দিনে হেলপার রাতে ডাকাত-ধর্ষক

জাতীয়

টাঙ্গাইলে চাঞ্চল্যকর বাস ডাকাতি ও ধর্ষণের ঘটনায় মূল হোতাসহ ১০ জনকে গ্রেফতার করেছে এলিট ফোর্স র‌্যাব। রবিবার সন্ধ্যা থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত র‌্যাব সদর দফতরের গোয়েন্দা শাখা, র‌্যাব-১২ ও র‌্যাব-১৪-এর যৌথ অভিযানে ঢাকা, গাজীপুর ও সিরাজগঞ্জ থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়। র‌্যাব বলছে, ২১ বছরের তরুণ রতন হোসেন পেশায় বাসচালকের সহকারী। তবে রাতে পেশা বদলে হয়ে ওঠেন বাস ডাকাতির দলনেতা! তার দলে আছে আরও ১২ জন। এদের কয়েকজন রতনের মতোই বাসচালকের সহকারী। কেউবা কাজ করেন কারখানায়। রাতে তারা যাত্রীবেশে অন্তত ১১টি বাসে হানা দিয়েছেন। সর্বশেষ ২ আগস্ট টাঙ্গাইল মহাসড়কে তার নেতৃত্বেই চলন্ত বাসে ডাকাতি ও ধর্ষণের ঘটনাটি ঘটেছে। গতকাল রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে কথা বলেন সংস্থাটির আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন। তিনি বলেন, ঘটনার তিন দিন আগে দলের সদস্য রাজা মিয়াকে নিয়ে বাস ডাকাতির পরিকল্পনা করেন রতন। পরে অপর সদস্যরা যুক্ত হন। তারা যাত্রী সেজে বাসে উঠে বিভিন্ন আসনে বসে বাসটির নিয়ন্ত্রণ নেন। ওই বাসে এক নারীকে ধর্ষণের পাশাপাশি আরও অনেক নারীকে হেনস্তা করেছেন তারা। তবে আগে থেকে ধর্ষণের পরিকল্পনা ছিল না বলে দাবি করেছেন গ্রেফতার ব্যক্তিরা।

কমান্ডার মঈন বলেন, রবিবার সন্ধ্যা থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত ঢাকা, গাজীপুর ও সিরাজগঞ্জে অভিযান চালিয়ে র‌্যাব সদর দফতরের গোয়েন্দা শাখা, র‌্যাব-১২ ও র‌্যাব-১৪ ধারাবাহিক অভিযান চালিয়ে ১০ জনকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতার ব্যক্তিরা হলেন- মূল পরিকল্পনাকারী রতন হোসেন (২১), আলাউদ্দিন (২৪), সোহাগ মণ্ডল (২০), খন্দকার মো. হাসমত আলী ওরফে দীপু (২৩), বাবু হোসেন ওরফে জুলহাস (২১), জীবন (২১), আবদুল মান্নান (২২), নাঈম সরকার (১৯), রাসেল তালুকদার (৩২) ও আসলাম তালুকদার ওরফে রায়হান (১৮)। তাদের কাছ থেকে ২০টি মোবাইল ফোনসেট, রুপার চুড়ি, ১৪টি সিমকার্ড ও ডাকাতিতে ব্যবহৃত একটি দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করা হয়।

যেভাবে প্রস্তুতি : খন্দকার আল মঈন বলেন, গ্রেফতার রতন ঘটনার তিন দিন আগে সহযোগী রাজা মিয়াকে বাসে ডাকাতির প্রস্তাব দিলে তিনি অন্যদের একত্র করার কথা বলেন। পরে মান্নান, জীবন, দীপু, আউয়াল ও নূরনবীকে ডাকাতির পরিকল্পনার কথা জানান। এরপর মান্নান তার সহযোগী সোহাগ, আসলাম, রাসেল, নাঈম ও আলাউদ্দিনকে নিয়ে ডাকাতিতে যোগ দেন। এ ডাকাতিতে রতনের নেতৃত্বে মোট ১৩ জন অংশ নেন। ২ আগস্ট গাজীপুরের জিরানী বাজার এলকায় সিরাজগঞ্জ থেকে ঢাকাগামী বাসে ডাকাতির পরিকল্পনা চূড়ান্ত হয়। রতন সদস্যদের ছোট ছোট দলে ভাগ করে কাজ বুঝিয়ে দেন। টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা মোড়ের একটি দোকান থেকে রতন ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত চারটি চাকু, দুটি ধারালো কাঁচি ও একটি খুর কেনেন। রাতে রাজাসহ চক্রের অন্য সদস্যরা সিরাজগঞ্জ রোড মোড় এলাকায় ঘোরাঘুরি করতে থাকেন। রাত আনুমানিক ১টার দিকে কুষ্টিয়া থেকে নারায়ণগঞ্জগামী ঈগল এক্সপ্রেস পরিবহনের একটি বাস সিরাজগঞ্জ রোড মোড় এলাকায় পৌঁছলে রাজা থামার সংকেত দেন। এরপর যাত্রীবেশে প্রথমে রতন, রাজা, মান্নান ও নূরনবী বাসটিতে ওঠেন। পরে আরও দুই দফায় বাসটিতে যাত্রীবেশে ওঠেন ডাকাত দলের অন্য সদস্যরা। বাসটিতে ২৪ জন সাধারণ যাত্রী থাকায় ডাকাত দলের অধিকাংশ সদস্য বাসের পেছনের দিকে বসেন। বাসটি বঙ্গবন্ধু বহুমুখী সেতু এলাকা অতিক্রম করলে রতন ডাকাত দলের সদস্যদের চাকু ও ধারালো কাঁচি দেন। এ সময় ধূমপানের কথা বলে বাসের গেটের কাছে যান আউয়াল। তিনি অন্যদের ইশারা দিলে রাজা, রতন, মান্নান ও নূরনবী চালকের আসনের কাছে গিয়ে তাকে মারধর করেন। এ সময় রতন চালকের আসনে বসে বাসের নিয়ন্ত্রণ নেন। ডাকাত দলের বাকি সদস্যরা বাসের চালক, সুপারভাইজার, হেলপারসহ সাধারণ যাত্রীদের হাত-মুখ বেঁধে সিট কভার দিয়ে মুখ ঢেকে দেন। এরপর তারা যাত্রীদের সঙ্গে থাকা নগদ অর্থ, স্বর্ণালঙ্কার ও মূল্যবান জিনিসপত্র লুট করেন। এ সময় তারা এক নারীযাত্রীকে ধর্ষণ করেন। র‌্যাবের মুখপাত্র বলেন, পরে টাঙ্গাইলের হাঁটুভাঙা মোড় হয়ে মধুপুরে যাওয়ার পথে মধুপুরের রক্তিপড়া এলাকায় লুট করা মালামাল নিয়ে ডাকাত দলের সদস্যদের মধ্যে বাগ্্বিতণ্ডা হয়। সে সময় রতন গাড়ি চালাচ্ছিলেন। এ অবস্থায় তিনি পেছনে তাকালে বাসটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার পাশে হেলে পড়ে। এরপর ডাকাত দলের সবাই লুট করা মালামালসহ বাস থেকে নেমে পালিয়ে যান। তারা অন্য বাসে করে টাঙ্গাইলের মধুপুর এলাকায় যান এবং মধুপুরের কুড়ালিয়া এলাকায় রতনের নিকটাত্মীয়ের ফাঁকা বাড়িতে গিয়ে লুণ্ঠিত মালামাল নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নেন।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *