দেশে রেকর্ড ১০ কোটি ২৯ লাখ কেজি চা উৎপাদন

জাতীয়

দেশে এবার লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি রেকর্ড চা উৎপাদন হয়েছে। ২০২৩ সালে বাংলাদেশের ১৬৮টি চা বাগান ও ক্ষুদ্রায়তন চা চাষিদের মাধ্যমে উৎপাদন হয়েছে রেকর্ড ১০ কোটি ২৯ লাখ কেজি চা। এর আগে ২০২১ সালে উৎপাদন হয়েছিল ৯ কোটি ৬৫ লাখ কেজি চা।

২০২৩ সালে বাংলাদেশে রেকর্ড পরিমান চা উৎপাদন হয়েছে। রাষ্ট্রায়ত্ত বাংলাদেশ চা বোর্ড সূ্ত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

১৮৫৪ সালে সিলেটে বাণিজ্যিকভাবে চা চাষ শুরুর পর ১৬৯ বছরের ইতিহাসে এই প্রথম ১০ কোটি কেজি চা উৎপাদনের মাইলফলক ছাড়িয়েছে। বাংলাদেশ চা বোর্ড সূত্র জানায়, ২০১৯ সালে ৯ কোটি ৬০ লাখ কেজি ও ২০২১ সালে ৯ কোটি ৬৫ লাখ কেজি চা উৎপাদনের পর ২০২২ সালে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ১০ কোটি কেজি। তবে সে বছর উৎপাদন হয় ৯ কোটি ৩৮ লাখ ২৯ হাজার কেজি। ২০২৩ সালে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ১০ কোটি ২০ লাখ কেজি। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৯ লাখ কেজি বেশি উৎপাদন হয়ে বছরে মোট উৎপাদন হয় ১০ কোটি ২৯ লাখ কেজি চা। সে হিসেবে পূর্বের বছরের চেয়ে এবার দেশে চায়ের উৎপাদন বেড়েছে প্রায় ১০ শতাংশ।

সূত্রমতে, দেশে বর্তমানে চায়ের মোট চাহিদা ৯ কোটি কেজির কিছু বেশি। দেশের চাহিদা মেটানোর পরও প্রায় ১ কোটি কেজি চা রয়ে যাবে উদ্বৃত্ত। এ চা রপ্তানি করা হবে। বাংলাদেশ টি অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান কামরান তানভিরুর রহমান বলেন, ২০২৩ সালে চায়ের জন্য অনুকূল আবহাওয়া ও নিয়মিত সংস্কার কার্যক্রমের কারণে রেকর্ড পরিমাণ চা উৎপাদন হয়েছে। তবে শুধু উৎপাদন বাড়লেই হবে না। অভ্যন্তরীণ বাজারের চাহিদা মাথায় রেখে রপ্তানি বাড়াতে হবে। পাশাপাশি চায়ের গুণগত মান বাড়াতে হবে। উৎপাদন বৃদ্ধি পাওয়ায় নিলামে চায়ের সরবরাহ বেড়েছে। আর সরবরাহ বাড়ায় আমরা প্রত্যাশা অনুযায়ী মূল্য পাচ্ছি না।

২০২৩ সালের এপ্রিল মাস থেকে ২০২৪ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত চট্টগ্রামে চায়ের নিলাম হয়ছে ৩৭টি। এসব নিলামে চা বিক্রি হয়েছে ৭ কোটি ৩৯ লাখ কেজি। গত বছরের তুলনায় এবার চায়ের গড়মূল্য ১৭ টাকা কমেছে। এবার চট্টগ্রামের নিলামে প্রতি কেজি চা গড়ে বিক্রি হয়েছে ১৮৪ টাকা ৫২ পয়সা দরে। চায়ের উৎপাদন যেমন বেড়েছে তেমনি উৎপাদন খরচও বেড়েছে। নিলামে ভালো দাম না পেলে অনেক চা বাগান হুমকির মুখে পড়বে।’

গণমাধ্যমকর্মীদের সাথে আলাপকালে বাংলাদেশ চা বোর্ডের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মো. আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দিক নির্দেশনা অনুসারে সঠিক, কার্যকর পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়নের কারণে এবং বাংলাদেশ চা বোর্ড, বাগানমালিক, শ্রমিক, ক্ষুদ্র চাষি—সকলের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় দেশের ইতিহাসে প্রথম ১০ কোটি কেজি চা উৎপাদনের মাইলফলকে পৌঁছা সম্ভব হয়েছে। বাংলাদেশের চা শিল্পের ইতিহাসে এটি একটি বিশাল অর্জন।

গত বছরের ফলন ১৭০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ উল্লেখ করে বাংলাদেশ চা বোর্ডের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মো. আশরাফুল ইসলাম বলেছেন, চা খাত একটি শিল্প, তাই এখানে সঠিক পরিকল্পনা অপরিহার্য উল্লেখ করে তিনি বলেন, সরকার ২০১৭ সালে দেশের চা খাতের জন্য একটি উন্নয়ন রোডম্যাপ নিয়েছিল।

সেই উন্নয়ন রোডম্যাপের যথাযথ বাস্তবায়নের ফলে উৎপাদন ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পেয়েছে বলে জানান তিনি।

তিনি উৎপাদন বাড়ানোর জন্য নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথাও উল্লেখ করেন। যার মধ্যে আছে- প্রতি বছর চারা রোপণ এলাকা বাধ্যতামূলকভাবে ২ দশমিক ৫ শতাংশ বৃদ্ধি, শ্রমিকদের জন্য আধুনিক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থার পাশাপাশি ক্ষুদ্র কৃষকদের মধ্যে বিনা মূল্যে চারা ও প্লাকিং মেশিন বিতরণ করা।

তবে তিনি বলেন, চা রপ্তানি বাড়াতে হলে উৎপাদিত চায়ের গুণগত মান উন্নত করতে হবে।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *