সবজির বাজারে অস্বস্তি, ডিমের ডজন কমলেও বেড়েছে মুরগির দাম

অর্থনীতি ও বানিজ্য

অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার আড়াই মাস পার হতে চললেও স্বস্তি ফেরেনি নিত্যপণ্যের বাজারে। সরবরাহ সংকটের অজুহাতে শাক-সবজিসহ নিত্যপণ্যের বাজারে দামের বড় উল্লম্ফন ঘটেছে। ডিমের দাম সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখার জন্য বেশকিছু উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। তার সুফলও দেখা যাচ্ছে বাজারে। বাজারে কমতে শুরু করেছে ডিমের দাম। তবে ডিমের দাম কমলেও এবার অস্বাভাবিকভাবে বাড়ছে মুরগির দাম। সোনালি মুরগির দাম কেজিতে বেড়েছে ৫০ টাকা পর্যন্ত।

নিত্যপণ্যের এই বাড়তি দামের চাপ সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে সাধারণ মানুষ। নিম্ন আয়ের মানুষ শুধু নয়, মধ্যবিত্তরাও সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছে।

অন্যদিকে বাজারে কিছুটা কমেছে কাঁচামরিচের ঝাল। পাশাপাশি সামান্য কমলেও সবজির দাম এখনো সাধারণ মানুষের স্বস্তির মধ্যে আসেনি। শুক্রবার (১৮ অক্টোবর) সকালে রাজধানীর বিভিন্ন বাজারের চিত্র এমন।

বাজারে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে বেশ আলোচনায় ছিল ডিম। বিশেষ করে চলতি সপ্তাহে প্রতি ডজন ডিমের দাম ১৮০ টাকা পর্যন্ত উঠেছিল। তবে এ দাম এখন বড়বাজারে ১৫০ টাকায় নেমেছে। যদিও পাড়া-মহল্লায় ব্যবসায়ীদের মধ্যে কেউ কেউ এখনো ডিম বিক্রি করছেন ১৬০ টাকায়। সরকার এরমধ্যে ডিমের শুল্কছাড়, আমদানির অনুমতি এবং বেঁধে দেওয়া দামে ডিম বিক্রি করতে ব্যবসায়ীদের কঠোর নির্দেশনা দিয়েছে। যার সুফল মিলছে বলে জানিয়েছেন খুচরা বিক্রেতারা।

ব্যবসায়ীরা বলেন, বাজারে সরকারের বিভিন্ন সংস্থার নিয়মিত অভিযান এবং খামারি ও করপোরেটদের ডিম সরবরাহ বাড়ানোর কারণে দাম কমে আসছে। তাছাড়া শুল্কছাড়ের সঙ্গে সরকার নতুন করে আরও সাড়ে ৪ কোটি ডিম আমদানির অনুমতি দিচ্ছে। এটিও দাম কমার পেছনে অনুঘটক হিসেবে কাজ করছে।

অপর দিকে, একই সময় বাজারে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগির দাম ১০ টাকা বাড়তে দেখা গেছে। এ মুরগির দাম আগের সপ্তাহেও বেড়েছিল। যা এখন বিক্রি হচ্ছে ২০৫ থেকে ২১৫ টাকা পর্যন্ত। যা দুই সপ্তাহ আগে ১৮০ টাকার মধ্যে ছিল। এদিকে, অস্বাভাবিকভাবে সোনালি মুরগির দাম কেজিপ্রতি প্রায় ৫০ টাকা বেড়ে ৩২০ থেকে ৩৩০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। যা গত সপ্তাহে ২৭০-২৮০ টাকা ছিল।

এদিকে মাসখানেক ধরে উত্তাপ ছড়ানো সবজির বাজারও রয়েছে কমতির দিকে। যদিও এখনকার দাম সাধারণ ক্রেতাদের জন্য মোটেই স্বস্তিদায়ক নয়। সরবরাহ সংকটের অজুহাতে কয়েক দিন আগে রাজধানীর বাজারে কাঁচা মরিচের কেজি ৬০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। তবে দাম কমে এখন খুচরায় ৩২০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। এ কয়টি পণ্যের দাম কমা ছাড়া বাকি সব সবজি এখনো চড়া দামেই বিক্রি হচ্ছে। গোল বেগুন মানভেদে কেজি ১৬০ থেকে ২০০ টাকা, লম্বা বেগুন ১২০ থেকে ১৪০ টাকা, ঢেঁড়স, পটোল মানভেদে ৯০ থেকে ১০০ টাকা, করলা ১২০ টাকা, বরবটি ১২০ থেকে ১৪০ টাকা, চিচিঙ্গা-ধুন্দল ১০০ টাকা, আলু ৬০ টাকা, পেঁপে ৫০ টাকা কেজি এবং প্রতি পিস লম্বা লাউ ৮০ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

এদিকে পাইকারি বাজার থেকে খুচরা বাজারে বিভিন্ন ধরনের সবজির দামে কেজিপ্রতি পার্থক্য দেখা গেছে ২০ থেকে ৬০ টাকা পর্যন্ত। গতকাল কারওয়ান বাজারে খুচরায় প্রতি কেজি করলা ৮০ টাকা, চিচিঙ্গা, ঢেঁড়স ও পটোল ৬০ থেকে ৭০ টাকা, গোল বেগুন মানভেদে ১২০ থেকে ১৬০ টাকা, কাঁচা মরিচ ২৪০ থেকে ২৬০ টাকা, লম্বা লাউ প্রতি পিস ৬০ টাকা, টমেটো ১৬০ থেকে ১৮০ টাকা কেজি বিক্রি হয়।

এদিকে চলতি সপ্তাহে তেল ও চিনিতেও শুল্কছাড় দিয়েছে নতুন সরকার। কয়েকজন খুচরা ব্যবসায়ী জানান, শুল্ক কমানোর খবরে পাইকাররা তেল ও চিনির দরে কিছুটা ছাড় দিচ্ছে। তবে ভোক্তারা শুল্কছাড়ের সুফল পেতে কিছু দিন সময় লাগবে। চিনির দর নতুন করে বাড়েনি। বরং এক সপ্তাহে পাইকারিতে বস্তায় (৫০ কেজি) ১০০-২০০ টাকার মতো কমেছে। দুই-তিন দিনের মধ্যে এসব পণ্যের খুচরা দাম কমে আসবে বলে আশা করা যাচ্ছে।

বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, কৃষক থেকে ভোক্তা পর্যায়ে সবজির চড়া দামের কারণ সরবরাহ ঘাটতি ও বারবার হাতবদল। উৎপাদন পর্যায়ের চেয়ে ভোক্তা পর্যায়ে পৌঁছাতে দাম কয়েক গুণ বাড়ছে।

লাল শাকের আঁটি ২৫ টাকা, লাউ শাক ৫০ টাকা, মুলা শাক ২৫ টাকা, কলমি শাক ২০ টাকা, পুঁই শাক ৪০ টাকা এবং ডাঁটা শাক ৩০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে। বাজারগুলোতে সপ্তাহ ব্যবধানে দেশি পেঁয়াজ কেজিতে ৫ টাকা বেড়ে ১২৫ টাকা, আদা ৩২০ টাকা, রসুন ২২০ টাকা, নতুন আলু ১২০ টাকা, বগুড়ার আলু ১০০ টাকা ও পুরোনো আলু ৬০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।

বাজারের সবজি বিক্রেতা বলেন, ‘বাজারে সবজির সরবরাহে সংকট আছে, এ কারণে দাম তেমন কমছে না। তবে কাঁচা মরিচ ও টমেটোর দাম অনেকটাই কমেছে। বাজারে সরবরাহ বাড়লে সবজির দাম কমতে থাকবে। এছাড়া ভাড়া, প্রায় ২৫ শতাংশ পণ্য পচে যাওয়া এবং ইজারাদারদের বাড়তি টাকা দিতে গিয়ে খরচ বেড়ে যায়। এ কারণে পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে দামে বড় ব্যবধান তৈরি হয়।

এদিকে অন্তর্বর্তী সরকার উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে ঋণের সুদহার বাড়ানোসহ নানা পদক্ষেপ নিয়েছে। চলমান ডলার সংকটের মধ্যেও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানিতে জোর দেওয়া হয়েছে। পেঁয়াজ, আলু, ডিম, চিনি ও ভোজ্য তেল আমদানিতে শুল্ক কমানো হয়েছে। ভারত থেকে ডিম আমদানি শুরু হয়েছে। ডিম ও মুরগির দাম বেঁধে দেওয়া, চাঁদাবাজি রোধে নানা উদ্যোগ, টিসিবির মাধ্যমে খোলাবাজারে পণ্য বিক্রি বাড়ানো এবং পণ্য উৎপাদন ও সরবররাহ নিশ্চিত করতে সহযোগিতাসহ বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। তার পরও বাজারে স্বস্তি ফিরছে না।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *