে হেনস্থা করতে শুরু করে।বিগত জুনমাসের কোন এক সময়ে কলাবুনিয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পাশে স্বপ্না গড়ু চড়াতে গেলে মুনসুর তার পিছু নেয় এবং তাকে পুনরায় ধর্ষন করে।এসময় তার চিৎকার চেঁচামেচিতে পার্শবর্তী ব্যাক্তিরা ছুটে এলে মুনসুর সেখান থেকে দৌড়ে পালিয়ে যায়।ঘটনাটির সত্যতা সম্পর্কে প্রত্যেকদর্শী দুজন ব্যাক্তির বক্তব্য সাদৃশ্য পাওয়া যায়।পরবর্তিতে সে পুনরায় স্বপ্নাকে কোন মামলা না করার জন্য বিভিন্ন হুমকী ধামকি দিতে শুরু করেন।উক্ত ঘটনায় ভীত হয়ে স্বপ্নার বাবা স্ট্রোক করে মারা যান বলে তিনি জানান। বর্তমানে স্বপ্না ও তার বাচ্চা নিরাপত্তাহীন হয়ে পড়েছে বলে স্বপ্না জানান।বর্তমানে তার নামে দলিলকৃত দোকানটিও মুনসুর দখল করে রেখেছেন বলে স্বপ্না জানান।

 

এ বিষয়ে স্বপ্না বেগমের মা মোর্শেদা বেগম জানান,বর্তামানে আমার মেয়ে স্বপ্নাসহ আমার পুরো পরিবার খুব বিপদে আছি।মুনসুর প্রায়শই আমাদের বিভীন্ন হুমকী ধামকি দিয়ে থাকেন।

 

 

মুনসুর আলী ও তার স্ত্রী জেসমিন বেগমের নিকট বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে তাদের বক্তব্যে তারা জানান,তাদের বিরুদ্ধ আনীত অভিযোগের পুরোটাই একটা ষড়যন্ত্র। তারা এলাকার কিছু ব্যাক্তির সহযোগীতায় তাদের দোকানসহ বাকী সম্পত্তি হাতিয়ে নেবার জন্য এসব মিথ্যা অভিযোগ করতেছে।মুনসুর আলী আরো জানান তিনি যে নির্দোষ তার যথেস্ট প্রমান ও দলিল রয়েছে।প্রয়োজনে তিনি সেগুলো উত্থাপন করবেন বলে জানান।এছাড়াও তারা অচিরেই বিষয়টি নিয়ে আইনের আশ্রয়ে যাবেন বলে জানিয়েছেন।

এ বিষয়ে মহিলা কর্মকর্তা আনোকা খীসা জানান,যেহেতু ধর্ষনের ঘটনাটি অনেক আগের সেহেতু এখন ডিএনএন করলে কোন লাভ নেই।তবে যেহেতু প্রত্যেক্ষদর্শী স্বাক্ষী রয়েছে সেহেতু বিষয়টা নিয়ে মামলার ক্ষেত্রে লিগ্যাল এইড কিংবা ইএনও মহোদয়ের মাধ্যমে একটা ব্যাবস্থা গ্রহন করার বিষয়ে আমরা স্বপ্না বেগমকে সহযোগীতা করার চেষ্টা করব।পাশাপাশি কলাবুনিয়া মহিলা ইউপি সদস্য জোলেখা বেগম,আবু সালেহ মেম্বার ও মো মিজানুর মেম্বারকে স্বপ্না বেগম ও তার পরিবারের নিরাপত্তার বিষয়ে যথাযত খেয়াল রাখার বিষয়টি তিনি নিশ্চিত করবেন বলে জানান।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *