বায়ান্নর মাতৃভাষা আন্দোলনের অন্যতম ঐতিহাসিক প্রতীক শহিদ মিনার। যে মিনার বাংলাদেশের ভাষা, সংস্কৃতি ও আন্দোলন-সংগ্রামের সাক্ষী। ভাষা আন্দোলনের ৭২ বছর আর স্বাধীনতার ৫৩ বছর পেরিয়ে গেলেও ভাষা আন্দোলনে যারা নিজের জীবন উৎসর্গ করেছেন তাদের সম্মানে আজও তৈরি করা হয়নি শহিদ মিনার। ফলে অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পালন করা হয় না শহিদ দিবস, আবার কিছু কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কলাগাছ ও বেঞ্চ দিয়ে অস্থায়ী শহিদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শিশু শিক্ষার্থীরা।
সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলা সদর ও সাতটি ইউনিয়নের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ঘুরে এমন চিত্র দেখা যায়।
উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, উপজেলা সদরে শহিদ মিনার নেই, তবে একটি স্মৃতিসৌধ আছে। তাতেই উপজেলা সদরের কাছের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা,শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, শিক্ষার্থী শহিদদের স্মরণে ২১ ফেব্রুয়ারির দিন পুষ্পস্তবক অর্পণ করে সম্মান জানান।
মুক্তিযোদ্ধা সন্তান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের কৃষি ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক হাবিবুর রহমান খেলু জানান, ভাষা আন্দোলন আমাদেরকে সামনে এগিয়ে নিতে সাহস ও অনুপ্রেরণা যোগায়। ভাষা আন্দোলনের পথ ধরে ১৯৬২’র শিক্ষা, ৬৬’র স্বাধিকার, ৬৯র গণঅভ্যুত্থান, ৭১র মহান স্বাধীনতা যুদ্ধ। তাই ভাষা শহিদের সম্মান জানাতে ও আগামী প্রজন্মের কাছে শহিদের আত্মত্যাগের কথা তুলে ধরতে শহিদ মিনার নির্মাণ করা খুবই প্রয়োজন।
উপজেলা প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় ১৩৪টি সরকারি প্রাথমিক, ২১টি মাধ্যমিক ও নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ২টি কলেজ ও ৬টি মাদ্রাসা আছে। কোনো মাদ্রাসাতেও শহিদ মিনার নির্মাণ করা হয়নি। এর মধ্যে ১৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ১০টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শহিদ মিনার রয়েছে। অবশিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে আজো শহিদ মিনার গড়ে ওঠেনি। এর মধ্যে বাদাঘাট পাবলিক উচ্চ বিদ্যালয়, তাহিরপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, জনতা, বীরেন্দ্রনগর, ট্যাকেরঘাট, বালিজুরী, আনোয়ারপুরসহ মাধ্যমিক ও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ২৫টি শহিদ মিনার থাকলেও সেগুলোও সারা বছর থাকে জরাজীর্ণ অবস্থায়। শুধু বিশেষ দিনগুলোতে পরিষ্কার ও সাজানো হয়।
পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী সামরুল আহমেদ জানান, বিদ্যালয়ে শহিদ মিনার না থাকায় মাতৃভাষার জন্য যারা জীবন উৎসর্গ করেছেন তাদেরকে সম্মান জানাতে ২১ ফেব্রুয়ারিতে তাদের সম্মান জানাতে পারি না। শহিদ মিনার থাকলে ভাষা শহিদদের প্রতি সম্মান জানাতে পারতাম।
জয়নাল আবেদিন মহাবিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রুবেল মিয়া জানান, শহিদ মিনার না থাকায় উপজেলা সদরে একটি স্মৃতিসৌধ আছে সেখানে আমরা প্রতিবছর ২১ ফেব্রুয়ারিতে বীরদের প্রতি সম্মান জানাই। প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহিদ মিনার স্থাপনের দাবি জানাই।
তাহিরপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মিজানুর রহমান জানান, যেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শহিদ মিনার নেই সেই সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহিদ মিনার নির্মাণের জন্য স্কুলের প্রধানদের বলা হয়েছে। এবং যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন
করার নির্দেশনা দেওয়া আছে।
বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম বাঘা জানান, ২১ ফেব্রুয়ারিতে ভাষা সৈনিক বীরদের প্রতি সম্মান জানাতে শহিদ মিনার না থাকার উপজেলা সদরে ছোট পরিসরে তৈরি একটি স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে সম্মান জানানো বেমানান দেখায়।
তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সালমা পারভিন জানান, ভাষা শহিদের সম্মানে শহিদ মিনার স্থাপনের বিষয়টি নিয়ে সবার সাথে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
তাহিরপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান করুণা সিন্ধু চৌধুরী বাবুল বলেন, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে তুলে ভাষা শহিদের কথা তুলে ধরতে ও সম্মান জানাতে প্রতিটি বিদ্যালয়ে শহিদ মিনার স্থাপন করা খুবই প্রয়োজন। এই বিষয়ে
আমি দায়িত্বশীলদের সাথে কথা বলব এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করব।