সুনামগঞ্জ-১ আসনে ৩ ভাগে বি ভ ক্ত আওয়ামী লীগ!

সুনামগঞ্জ

সুনামগঞ্জ-১ (তাহিরপুর, জামালগঞ্জ, ধর্মপাশা, মধ্যনগর) আসনে নির্বাচনকে ঘিরে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের মধ্যে বিভক্তি দেখা দিয়েছে। আসন্ন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে নৌকা মনোনীত প্রার্থী অ্যাডভোকেট রঞ্জিত সরকার, মনোনয়নবঞ্জিত সংসদ সদস্য স্বতন্ত্র প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার মোয়াজ্জেম হোসেন রতন এবং আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী জেলা জাতীয় শ্রমিক লীগের সাবেক সভাপতি- জেলা আওয়ামী লীগ সদস্য সেলিম আহমদের পক্ষে ভাগ হয়ে কাজ করছেন নেতাকর্মীরা।
এ তিনজনের মনোনয়ন বৈধ হওয়ার পর থেকেই নির্বাচনী এলাকায় নেতাকর্মীরা বিভক্ত হয়ে সভা-সমাবেশসহ মোটরসাইকেল মহড়া দিতে দেখা গেছে।
জানা গেছে- গত শুক্রবার এই আসনের মনোনয়ন বঞ্চিত বর্তমান সংসদ সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন রতন নিজ বাড়ীতে কর্মী, সমর্থক নিয়ে সভা করে সিলেট শাহজালাল (র.) ও শাহপরান (র.) মাজার জিয়াউরত করে ভোটে লড়ার ঘোষণা দিয়েছেন।
অপরদিকে দলীয় মনোনয়নবঞ্চিত সেলিম আহমদ স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। ব্যস্ত সময় পার করছেন দলীয় প্রার্থী অ্যাডভোকেট রনজিত সরকার। ফলে এই আসনে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা এখন ত্রি-ধারাবিভক্ত হয়ে একে অপরের বিরুদ্ধে আলোচনা-সমালোচনা করে মাঠ গরম রাখছেন।
জানা যায়, দলীয় কোন পদে না থেকেই ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে প্রথম এমপি পদে নির্বাচীত হন মোয়াজ্জেম হোসেন রতন। এরপর ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনেও আওয়ামী লীগের মনোনয়নে এমপি হন তিনি। পরে ধর্মপাশা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হন তিনি।
এই আসনে দলীয় মনোনয়নবঞ্চিত আওয়ামী লীগ নেতা সেলিম আহমদ স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। বিপুল সংখ্যক তরুণ কর্মী, সমর্থকরা তার পক্ষে প্রচারণায় নেমেছেন।

ধর্মপাশা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শামীম আহমদ বিলকিস বলেন, রতনের সঙ্গে বিএনপি জামায়াত থেকে আওয়ামী লীগে আসা হাইব্রিড কয়েকজন আছেন। রতন এই ১৫ বছরে বিএনপি এবং জামায়াত নিয়ে একটি এমপি লীগ তৈরি করেছেন।
তাহিরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আবুল হোসেন খাঁন বলেন, কে কোথায় স্বতন্ত্র প্রার্থী ঘোষণা দিল তাতে দলের কর্মীদের কিছু যায় আসে না। তাহিরপুর আওয়ামী লীগ নৌকার পক্ষে ঐক্যবদ্ধ আছে।
তাহিরপুর উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতি আশ্রাউল জামান ইমন ও সাধারণ সম্পদক সাইদুর রহমান বলেন, সুনামগঞ্জ-১ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে সেলিম আহমদের গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে। তিনি বিপুল ভোটে বিজয়ী হবেন, তার সঙ্গে ভোটাররা রয়েছেন।
মনোনয়নবঞ্চিত বর্তমান সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোয়াজ্জেম হোসেন রতন বলেন, আমি মনোনয়ন না পাওয়ায় আমার কর্মী-সমর্থকরা ব্যথিত। জামালগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম নবী হোসেন আমার প্রস্তাবক হয়েছেন। জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি রেজাউল করিম শামীম আমার পাশে রয়েছেন।
রতন আরো বলেন, ‘নৌকার বিরুদ্ধে লড়ার সাহস আমার নেই। তবে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজ ও দাঙ্গাবাজের বিরুদ্ধে লড়াই করার ক্ষমতা আমার আছে।

স্বতন্ত্র প্রার্থী সেলিম আহমদ জানান, নির্বাচনী প্রচারণায় কোন প্রার্থীকে বিষোদগার করতে চাই না। এই আসনের ভোটাররা যাতে কেন্দ্রে যান, দলীয় সভানেত্রীর চাওয়া উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট হোক, এখানে যেন সেটি হয়, সেই চেষ্টা করছি। আমার সঙ্গে এই আসনের নেতাকর্মী সহ সমর্থকরা রয়েছেন।
দলীয় মনোনীত প্রার্থী অ্যাডভোকেট রনজিত সরকার জানান, দলীয় সভানেত্রী আমার মত একজন ক্ষুদ্র কর্মীর হাতে নৌকা তুলে দিয়েছেন। আমার লড়াই দুর্নীতির বিরুদ্ধে। মানুষের ভালোবাসা নিয়ে এগিয়ে যেতে চাই। আগামী সাত জানুয়ারি মানুষ দুর্নীতির বিরুদ্ধেই রায় দেবেন।
জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি রেজাউল করিম শামীম জানান, দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা ও সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, নির্বাচন উন্মুক্ত, স্বতন্ত্র প্রার্থীর সঙ্গে যেতে বাধা নেই। যার যে প্রার্থীকে ভাল লাগবে, তাঁর পক্ষেই থাকবে।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *