দেশের অর্ধেকেরও বেশি গ্রাহক বিদ্যুৎহীন, মোবাইল ও ইন্টারনেট সেবা অচল

জাতীয়

ঘূর্ণিঝড় রিমালে দেশের অর্ধেকেরও বেশি গ্রাহক বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়েছে। চাহিদা না থাকায় বিদ্যুৎ উৎপাদন তিন হাজার ৭৫১ মেগাওয়াটে নেমে এসেছে। উপকূলসহ দেশের বিস্তীর্ণ অঞ্চলের মোবাইল নেটওয়ার্ক (বিটিএস) অচল হয়ে গেছে, নেই  ইন্টারনেটও। ফলে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার জনসাধারণ। রোববার রাত থেকেই অনেকে ফোনে আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছেন না।

সোমবারের ঝড়ে রাজধানীর বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছ। অচল হয়েছে পড়েছে মোবাইল ফোনের প্রায় অর্ধশতাধিক নেটওয়ার্ক সাইট।

সূত্র জানিয়েছে, রিমালে বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানিগুলোর ক্ষতির পরিমাণ ৯৮ কোটি টাকা। ৪৫ জেলার ৮ হাজার ৪১০টি মোবাইল টাওয়ার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ১০০ সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের নেটওয়ার্ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে তিন লাখ গ্রাহক ইন্টারনেট সেবা থেকে বঞ্চিত হয়েছে।

সূত্র জানিয়েছে, বিদ্যুৎ ব্যবস্থা স্বাভাবিক হতে মঙ্গলবার পেরিয়ে যাবে।

টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন বলছে, মোবাইল নেটওয়ার্ক সাইট অচল হওয়ার মূল কারণ বিদ্যুৎ না থাকা। বিদ্যুৎ এলেই সাইটগুলো পর্যায়ক্রমে সচল হবে।

দুর্ভোগ

রিমালের প্রভাবে দেশের বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থা লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে। ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে অনেক এলাকার বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ রাখা হয়েছে। কিছু কিছু এলাকায় গাছ পড়ে লাইন বিচ্ছিন্ন হয়ে সরবরাহ বন্ধ হয়েছে। সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, পিরোজপুর, ভোলা, পটুয়াখালী ও বরিশাল জেলার অধিকাংশ গ্রাহক এবং ফেনী, কক্সবাজারসহ কয়েকটি জেলায় আংশিক বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। এলাকাভেদে ১০ থেকে ৩৬ ঘণ্টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ পাচ্ছে না গ্রাহকেরা।

বাগেরাহাটের ছয় লাখের বেশি মানুষ বিদ্যুৎহীন রয়েছেন। রোববার সকাল থেকেই শ্যামনগর, কালিগঞ্জ, মোড়েলগঞ্জ, শরণখোলা, মোংলা ও রামপাল উপজেলার প্রায় অধিকাংশ এলাকায় বিদ্যুৎ ছিল না। রোববার রাত ১১টার পর সদরে বিদ্যুৎ সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়।

ফেনী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি জানিয়েছে, সোমবার সকাল ৮টা থেকে পুরোপুরি সংযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। জেলায় পল্লী বিদ্যুতের ৪ লাখ গ্রাহক বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।

ফেনীর একজন নির্বাহী প্রকৌশলী জানান, সোমবার ভোর ৫টা থেকে ৩০ হাজারের অধিক গ্রাহক বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। বৃষ্টি বন্ধ হলে লাইন মেরামতে কাজ শুরু হবে।

ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে কক্সবাজারের মহেশখালীতে রোববার রাত দেড়টা থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। এতে ভোগান্তিতে ৭০ হাজার গ্রাহক। পিরোজপুর প্রায় ৪৮ ঘণ্টা ধরে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।

বিদ্যুতের ক্ষতি

ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে রোববার থেকে ৮০টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মধ্যে ৬৫টি সমিতির ২ কোটি ৬৯ লাখ ৪৭ হাজার গ্রাহকের বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। যেখানে দেশের মোট বিদ্যুৎ গ্রহাক ৪ কোটি ৭০ লাখ। সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ৩ লাখ ২১ হাজার গ্রাহক সংযোগ চালু হয়েছে। এখনও ২ কোটি ৬৬ লাখ ২৬ হাজার গ্রাহক বিদ্যুৎহীন। এছাড়া ঘূর্ণিঝড় প্রবণ এলাকার ৩০টি সমিতির ২ হাজার ৭১৭টি পোল, ২ হাজার ৩৫৩টি ট্রান্সফরমার, ৫৩ হাজার ৪২৫টি মিটার নষ্ট এবং ৭১ হাজার ৭২৯টি স্প্যান (তার ছেঁড়া) ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রাথমিকভাবে পল্লী বিদ্যুতের ৯১ কোটি ২০ লাখ টাকা ক্ষতি হয়েছে।

দক্ষিণাঞ্চল বিদ্যুৎ বিতরণ কর্তৃপক্ষের (ওজোপাডিকো) চার লাখ তিপান্ন হাজার গ্রাহক বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। সোমবার বিকেল ৫টা পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্যানুসারে ঘূর্ণিঝড়ে ২০টি পোল ক্ষতিগ্রস্ত, ১৩৫টি হেলে পড়েছে। ২৪ কিলোমিটার তার ছিড়ে গেছে। ১২টি ট্রান্সফরমার, ১৩৪টি ১১ কেভি ইন্সুলেটর নষ্ট হয়েছে। মোট ক্ষতি হয়েছে পাঁচ কোটি ছিয়াত্তর লাখ টাকার।

ফোন, ইন্টারনেট সেবা ব্যহত

ঘূর্ণিঝড় রিমালের কারণে উপকূলসহ দেশের ৪৫টি জেলার মোবাইল ও ইন্টারনেট সেবা ব্যহত হয়েছে। বিদ্যুৎ না থাকায় অধিকাংশ এলাকা নেটওয়ার্কের বাইরে রয়েছে। এজন্য রোববার রাত থেকেই অনেকে ফোনে আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছেন না।

সোমবার নিয়ন্ত্রক সংস্থা টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ঘূর্ণিঝড়ে দেশের ৪৫ জেলায় মোবাইল অপারেটরদের প্রায় ৪৯ শতাংশ অর্থাৎ ২২ হাজার ২১৮টি সাইট অচল হয়ে পড়েছে। এছাড়াও সকাল ১০টা পর্যন্ত উপকূলীয় এলাকায় আইএসপি অপারেটরদের ৩২০টি পপ (পয়েন্ট অব প্রেজেন্স) এর মধ্যে ২২৫টি অকার্যকর ছিল। এতে তিন লাখের মতো গ্রাহক ইন্টারনেট সেবা বঞ্চিত হচ্ছে।

অপটিকাল ফাইবার সেবাদাতা এনটিটিএন অপারেটরদের হিসাব অনুযায়ী, ১৫ জেলার ১ হাজার ৯০৮টি পপ বিদ্যুত না থাকায় বন্ধ হয়েছে।

সূত্রমতে, সবচেয়ে বেশি অচল বিটিএস রয়েছে রাঙ্গামটি, মেহেরপুর, গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর, মানিকগঞ্জ, বরিশালরাজবাড়ি, ঝালকাঠি, বরগুনা, নাটোর পিরোজপুর, পাবনা ইত্যাদি এলাকায়।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *