সিলেটে সংসদ নির্বাচন থেকে শুরু করে স্থানীয় সরকার নির্বাচন সবখানেই প্রবাসী প্রার্থীদের ছড়াছড়ি থাকে। এবারের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনেও এ চিত্র বদলায়নি। প্রথম পর্বে জেলার চারটি উপজেলার মধ্যে তিনটিতেই প্রবাসীরা প্রার্থী হয়েছেন। ১৯ চেয়ারম্যান প্রার্থীর মধ্যে ১০ জনই প্রবাসী বলে স্থানীয় ভোটাররা নিশ্চিত করেছেন।
খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, প্রথম পর্বে অনুষ্ঠেয় নির্বাচনে চার উপজেলার মধ্যে কেবল সিলেট সদর উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে কোনো প্রবাসী প্রার্থী নেই। বাকি তিন উপজেলায় প্রবাসী প্রার্থী রয়েছেন। এর মধ্যে গোলাপগঞ্জ উপজেলায় প্রার্থী হওয়া তিনজনই প্রবাসী। বিশ্বনাথ উপজেলায় ১০ জন প্রার্থীর মধ্যে ৫ জনই প্রবাসী। এ ছাড়া দক্ষিণ সুরমা উপজেলায় ছয়জনের মধ্যে দুজন প্রবাসী প্রার্থী।
প্রবাসীদের প্রার্থী হওয়া প্রসঙ্গে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সিলেটের সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী বলেন, নির্বাচন এলেই প্রবাসীরা দেশে এসে প্রার্থী হন। অনেকটা উড়ে এসে জুড়ে বসার মতো। অধিকাংশ প্রার্থীর সঙ্গে স্থানীয় ভোটারদের দীর্ঘদিন ধরে কোনো সম্পর্কও থাকে না। অথচ তাঁরা টাকার জোরে ঠিকই আলোচনায় চলে আসেন। এলাকার সঙ্গে সম্পর্কহীন প্রার্থীদের বর্জন করা উচিত ভোটারদের।
রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে প্রাপ্ত তালিকা নিয়ে স্থানীয় ভোটারদের সঙ্গে আলোচনা করে প্রার্থীদের রাজনৈতিক পরিচয় ও বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে দেখা গেছে, গোলাপগঞ্জ উপজেলার তিনজন প্রার্থীই প্রবাসী। তাঁরা হলেন যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী মঞ্জুর কাদির শাফি ও শাহিদুর রাহমান চৌধুরী এবং ব্রাজিলপ্রবাসী আবু সুফিয়ান।
দক্ষিণ সুরমা উপজেলায় ছয়জন প্রার্থীর মধ্যে দুজন প্রার্থী প্রবাসী। তাঁরা হচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী মো. বদরুল ইসলাম। তিনি অবশ্য উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকও। এ ছাড়া যুক্তরাজ্য শ্রমিক লীগ নেতা মোহাম্মদ জুয়েল আহমদও এখানে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আছেন।
বিশ্বনাথ উপজেলার ১০ জন প্রার্থীর মধ্যে অর্ধেকই প্রবাসী। তাঁরা হচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ নেতা মোহাম্মদ এস আলী এনামুল হক চৌধুরী, যুক্তরাজ্য বিএনপির সহসাংগঠনিক সম্পাদক মো. সেবুল মিয়া, যুক্তরাজ্যপ্রবাসী বিএনপি নেতা সফিক উদ্দিন, যুক্তরাজ্য যুবলীগের সহসভাপতি শমসাদুর রহমান রাহিন এবং যুক্তরাজ্যের ডরসেট আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. আবদুল রোসন চেরাগ আলী।
বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নির্বাচন এলেই অনেক প্রবাসী দেশে ফেরেন। অনেকে প্রার্থী হন, আবার অনেকে প্রবাসী প্রার্থীদের সমর্থনে প্রচারণায় নামেন। এবার উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে কোনো রাজনৈতিক দল দলীয় প্রতীক দেয়নি। তবে বিগত সময়ে সংসদ নির্বাচন থেকে শুরু করে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অনেক প্রবাসী প্রার্থী দলীয় প্রতীক পেয়ে নির্বাচিতও হন। এলাকার সঙ্গে কোনো ধরনের সম্পর্ক ছাড়া অনেক প্রার্থী দলীয় প্রতীক পেয়ে নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় স্থানীয় রাজনীতিকদের মধ্যে ক্ষোভও আছে।
স্থানীয় ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সিলেট প্রবাসী–অধ্যুষিত অঞ্চল। এখানে যেকোনো নির্বাচন মানেই প্রবাসী প্রার্থীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত। বিশেষ করে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় ও দলনিরপেক্ষ প্রার্থীদের ছড়াছড়ি থাকে। এবারও উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান থেকে শুরু করে ভাইস চেয়ারম্যান পদেও অন্তত ২০ জন প্রার্থী হয়েছেন। কেউ কেউ নির্বাচিত হবেন বলেও আভাস পাওয়া যাচ্ছে। পরবর্তী ধাপেও সব কটি উপজেলায় অসংখ্য প্রবাসী প্রার্থী হতে তৎপর আছেন বলে স্থানীয় লোকজন জানিয়েছেন।
বিশ্বনাথ উপজেলার একজন ভোটার নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, অনেক প্রবাসী নিজেদের এলাকার আর্থসামাজিক উন্নয়নে বিভিন্ন সময় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। তাই নির্বাচনের মাঠে তাঁদের ভালো প্রভাব থাকে। আবার অনেক প্রবাসী এলাকার সঙ্গে যোগাযোগহীন থাকলেও নির্বাচনের সময় টাকার জোরে অনেক সমর্থক তৈরি করে ফেলেন। স্থানীয় প্রার্থীদের অনেকে প্রবাসী প্রার্থীদের টাকার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে উঠতেও হিমশিম খান।
স্থানীয় লোকজন জানান, অনেক প্রবাসী এলাকাবাসীর সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখেন এবং দেশেও নিয়মিত আসেন। এমন প্রার্থীদের ভোটের মাঠে গুরুত্ব আছে। আবার অনেক প্রার্থী টাকার জোরে জয় পেয়ে পরবর্তী সময়ে ঘন ঘন প্রবাসে চলে যান। এতে ভোটাররা কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত হন।
যোগাযোগ করলে বিশ্বনাথ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী চেয়ারম্যান প্রার্থী ও যুক্তরাজ্য বিএনপির সহসাংগঠনিক সম্পাদক মো. সেবুল মিয়া বলেন, ‘আমি প্রবাসী হলেও নিয়মিতভাবে দেশে আসি। প্রতিবছর তিন থেকে চারবার আমার দেশে আসা হয়। এলাকার ক্রীড়া, সামাজিকসহ নানা আয়োজনে আমার অংশগ্রহণ ও পৃষ্ঠপোষকতা থাকে। তাই তরুণ ও যুবকদের পরামর্শে প্রার্থী হয়েছি। জয়ের ব্যাপারেও আমি শতভাগ আশাবাদী।’
শেয়ার করুন