ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইআবি) ভিসি অধ্যাপক ড. মো: শামছুল আলম বলেছেন, আলিয়া মাদ্রাসার শিক্ষার মান উন্নয়নে শিক্ষকদের আন্তরিকতা ও ছাত্রদের কঠোর পরিশ্রমের প্রয়োজন। আলিয়া মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা জাতীয় সকল গুরুত্ব সেক্টরে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে আসছে, যা অনস্বীকার্য। তবে অন্যান্য ধারার মত আলিয়া মাদ্রাসাতেও কিছু প্রতিবন্ধকতা আছে, সেটা কাটিয়ে ওঠার জন্য সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টা জরুরি।
আজ মঙ্গলবার (১ অক্টোবর) ‘আলিয়া মাদ্রাসা শিক্ষা দিবস উপলক্ষ্যে’ বাংলাদেশ মাদ্রাসা ছাত্রকল্যাণ পরিষদের উদ্যোগে আয়োজিত এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্য প্রদানকালে তিনি একথা বলেন।
ড. শামছুল আলম বলেন, দুঃখজনকভাবে অনেক শিক্ষার্থী আলিয়া মাদ্রাসায় পড়ার কারণে পরিচয় দিতে সংকোচ বোধ করেন। আমাদের সমাজে একটি নেতিবাচক ধারণা সৃষ্টি করা হয়েছে যে, এখানে শিক্ষার মান উন্নত নয় বা দক্ষ শিক্ষকের অভাব রয়েছে। তবে, আমরা বিষয়টাকে সেভাবে দেখছি না। আমাদের আলিয়া মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা জাতীয় সকল সেক্টরে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে আসছে, তাই আমাদের এই হীনম্মন্যতা কাটিয়ে উঠতে হবে।
তিনি বলেন, যদি শিক্ষকেরা আন্তরিকতার সাথে দায়িত্ব পালন করেন এবং শিক্ষার্থীরা লেখাপড়াকে ইবাদত মনে করে নিয়মিত ক্লাসে উপস্থিতির পাশাপাশি কঠোর পরিশ্রম করেন, তাহলে আমরা এই পরিস্থিতি পরিবর্তন করতে পারব, ইনশাআল্লাহ।
বাংলাদেশ মাদ্রাসা ছাত্রকল্যাণ পরিষদের কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক মাওলানা মু. তৈয়ব হোসাইনের সঞ্চালনায় ও কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা কেফায়েত উল্লাহ এর উদ্বোধনী বক্তব্যের মাধ্যমে সেমিনারের কার্যক্রম শুরু হয়। বাংলাদেশ মাদ্রাসা ছাত্রকল্যাণ পরিষদের উপদেষ্টা অধ্যক্ষ মাওলানা যাইনুল আবেদীনের সভাপতিত্বে সেমিনারে বাংলাদেশ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. আবদুছ ছবুর মাতুব্বর প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।
তিনি বলেন, আলিয়া মাদ্রাসায় আরবি, ইংরেজি, অংক ও আইটি শিক্ষা দেওয়া হয়। ফলে এ শিক্ষা নিয়ে আলেম হওয়ার পাশাপাশি ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, বিসিএস, ব্যবসায়ীসহ যেকোনো পেশা গ্রহণের সুযোগ রয়েছে। কিন্তু বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার কারণে আলিয়া মাদ্রাসা শিক্ষায় যুগোপযোগী আলিম তৈরি হচ্ছে না।
প্রবন্ধে তিনি আরও উল্লেখ করেন, অতিরিক্ত সিলেবাস-কারিকুলাম, শিক্ষার্থীদের শিক্ষা জীবনকে লক্ষ্যহীন ও অস্থিতিশীল করে তোলে এবং যোগ্য শিক্ষক না পাওয়াই এর প্রধান কারণ।
সেমিনারে প্রধান আলোচক হিসেবে বক্তব্য দেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের অধ্যাপক ড. আ ক ম আব্দুল কাদের। তিনি বলেন, মাদ্রাসা শিক্ষার কারিকুলামে পরিবর্তন, দক্ষ শিক্ষক নিয়োগ ও শিক্ষার্থীদের ক্লাসে উপস্থিতি নিশ্চিত করার বিষয়ে জোর দিতে হবে।
প্রবন্ধের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে গুরুত্বপূর্ণ আলোকপাত করেছেন অধ্যক্ষ ড. আবু ইউসুফ খান (তামিরুল মিল্লাত কামিল মাদ্রাসা, যাত্রাবাড়ী), মুহাদ্দিস ড. আবুল কালাম আজাদ বাশার (মদিনাতুল উলুম কামিল মাদ্রাসা, ঢাকা), অধ্যাপক ড. কামরুল হাসান (আরবি বিভাগ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া), অধ্যক্ষ ড. আনোয়ার হোসেন মোল্লা (উত্তর বাড্ডা কামিল মাদ্রাসা, ঢাকা), উপধ্যক্ষ ড. খলিলুর রহমান মাদানী (তামিরুল মিল্লাত কামিল মাদ্রাসা, যাত্রাবাড়ী), অধ্যাপক ড. তাজুল ইসলাম (আরবি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়), অধ্যক্ষ মহিউদ্দিন আহমেদ (মিসবাহুল উলুম কামিল মাদ্রাসা, ঢাকা), প্রধান মুহাদ্দিস মাও. মাহমুদুল হাসান (মিসবাহুল উলুম কামিল মাদ্রাসা, ঢাকা), চেয়ারম্যান হাবিবুল্লাহ মু. ইকবাল (তানজিমুল উম্মাহ ফাউন্ডেশন), সাবেক আহ্বায়ক রফিকুল ইসলাম মিয়াজি ও সাবেক আহ্বায়ক মাও. মুস্তাফিজুর রহমান প্রমুখ।
সেমিনারে ‘বাংলাদেশ মাদ্রাসা ছাত্রকল্যাণ পরিষদ’ ১০ দফা দাবি তুলে ধরেন। এসব দাবির মধ্যে রয়েছে-
১. আলিয়া মাদ্রাসা শিক্ষা সংশ্লিষ্ট অফিস, উইং-মাদ্রাসা বোর্ড, মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তর, শিক্ষা মন্ত্রণালয়সহ সকল শাখায় মাদ্রাসা শিক্ষিতদের নিয়োগ প্রেষণে পদায়ন করতে হবে।
২. আলিয়া মাদ্রাসা শিক্ষার সিলেবাস-কারিকুলাম প্রণয়নে মাদ্রাসা শিক্ষায় শিক্ষিতদের নিয়ে কমিশন ও কমিটি গঠন করতে হবে।
৩. শিক্ষকদের জন্য নিয়মিত প্রশিক্ষণ কর্মসূচি চালু করতে হবে।
৪. জেলা, উপজেলা ও থানা পর্যায়ে মাদ্রাসা শিক্ষায় শিক্ষিত ডি ই টি ই ও নিয়োগ করতে হবে।
৫. আলিয়া মাদ্রাসা শিক্ষার রিক্রুটিং সেন্টার নামে খ্যাত ইবতেদায়ী মাদ্রাসা স্থাপনের পথ খুলে দিতে হবে।
৬. ক্লাসে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে প্রশিক্ষিত শিক্ষকের মাধ্যমে শিক্ষা উপভোগ্য করে উপস্থাপন করতে হবে।
৭. শিক্ষার্থীদের মধ্যে মুয়া’মালাত ও মুয়া’শারাতের অনুশীলনে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে।
৮. জীবনের লক্ষ্য নির্ধারণের জন্য নিয়মিত কাউন্সেলিং করতে হবে।
৯. সহ-শিক্ষার বিষবাষ্পে পরিবেশ ভারি হয়ে উঠছে, যা মাদ্রাসায় ছাত্রী শিক্ষার্থীদের ভর্তি হতে নিরুৎসাহিত করছে।
১০. পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষার জন্য ভর্তি পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করলেও সঠিক সাবজেক্ট দেওয়া হচ্ছে না এবং চাকরির ক্ষেত্রে সমসাময়িক বৈষম্যের অভিযোগ উঠছে।
সেমিনারে উপস্থিত বিশিষ্ট ব্যক্তিরা শিক্ষার মান উন্নয়নে সঠিক পদক্ষেপ নেওয়ার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
শেয়ার করুন