সব জল্পনা-কল্পনা ও চ্যালেঞ্জকে পেছনে ফেলে আবশেষে কাল ৭ জানুয়ারী রোববার বাংলাদেশের দ্বাধশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। শুক্রবার প্রচারণা শেষের মধ্য দিয়ে শুরু হলো ভোটগ্রহণের অপেক্ষা। ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগসহ চেনা-অচেনা ২৮টি রাজনৈতিক দল অংশ নিচ্ছে এবারের নির্বাচনে।
অন্যদিকে, নির্বাচনে নেই বিএনপি ও জামায়াতের মতো বৃহৎ রাজনৈতিক দল। তাদের পথ অনুসরণ করে নির্বাচনে নেই আরো কিছু উল্লেখযোগ্য রাজনৈতিক দল। এই দলগুলো এই নির্বাচনকে ‘একতরফা’ বলে অভিযোগ তুলে ভোটের দিনও হরতালের ডাক দিয়েছে। গতকাল র্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটি আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলন থেকে জনগণকে ‘সার্বজনীন ভোট বর্জনে’র ডাকও দিয়েছে বিএনপি। তাই বিশেষজ্ঞরা বারবার বলছেন, কাল ভোটারদের বুথে আনাটাই সব চেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ শাসক আওয়ামী লীগের কাছে।
তবে এই নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মাঠে নামিয়ে নির্বাচন জমজমাট করার চেষ্টা করছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এর বাইরে জাতীয় পার্টি ছাড়াও নির্বাচনে আছে বেশ কিছু ছোট দল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এই নির্বাচন কতটা জমে উঠবে সেটা একটা বড় প্রশ্ন। ভোটারদের অংশগ্রহণ কেমন হবে সেটাও দেখার বিষয়। এবার নতুন ১ কোটি ৫৪ লাখ নতুন ভোটারসহ সারা দেশে মোট ভোটারের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১১ কোটি ৯৬ লাখে।নির্বাচনকে সামনে রেখে ইসির প্রকাশিত চূড়ান্ত ভোটার তালিকায় এই তথ্য উঠে এসেছে। এতে দেখা যায়, মোট ভোটারের মধ্যে পুরুষ ভোটার ৬ কোটি ৭৬ লাখ এবং নারী ভোটার ৫ কোটি ৮৯ লাখ। আর ট্রান্সজেন্ডার ভোটার ৮৪৯ জন।
বাংলাদেশে নির্বাচনের দিন এবং এর আগের দিন পরিস্থিতি কতটা শান্তিপূর্ন থাকে, ভোট পড়ার ক্ষেত্রে সেটা একটা বড় নিয়ামক হয়ে ওঠে। কিন্তু নির্বাচনে প্রচারণা শুরুর পর বেশ কয়েকটি জেলায় যেভাবে সহিংসতা হয়েছে, তাতে করে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে অনেক ভোটারের মধ্যেই। অন্যদিকে সরকারি দলের বিপরীতে কার্যকর প্রতিদ্বন্দ্বিতা না থাকায় ভোটারদের মধ্যেও সেভাবে আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না। অনেক আসনে সেভাবে নির্বাচনের আমেজও নেই। ফলে শেষ পর্যন্ত ভোটাররা ভোট দিতে কতটা আগ্রহী হবেন সেটা এখনো একটা বড় প্রশ্ন।
শুক্রবার সকালে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. মঈন খান অভিযোগ করেন, নির্বাচনকে সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক দেখানোর জন্য ডামি ভোটার ব্যবহার করা হচ্ছে। সাতই জানুয়ারির একতরফা ও ভাগ বাটোয়ারির নির্বাচনকে ঘিরে দেশে-বিদেশে হাস্যরস ও সমালোচনা চলছে, সরকার নিজ দায়িত্বে প্রতিদিন সেটাকে প্রহসন ও সহিংসতার নতুন মাত্রায় নিয়ে যাচ্ছে। ডামি প্রার্থী ও ডামি দল উৎপাদন করেই তারা ক্ষান্ত হয়নি, তারা এখন ডামি ভোটার সৃষ্টিতে নজর দিয়েছে।
এ প্রসঙ্গে ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক শুক্রবার এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে বলেন, বিএনপি নিজেই একটা ডামি দল। বাংলাদেশে ডামি দল হচ্ছে বিএনপি।তবে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক বাহাউদ্দীন নাসিম বিবিসিকে বলেন, ভয়ভীতি নয় বরং ভোটারদের উদ্বুদ্ধ করতে পারায় তারা এমনিতেই ভোটকেন্দ্রে আসবেন।
যদিও রাজনীতি বিশ্লেষক জোবাইদা নাসরীন মনে করেন বিভিন্ন বাস্তবতায় সেটা সহজ হবে না। তিনি বলেন, আমরা যে মিছিল বা ক্যাম্পেইন দেখছি, সেটা কিন্তু দলীয় নেতা-কর্মীদের মধ্যে সীমাবদ্ধ। যদি জনগণ এখানে অংশগ্রহণ করতো তাহলে সেটার চরিত্র, দৃশ্য অন্যরকম হতো। এখন যে ভোটে সমঝোতা আগেই হয়ে গেছে, কে নির্বাচিত হবে সেটা জানা, সেখানে অনেকে মনে করতে পারে ভোট দেয়া বা না দেয়া কোন অর্থ বহন করে না। এছাড়া গত দুটি নির্বাচনে যারা ভোট দিতে পারেন নাই, তাদেরও অনাগ্রহ থাকতে পারে। সুতরাং ভোটার কেন্দ্রে না যাওয়ার অনেক কারণ আছে।
এদিকে, শেষ পর্যন্ত নানামুখী হিসাব-নিকাশে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণাও দিয়েছেন কোনো কোনো প্রার্থী। তবে প্রায় ২০০ আসনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের বিরুদ্ধে শক্ত কোনো প্রতিদ্বন্দ্বিতা নেই।
২৮ রাজনৈতিক দলের হয়ে এবার লড়াই করছেন ১ হাজার ৫৩৪ প্রার্থী। আর স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়াই করছেন ৪৩৬ জন।আর সিলেটের ১৯ আসনে এবার মোট প্রার্থী ১১৭ জন। এরমধ্যে সিলেট জেলার ৬ আসনে ৩৫ জন, হবিগঞ্জের ৪ আসনে ৩১, মৌলভীবাজারের ৪ আসনে ২২ জন ও সুনামগঞ্জের ৫ আসনে ২৯ জন প্রার্থী ভোটযুদ্ধে লড়বেন।
এবার দেশে ৩০০ সংসদীয় আসনের মধ্যে ২৯৯ আসনে ভোট হচ্ছে।