গবেষণা শিক্ষকের, ‘চুরি’ শিক্ষার্থীর

সিলেট

সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (সিকৃবি) পাঁচজন শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে চৌর্যবৃত্তির মাধ্যমে গবেষণাপত্র প্রকাশের চেষ্টার অভিযোগ তুলেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের মৎস্য জীববিদ্যা ও কৌলিতত্ত্ব বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. শামীমা নাসরিন। এই পাঁচ শিক্ষার্থীর মধ্যে দুজন শিক্ষার্থী অধ্যাপক ড. শামীমা নাসরিনের একটি প্রজেক্টের আন্ডারে কাজ করেছেন।

অধ্যাপক ড. শামীমা নাসরিন বলেন, ‘সম্প্রতি আমার একজন সহকর্মীর কাছে একটি গবেষণাপত্র রিভিউ করার জন্য পাঠানো হয়। আমি পেপারটি চেক করে দেখি আমার একটি প্রজেক্টের আন্ডারে পূর্বে প্রকাশিত একটি গবেষণাপত্রের আইডিয়ার সাথে এই গবেষণাপত্রের কাজ মিলে যাচ্ছে। পাশাপাশি এখানের পাঁচজন গবেষকের মধ্যে দুইজন (মো. জোবায়ের রহমান রনি ও রাসেল মিয়া) আমার পূর্ববর্তী প্রজেক্টে আমার সুপারভিশনে কাজও করেছে। যে পেপারটির সাথে এই পেপারের অনেকটাই মিলে যায়। তারা কোন ল্যাবরেটরিতে এই ডাটাগুলা নিয়ে কাজ করেছে তারও কোনো উল্লেখ নেই। সেইসাথে এই গবেষণার ফান্ডিং এ একটা বিশাল গলদ রয়েছে। আমি যতটুকু জানি তারা সকলেই ২০১৯ সালে জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ফেলোশিপ প্রাপ্ত হয়েছেন। এবং ওই সময়টাতেই জোবায়ের ও রাসেল আমার সাথে কাজ করেছে। তাদের এই গবেষণাটির ডাটাগুলোও যে ম্যানুপুলেটেড এতেও কোনো সন্দেহ নেই।

তিনি বলেন, তাদের নৈতিকতার অবক্ষয়ে আমি মর্মাহত। তারা যদি প্রমাণ করতে পারে তাদের গবেষণাপত্র সঠিক আমি সবচেয়ে খুশি হব। কারণ আমি কোনো পক্ষ না। আমি তাদের শিক্ষক। আমি বিষয়টা চেপে যেতে পারতাম। কিন্তু করিনি তাদের ও আগামীর গবেষকদের ভবিষ্যতের জন্য। এদের সকলেই মেধাবী শিক্ষার্থী এতে কোনো দ্বিমত নেই আমার। কিছুদিন পর হয়ত তারা দেশের নানা গুরুত্বপূর্ণ সকল প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বে যাবে। তাই আমি চাই না আমার শিক্ষার্থীদের নিজেদের মধ্যে এমন নীতি বিবর্জিত কাজ লালন করবে। তারা যদি তাদের ভুল বুঝে তাহলে সেটাও অন্য শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষণীয় হবে। এধরনের কাজ করতে আগামীর শিক্ষার্থীরা নিরুৎসাহিত হবে।

এ বিষয়ে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা সিস্টেমের পরিচালকের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ‘আমরা মৌখিক ভাবে অধ্যাপক ড. শামীমা নাসরিনের থেকে উনার একটি গবেষণাপত্র থেকে চৌর্যবৃত্তির একটি অভিযোগ শুনেছি, তবে ছুটির দিন থাকায় তিনি অফিসিয়ালি অভিযোগ জানাতে পারেননি। উনি অফিসিয়ালি অভিযোগ জানালে আমরা রিসার্চ সিস্টেম থেকে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’

এদিকে শিক্ষার্থীদের এমন অনৈতিক কাজের সাথে জড়িত থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের মৎস্য স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের অধ্যাপক ড. আল মামুন Q2 জার্নালে প্রকাশ হতে যাওয়া উনার দুইটি গবেষণা কাজ উইথড্র করে নিয়েছেন। যেখানে মো. জোবায়ের রহমান রনি ও রাসেল মিয়া নামের অভিযুক্ত দুইজন শিক্ষার্থী তার দলের সদস্য ছিলেন। তিনি বলেন, এমন সদস্যদের নিয়ে আমি কোনো পেপার পাবলিশ করতে চাই না যারা নৈতিকভাবে এতটাই পিছিয়ে আছে।’

এ বিষয়ে অভিযুক্ত প্রধান গবেষক মো. জোবায়ের রহমান রনি বলেন, ‘এখানে ভুল বুঝাবুঝির সৃষ্টি হয়েছে। আমাদের পেপারটিতে কোনো চৌর্যবৃত্তির আশ্রয় নেইনি। এখানের ডাটাগুলো সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ আমাদের দলের গবেষকেরা মিলেই করেছি। আমাদের সুপারভিশনে ছিলেন খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক। আমাদের কোনো ডাটাই ম্যানুপুল্যাটেড না। আর এই ডাটা নিয়ে কাজ করতে কোনো ল্যাবরেটরিরও প্রয়োজন হয় না। তাই ল্যাবের কথা এখানে উল্লেখ নেই। আমরা বিষয়টি নিয়ে ড. শামীমা ম্যামের সাথে কথা বলার চেষ্টা করছি। তিনি আমাদের সাথে এ ব্যাপারে কথা বললে সব ভুল বুঝাবুঝির অবসান হবে। আমরা চাই আমাদের পক্ষ হতে ম্যামকে সম্পূর্ণ বিষয়টি পরিষ্কারভাবে বুঝাতে। তবে আমরা আমাদের অনুষদের ডিন স্যারের সাথে এই বিষয়ে কথা বলেছি। তিনি অনুষদের সকল শিক্ষককে নিয়ে আজ ২৮ ফেব্রুয়ারি দুপুরে একটি জরুরি মিটিং এর ব্যবস্থা করবেন বলে জানিয়েছেন। আমরা সেখানে আমাদের গবেষণার অথেনটিসিটি প্রমাণ করতে পারব।’

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *