যেমন ছিল সাবেক রাষ্ট্রপতি একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর রাজনৈতিক জীবন

রাজনীতি

সাবেক রাষ্ট্রপতি ও বিকল্পধারা বাংলাদশ-এর সভাপতি অধ্যাপক এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী মারা গেছেন। চিকিৎসক থেকে রাজনীতিবিদ হিসেবে উত্থান হয় তার। ২০০১ সালের নভেম্বর থেকে পরের বছরের জুন পর্যন্ত দেশের ১২তম রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেছিলেন তিনি।

রাজনীতিতে একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর পরিচিতি শুরু হয়েছিল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হিসেবে। কিন্তু ২০০২ সালে সে দল থেকে বেরিয়ে নতুন দল গঠন করেন তিনি। যদিও গত দুই দশকেও তার নতুন দলটি বড় সাড়া জাগাতে সফল হয়নি। তবে রাজনীতিতে একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী বরাবর ছিলেন আলোচিত এক চরিত্র।

বাংলাদেশের জাতীয় জ্ঞানকোষ বাংলাপিডিয়া বলছে, বদরুদ্দোজা চৌধুরী ১৯৭৯ সালে রাজনীতিতে প্রবেশ করেন, যখন তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল গঠন করেন। তিনি ছিলেন দলটির প্রতিষ্ঠাতা মহাসচিব। ১৯৭৯ সালে তিনি প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মন্ত্রীসভায় উপ-প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। এছাড়াও জিয়াউর রহমান এবং খালেদা জিয়া – দুই সরকারের সময়ই মন্ত্রী ছিলেন, এবং বিভিন্ন সময় স্বাস্থ্য ও পরিবার-পরিকল্পনা, শিক্ষা এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ও সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেছিলেন।

মুন্সীগঞ্জ-১ আসন থেকে তিনি পাঁচবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। দুইবার জাতীয় সংসদের উপনেতা এবং একবার বিরোধী দলীয় উপনেতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০০১ সালে তিনি খালেদা জিয়ার সরকারে পররাষ্ট্র মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পান। এরপর ২০০১ সালের ১৪ই নভেম্বর বাংলাদেশের ১৫তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব শুরু করেন। ওই সময় শপথ গ্রহণের আগে তিনি বিএনপির সকল পদ ও দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করেন।

বাংলাদেশে প্রেসিডেন্ট হবার পর এমন নাটকীয় পদত্যাগের ঘটনা আর ঘটতে দেখা যায়নি। ২০০২ সালের ২১শে জুন রাষ্ট্রপতি হিসেবে পদত্যাগ করেন মি. চৌধুরী। সেসময় বিএনপি সংসদে তার বিরুদ্ধে অনাস্থা এনেছিল। তার আগে বিএনপির সংসদীয় দলের বৈঠকে অনেক সংসদ সদস্য দাবী তোলেন যে রাষ্ট্রপতি বদরুদ্দোজা চৌধুরী পদত্যাগ করুন। অন্যথায় তাকে ইমপিচ করার হুমকি দেন তাঁরা।

রাষ্ট্রপতি হিসেবে পদত্যাগের পর তিনি বিএনপি কর্মীদের হাতে লাঞ্ছিত হয়েছিলেন। এরপর ‘বিকল্পধারা বাংলাদেশ’ নামে নতুন একটি রাজনৈতিক দল গঠন করেন তিনি। তবে দলগঠনের পর দেশজুড়ে সংগঠনের কার্যক্রম বিস্তৃত বা জনপ্রিয় করতে পারেননি তিনি, লেখক মহিউদ্দিন আহমদ যাকে বলছেন বাংলাদেশের দ্বি-দলীয় রাজনীতির কাঠামোর ফল। কিন্তু জাতীয় নির্বাচনের সময় বড় দলগুলোর সাথে জোটগঠনে ভূমিকা রেখেছে বিকল্পধারা বাংলাদেশ।

তার নেতৃত্বে ২০০৬ সালে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী জোটে যোগ দিয়েছিল বিকল্পধারা বাংলাদেশ। যদিও পরে সে ঐক্য দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। সবশেষ, ২০১৮ সালে জাতীয় নির্বাচন যেটিতে বিএনপি অংশ নিয়েছিল, সেসময় ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে বিএনপির সাথে যোগ না দেয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেন মি. চৌধুরী ও তার দল বিকল্প ধারা বাংলাদেশ।

১৯৩০ সালের ১১ অক্টোবর কুমিল্লা শহরে জন্মগ্রহণ করেন বদরুদ্দোজা চৌধুরী। ১৯৪৭ সালে ঢাকার বিখ্যাত স্কুল সেন্ট গ্রেগরি থেকে প্রথম বিভাগে ম্যাট্রিকুলেশন এবং ১৯৪৯ সালে ঢাকা কলেজ থেকে প্রথম বিভাগে আইএসসি পাস করেন। তিনি ১৯৫৪-৫৫ সালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস ডিগ্রি লাভ করেন। যুক্তরাজ্যের তিনটি রয়েল কলেজ অব ফিজিশিয়ানস লন্ডন, এডিনবার্গ ও গ্লাসগো থেকে নির্বাচিত ফেলো-এফ.আর.সি.পি এবং বাংলাদেশের (সম্মানিত) এফ.সি.পি.এস ডিগ্রিও অর্জন করেন তিনি।

১৯৯৩ সালে তিনি রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা স্বাধীনতা পুরস্কার লাভ করেন। এছাড়া জনপ্রিয় টিভি অনুষ্ঠান ‘আপনার ডাক্তার’-এর উপস্থাপক ছিলেন বদরুদ্দোজা চৌধুরী। শ্রেষ্ঠ টিভি উপস্থাপক হিসেবে তিনি ১৯৭৭ সালে বাংলাদেশ টেলিভিশন পুরস্কারও লাভ করেন তিনি।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *