স্টাফ রিপোর্টার : হরতালকে কেন্দ্র করে সিলেট জেলা ও মহানগর এলাকায় বিএনপি-জামায়াত নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ৯টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এসব মামলায় সাড়ে ৯ শতাধিক নেতাকর্মীকে আসামী করা হয়েছে। এর মধ্যে সিলেট মহানগর এলাকায় ৫টি ও জেলার আওতাধিন বিভিন্ন থানায় আরো ৪টি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
নগর এলাকায় দায়েরকৃত ৫টি মামলার মধ্যে ৩টির বাদী পুলিশ ও ২টির বাদী হয়েছেন ক্ষতিগ্রস্থ ভূক্তভোগি। এছাড়া জেলার বিভিন্ন থানায় দায়েরকৃত ৪ মামলার সবকটির বাদী পুলিশ।জানা গেছে, ২৮ অক্টোবর ঢাকার মহাসমাবেশে দলীয় নেতাকর্মীদের উপর পুলিশ ও সরকার দলের হামলার অভিযোগ এনে ২৯ অক্টোবর হরতালের ডাক দেয় বিএনপি। পরবর্তীতে একই দিনে হরতাল আহ্বান করে জামায়াত। রোববার হরতাল চলাকালে সকাল থেকে সিলেট নগরী ও বিভিন্ন উপজেলায় পিকেটারদের সঙ্গে পুলিশের বিক্ষিপ্ত ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, ককটেল বিস্ফোরণ, গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। এসময় পিকেটারদের ইট-পাটকেলের আঘাতে আহত হয়েছেন সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের ৫ সদস্য। এসব ঘটনায় সিলেট জেলা ও মহানগর এলাকায় বিএনপি-জামায়াতের ১৫ নেতাকর্মীকে আটক করে পুলিশ।
এদিকে নাশকতা ও গাড়ি ভাংচুরের অভিযোগে এসএমপির ৪ থানায় ৫টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এসব মামলায় ৬৯ জনের নাম উল্লেখ করা হলেও অজ্ঞাত আসামী করা হয়েছে আরো ৪৭০ জনকে। একইভাবে সিলেট জেলা পুলিশের ৪ টি থানায় পুলিশ বাদী হয়ে পৃথক ৪টি মামলা দায়ের করে। এসব মামলায় ৭০ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আসামী করা হয়েছে আরো ৩৬০ জনকে।সোমবার সন্ধ্যায় দৈনিক জালালাবাদকে মামলার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার আজবাহার আলী শেখ ও সিলেট জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম এন্ড অপস্) শেখ মো. সেলিম।
জানা যায়, পুলিশ আক্রান্তের ঘটনা কোতোয়ালি থানায় আটকদেরসহ হামলাকারী, মদদদাতাদের নামোল্লেখ করে পুলিশ বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করে। অপরটি মোটরসাইকেল ভাংচুরের ঘটনায় এক ছাত্রলীগ নেতা বাদি হয়ে মামলা দায়ের করেন।এছাড়া জালালাবাদ থানায় পুলিশ অ্যাসল্টের ঘটনায়, এয়ারপোর্ট থানায় গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনায় এবং দক্ষিণ সুরমা থানায় গাছ সড়ক অবরোধ ও টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভের ঘটনায় জননিরাপত্তা আইনে মামলা দায়ের করা হয়। এইসব মামলায় এজাহার নামীয় ৬৯ জন ও অজ্ঞাতনামা ৪৭০ সজনসহ আসামি করে মামলা দায়ের করে পুলিশ ও ছাত্রলীগ নেতা। এসব মামলায় ৮জনকে গ্রেফতার করে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে।
এদিকে সিলেট জেলার গোলাপগঞ্জ, জকিগঞ্জ, গোয়াইনঘাট ও জৈন্তাপুর থানায় পৃথকভাবে পুলিশ বাদি হয়ে ৪টি মামলা দায়ের করেছে। এসব মামলা এখন পর্যন্ত ৫ জনকে আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।পুলিশ জানায়, গত শনিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে কালিগঞ্জ বাজারস্থ যাত্রী ছাউনির সামনে জকিগঞ্জ-সিলেট মহাসড়কের উপর বিএনপি-জামায়াত ও শিবিরের নেতাকর্মীরা একত্রিত হয়ে নাশকতামূলক কর্মকান্ড ঘটানোর উদ্দেশ্যে অবস্থান করে।
এসময় পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হলে পুলিশের উপর হামলার অভিযোগে উঠে। এ ঘটনায় বিএনপি-জামায়াতের ২২ নেতাকর্মীর নাম উল্লেখ করে ১০০ থেকে ১৫০ নেতাকর্মীকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে মামলা দায়ের করা হয়েছে। এ ঘটনায় একজনকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।এদিকে, হরতাল চলাকালে জৈন্তাপুরের সিলেট-তামাবিল মহাসড়কের হরিপুর বাস-স্টেশন এলাকায় পিকেটিং করার সময়ে গাড়িতে হামলা চেষ্টার অভিযোগে বিএনপির ৪ কর্মী সমথর্ককে আটক করা হয়েছে। এঘটনায় জৈন্তাপুর থানায় মামলা দায়ের করা হয়। এছাড়া পুলিশ বাদী হয়ে আরও দুটি মামলা দায়ের করে গোলাপগঞ্জ ও গোয়াইনঘাট থানায়।
এসএমপির পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, রোববার হরতালকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় ১৮০ রাউন্ড শর্টগানের গুলি, একটি টিয়ারগ্যাস ও ১৫টি সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করা হয়। হামলাকারীদের নিভৃত করতে পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে ৫ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। তারা হলেন- এএসআই ভুলন দেব, এএসআই ইলিয়াস রহমান, কনস্টেবল দিদার হোসেন, মুদ্দাচ্ছির ও শফিকুল ইসলাম শাকিব।
জেলা ও মহানগর থানা পুলিশের পৃথক আটকৃতরা হলেন- মহানগর বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক আব্দুল কাইয়ুম জালালী পংকী, সিলেট জেলা ছাত্রদলের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক জুয়েল আহমদ, দক্ষিণ সুরমা উপজেলা যুবদল নেতা মোহাম্মদ আব্বাস, সুনামগঞ্জ জেলার রঙ্গারচর আমবাড়ি এলাকার আব্দুর রউফের ছেলে ইমরান আহমদ (২২), কোতোয়ালি থানাধীন কাজলশাহস্থ নবাব রোডের সুলতান মাহমুদের ছেলে আব্দুল্লাহ আল ফাহিম (২১), দোয়ারাবাজার থানার কান্ডারগাঁও ইউনিয়নের নুরুউদ্দিনের ছেলে ইমরান হোসেন (২৭), দক্ষিণ সুরমার বরইকান্দি এলাকার সেরু মিয়ার ছেলে নাদিম আহমদ (২০), একই এলাকার মৃত বাবুল হোসেনের ছেলে ওয়াহেদুল ইসলাম শহিদ (২৭), জৈন্তাপুর উপজেলার লামা শ্যামপুর গ্রামের মৃত আব্দুর রবের ছেলে ফতেহপুর ইউনিয়ন ছাত্রদলের সভাপতি শোয়েব আহমদ (২৮), হেমু দত্তপাড়া গ্রামের জমশিদ মিয়ার ছেলে ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহবায়ক বদরুল ইসলাম (৩৫), বাগেরখাল দলইপাড়া গ্রামের হাজী আব্দুল মজিদের ছেলে আরিয়ান আহমদ এনাম, শ্যামপুর গ্রামের হাফিজ উল্লার ছেলে নাছির আহমদ ও জকিগঞ্জ থানার মোহাম্মদপুর গ্রামের জালাল আহমদ ককা মিয়ার ছেলে বিএনপি নেতা সাব্বির আহমদ (৩৫)।
আসামিদের গ্রেফতার দেখিয়ে সোমবার (৩০ অক্টোবর) আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এছাড়া জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাদের রিমান্ড আবেদন করা হতে পারে বলেও জানিয়েছে পুলিশ।এব্যাপারে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার আজবাহার আলী শেখ বলেন, আটক ৮জনকে সোমবার গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে। এই পর্যন্ত চারটি থানায় ৫টি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
সিলেট জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম এন্ড অপস্) শেখ মো. সেলিম, সিলেট জেলা পুলিশের আওতাধীন ৪ টি থানায় পুলিশ বাদী হয়ে মামলা দায়ের করা হয়েছে। এসব মামলায় ৪ জনকে গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে।
শেয়ার করুন