বহুমাত্রিক সমস্যায় বিপর্যস্ত রাজধানীর ট্রাফিক ব্যবস্থা। অসহনীয় এ অবস্থা থেকে উত্তরণে এবার উদ্যোগী হলেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সংকট সমাধানের উপায় খুঁজতে দায়িত্ব দিলেন বুয়েটের বিশেষজ্ঞদের। প্রাথমিকভাবে ৬ দফা রূপরেখা নিয়ে কাজ শুরু করেছেন তারা। তবে বলছেন, দীর্ঘমেয়াদি সমাধানে প্রয়োজন গণপরিবহন ব্যবস্থার উন্নতি করা।
সড়কে দুর্ভোগ যেন ঢাকাবাসীর ভাগ্যের সঙ্গে ওতোপ্রতভাবে জড়িয়ে। স্বস্তির আশায় বিভিন্ন সরকার নানা স্বপ্ন দেখালেও, দিনশেষে দুঃস্বপ্নই নগরবাসীর সঙ্গী। ৫ আগস্টের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর অনেকটা অকার্যকর হয়ে পড়ে ট্রাফিক ব্যবস্থা। সংকট নিরসনের রূপরেখা খুঁজতে দেশিয় ও স্বল্প খরচে সমাধানের পথে হাটতে চাইছে অন্তর্বর্তী সরকার। উপায় খুঁজে বের করতে প্রধান উপদেষ্টা দায়িত্ব দেন বুয়েটের দুই বিশেষজ্ঞকে।
এরই মধ্যে তৈরি করা হয়েছে ছয় দফা প্রস্তাবনা। পরিকল্পনা আছে আগামী তিন সপ্তাহের মধ্যে হাইকোর্ট মোড় থেকে আবদুল্লাপুর পর্যন্ত পরীক্ষামূলকভাবে কার্যকরের।
এতে বলা হয়েছে-
১- প্রধান সড়ক থেকে নিবন্ধনহীন রিকশা, অটোরিকশা ও ইজি বাইক অপসারণ।
২- ট্রাফিক পুলিশকে আইন প্রয়োগে সক্রিয় করা।
৩- প্রতিটি রাস্তার মোড়ের ৫০ মিটার ও গুরুত্বপূর্ণ সংযোগ সড়কে ১০০ মিটারের মধ্যে যানবাহন পার্কিং না করা।
৪- নির্ধারিত স্থানে সুশৃঙ্খলভাবে যাত্রী ওঠা-নামা নিশ্চিত করা।
৫- কম ব্যস্ত সিগনালে ২ থেকে ৩ মিনিট এবং ব্যস্ত সিগনালে সর্বোচ্চ ৫ মিনিট সিগনালসাইকেল নিশ্চিত করা।
৬- তাৎক্ষনিক সমস্যা সমাধানে ৬ থেকে ৮ টি ভ্রম্যমাণ ট্রাফিক মনিটরিং টিম গঠন করা।
বুয়েটের দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক ড. মো. হাদিউজ্জামান বলেন, সড়কে ট্রাফিক পুলিশ রেখেই সমাধানের পথ খুঁজতে হবে। আমাদের যে পরিমাণ বিশৃঙ্খল ব্যবস্থাপনা আছে সেখানে ব্যাকরণ কাজ না করে আধুনিক কিছু চাপানো যাবে না। আমরা যেটি চিন্তা করছি সেটি হচ্ছে অনেকটা সেমি-অটোমেটেড। ফ্লেক্সিবল সিগনাল লাইট বলছি। এখানে অটোমেশন থাকবে আবার সেই সঙ্গে ট্রাফিক পুলিশ ম্যানুয়ালি এটি টাইম পরিবর্তন করতে পারবে।
এই ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা দেখভালের মূল দায়িত্ব পালন করবে ঢাকা সড়ক পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ আর বাস্তবায়নে থাকবে ট্রাফিক পুলিশ বিভাগ। এই পরিকল্পনা কতটা সুফল আনবে এমন প্রশ্নে আশাবাদী পুলিশ।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার খোন্দকার নজমুল হাসান বলেন, যখন মানুষ সিগনালে অভ্যস্ত হবে তখন একজন কনস্টেবল পুরো ট্রাফিক সিগনালটা কন্ট্রোল করতে পারবে যেখানে বর্তমানে ৫ জন কাজ করে। তবে মানুষ অভ্যস্ত হয়ে গেলে বাকি ৪ জন অন্য বাকি কাজগুলো দেখভাল করতে পারবে। তখন মানুষ ইচ্ছা করে সিগনাল অমান্য করবেন না। পুলিশ আইন প্রয়োগ করে কখনই ট্রাফিক সিস্টেম উন্নত করতে পারবে না। চাকল এবং যাত্রী যদি আইন মানে তখন পুলিশ আইন প্রয়োগ করতে সুবিধা হবে আর ট্রাফিক সিস্টেমও উন্নত হবে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দীর্ঘমেয়াদে ঢাকার ট্রাফিক ব্যবস্থায় শৃঙ্খলা ফেরাতে প্রতিদিনের প্রায় ২ কোটি ট্রিপের ৭০ শতাংশ নিশ্চিত করতে হবে বাসে। রাষ্ট্রের একক মালিকানায় চালাতে হবে সব বাস।
ড. মো. হাদিউজ্জামান বলেন, সরকারকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। যে বাসগুলো রুট পারমিট নেই সেই বাসগুলোকে রুট থেকে বের করে দিতে হবে। যেই বাসগুলো চলার উপযোগী সরকারকে সেগুলো নিয়ে প্রথম কাজ করতে হবে। ধীরে ধীরে বিনিয়োগ হবে এবং বাসের মান পরিবর্তন হবে, আলাদা লেন থাকবে। চাইলে সিগনালে তাদের প্রায়োরিটি দেয়া হবে। তখন বাসগুলোকে একটা শৃঙ্খলায় আনা যাবে।
গবেষণা বলছে, যানজটে রাজধানীতে বছরে আর্থিক ক্ষতি অন্তত ৫০ হাজার কোটি টাকা। পরিস্থিতির উন্নতি হলে যার অনেকটাই সাশ্রয় হবে। স্বস্তি মিলবে নগরজীবনেও।
শেয়ার করুন