সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর বাংলাদেশের তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর শেয়ার কিনতে ফের আগ্রহ দেখাতে শুরু করেছেন বিদেশি বিনোয়োগকারীরা। তারা আশা করছেন, বর্তমান প্রেক্ষাপটে বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময় হার স্থিতিশীল হবে এবং ফ্লোর প্রাইসসহ বাজারে হস্তক্ষেপ করা যায় এমন কোনো ব্যবস্থা পুনরায় আরোপ করা হবে না।
বাজার বিশ্লেষকদের মতে, বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বাড়ার আরেকটি কারণ হলো যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাংকগুলোতে সুদের হার কমেছে এবং বাংলাদেশের তালিকাভুক্ত অনেক কোম্পানির শেয়ারের মূল্য অনেক কম।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাই-আগস্ট সময়ে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের নিট পোর্টফোলিও বিনিয়োগ হয়েছে ৪ কোটি ৯০ লাখ ডলার, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ৩০ লাখ ডলার।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত চার বছরে মার্কিন ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন হয়েছে ৪০ শতাংশের বেশি।
এদিকে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের নেট পোর্টফোলিও বিনিয়োগ গত চার অর্থবছরে নেগেটিভ ছিল, ২০২৪ অর্থবছর তারা ৬২ মিলিয়ন ডলার সম পরিমাণ বিনিয়োগ তুলে নিয়ে যায়। ২০২৩ অর্থবছরে তারা ৩০ মিলিয়ন ডলার তুলে নিয়ে যায়।
বিদেশি বিনিয়োগকারীরা ২০২১ অর্থবছর থেকে বিপুল হারে শেয়ার বিক্রি করতে শুরু করে, তখন তারা ২৬৯ মিলিয়ন ডলারের শেয়ার বিক্রি করে নিয়ে যায়। অবশ্য ২০২২ অর্থবছরে তা কমে ১৫৮ মিলিয়ন ডলারে নেমে আসে।
বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত মাসে চার বছরেরও বেশি সময়ের মধ্যে প্রথমবারের মতো সুদের হার কমিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ফেডারেল রিজার্ভ মূল ঋণের হারের লক্ষ্যমাত্রা শূন্য দশমিক পাঁচ শতাংশ পয়েন্ট কমিয়ে চার দশমিক ৭৫ শতাংশ থেকে পাঁচ শতাংশে নামিয়ে এনেছে।
বিশ্বের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় মার্কেট অ্যানালিটিক অ্যান্ড ইনডেক্স প্রোভাইডার এফটিএসই রাসেল ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) সূচকের উপস্থিতি যাচাই করতে গত মাস থেকে পুনরায় স্থানীয় শেয়ারগুলোর পর্যালোচনা শুরু করেছে।
ফ্লোর প্রাইস ব্যবস্থা চালুর পর ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের পর্যালোচনা বন্ধ করে দেওয়া হয়। সাধারণত বিদেশি বিনিয়োগকারীরা ভালো শেয়ার চিহ্নিত করতে বেশ কিছু সূচক দেখে। যার মধ্যে একটি সূচক হলো এফটিএসই, যেখানে ২৫টি বাংলাদেশি শেয়ার অন্তর্ভুক্ত ছিল।
ইউসিবি স্টক ব্রোকারেজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ রহমত পাশা বলেন, বিদেশি বিনিয়োগকারীদের প্রধান অগ্রাধিকার হচ্ছে সুশাসন। প্রতারকদের বিরুদ্ধে যে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে, সে ব্যাপারে তারা খুবই ইতিবাচক।
তিনি আরো বলেন, বিদেশি বিনিয়োগকারীদের দ্বিতীয় অগ্রাধিকার হলো মুনাফা।
এর আগে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের জেরে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয়। এরপর ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করে। নতুন সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ টানতে শেয়ার কারসাজির সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থাসহ বিভিন্ন উদ্যোগ নিতে শুরু করেছে। তারই ধারাবাহিকতায় দীর্ঘদিন পর এবার দেশের কোম্পানিগুলোর শেয়ার কিনতে আগ্রহ দেখাচ্ছে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা।
শেয়ার করুন
