সিলেটে পানি মাড়িয়ে কেন্দ্রে এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা

সিলেট

বন্যার মধ্যেই সিলেটে শুরু হয়েছে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা। মঙ্গলবার (০৯ জুলাই) সকাল ১০টা থেকে এইচএসসি পরীক্ষা শুরু হয়।

এর আগে সকাল ৯টা থেকে সাড়ে ৯টার মধ্যে পরীক্ষার্থীরা কেন্দ্রে পৌঁছান। কিন্তু সিলেটের অনেক কেন্দ্রে এখনও পানি রয়েছে। ফলে পানি মাড়িয়ে পরীক্ষায় বসেন শিক্ষার্থীরা।

তবে চলমান বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকরা দুশ্চিন্তায় থাকলেও কলেজ কর্তৃপক্ষ পরীক্ষার্থীদের সুবিধায় কাদামাটিতে বালি ফেলে প্রবেশদ্বারে খানিকটা সুবিধা করার চেষ্টা করেছেন।

সরেজমিনে বন্যা কবলিত সিলেটের দক্ষিণ সরকারি ডিগ্রি কলেজে গিয়ে দেখা গেছে, কলেজটির প্রবেশদ্বার থেকে শুরু করে অভ্যন্তরে এখনো বন্যার পানিতে রাস্তা ও আঙিনা ডুবে আছে। শিক্ষার্থীদের প্রবেশে রাস্তায় ফেলা হয়েছে বালির বস্তা। সেই বালির বস্তার ওপর দিয়ে কলেজে প্রবেশ করেন শিক্ষার্থীরা। একইভাবে বোর্ডের অনেক কেন্দ্রে এভাবে বন্যার পানি মাড়িয়ে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নেন পরীক্ষার্থীরা। তবে বন্যার কারণে কিছু কিছু কেন্দ্র স্থানান্তর করেছে বোর্ড কর্তৃপক্ষ।

সিলেটের দক্ষিণ সুরমা সরকারি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মতিউর রহমান বলেন, কলেজের প্রবেশ পথে পানি থাকলেও পরীক্ষার্থীদের সুবিধার্থে রাস্তায় বালুর বস্তা দেওয়া হয়েছে। কয়েকটি শ্রেণিকক্ষে পানি রয়েছে। তবে সেগুলোতে পরীক্ষার হল রাখা হবে না।

এছাড়া বালাগঞ্জ ডিএন উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্র থাকলেও সেখানে পানি থাকায় এ কেন্দ্রের পরীক্ষার্থীরা বালাগঞ্জ সরকারি কলেজে পরীক্ষা দিচ্ছেন বলে জানা গেছে।

সিলেট শিক্ষাবোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক অরুণ চন্দ্র পাল সাংবাদিকদের বলেন, বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হওয়াতে কেন্দ্রের আশপাশে কোনো পানি নেই। এটা বিবেচনা করেই মঙ্গলবার (৯ জুলাই) থেকে এইচএসসি পরীক্ষা শুরু হয়েছে।

জানা গেছে, বোর্ডের অধীনে পুরো বিভাগের ৩০৯টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ৮২ হাজার ৭৯৫ পরীক্ষার্থী এইচএসসি পরীক্ষায় বসেছেন। মোট পরীক্ষার্থীর মধ্যে ছাত্র ৩৩ হাজার ৫৯০ জন এবং ছাত্রী ৪৯ হাজার ২০৫ জন।

বোর্ডের অধীনে এবার সিলেট জেলায় পরীক্ষার্থী সংখ্যা ৩৫ হাজার ৬২০ জন, সুনামগঞ্জে ১৫ হাজার ৬৬৪ জন, মৌলভীবাজারে ১৬ হাজার ৫০৮ জন ও হবিগঞ্জে ১৫ হাজার তিনজন পরীক্ষার্থী আছেন। বিভাগের চার জেলায় মোট ৮৭টি পরীক্ষাকেন্দ্র রয়েছে। এর মধ্যে সিলেটে ৩৩টি, সুনামগঞ্জে ২২টি, মৌলভীবাজারে ১৪টি ও হবিগঞ্জে ১৮টি।

মঙ্গলবার (৮ জুলাই) সকাল ৯টা পর্যন্ত সুরমা নদীর পানি একটি পয়েন্টে ও কুশিয়ারা নদীর দুটি পয়েন্টে এখনো বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যমতে, আজ সকাল ৯টায় সিলেটের কানাইঘাট পয়েন্টে সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমার ২৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। সোমবার সন্ধ্যা ৬টায় ছিল ৪০ সেন্টিমিটারে। আর জকিগঞ্জের অমলশীদ পয়েন্টে একই সময়ে ৪৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। সোমবার সন্ধ্যায় ছিল ৪৯ সেন্টিমিটারে এবং কুশিয়ারা ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে সকাল ৯টায় বিপৎসীমার ৯৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। এ পয়েন্টে সোমবার সন্ধ্যায় ৯৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছিল।

গত ২৯ মে ভারী বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সিলেটে বিভাগে বন্যা দেখা দেয়। ৮ জুনের পর বন্যা পরিস্থিতি অনেকটা স্বাভাবিক হয়ে আসে। সবশেষ ১৭ জুন শুরু হওয়া টানা বৃষ্টিতে সিলেটে দ্বিতীয় দফায় বন্যা পরিস্থিতির তৈরি হয়। এতে সিলেট নগরীর ২৪টি ওয়ার্ডসহ ১৩টি উপজেলা ও সুনামগঞ্জের ১৩টি উপজেলা কমবেশি প্লাবিত হয়।

এ অবস্থায় আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটি এক বিজ্ঞপ্তিতে সিলেট বিভাগের এইচএসসি, মাদরাসা ও কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা ৮ জুলাই পর্যন্ত স্থগিত করে। অবশেষে পিছিয়ে যাওয়া এইচএসসি পরীক্ষা শুরু হলো আজ।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *