সম্প্রতি লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহপ্রধানের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। এক বিবৃতিতে গোষ্ঠীটি জানিয়েছে, হিজবুল্লাহ শেখ নাইম কাসেমকে প্রধান হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে। মঙ্গলবার (২৯ অক্টোবর) কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
গত সেপ্টেম্বর মাসে ইসরায়েল লেবাননের রাজধানী বৈরুতে ব্যাপক আগ্রাসন চালানো শুরু করে। ২৭ সেপ্টেম্বর বৈরুতের দক্ষিণ শহরতলিতে এক ইসরায়েলি হামলায় হিজবুল্লাহর তৎকালীন প্রধান সাইয়েদ হাসান নাসরুল্লাহ নিহত হন। তাঁর পাশাপাশি আরও বেশ কয়েকজন শীর্ষ নেতা ও কমান্ডার ইসরায়েলি হামলায় নিহত হন।
নাঈম কাসেমকে সেক্রেটারি জেনারেল হিসেবে নিয়োগ দিয়ে হিজবুল্লাহ এক বিবৃতিতে বলেছে, হিজবুল্লাহর নীতি ও লক্ষ্যগুলোর প্রতি একনিষ্ঠ আনুগত্যের জন্যই নাঈম কাসেমকে এই পদে নির্বাচিত করা হয়েছে। এতে আরও বলা হয়েছে, আমরা আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করছি যেন তিনি তাঁকে হিজবুল্লাহ ও তাঁর ইসলামি প্রতিরোধ আন্দোলনের এই মহৎ মিশনে পরিচালনা করতে পারেন।
শেখ নাঈম কাসেম ১৯৫৩ সালে লেবাননের রাজধানী বৈরুতে জন্মগ্রহণ করেন। তার পারিবারিক ইতিহাস খুব একটা জানা যায় না। নাঈম কাসেম তার রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড শুরু করেন লেবানিজ শিয়া আন্দোলন শিয়া আমল মুভমেন্টের সঙ্গে। পরে ১৯৭৯ সালে তিনি শিয়া আমল মুভমেন্ট ছেড়ে দেন। এর পর ইরানে ইসলামি বিপ্লবের পর তিনি নতুন করে ভাবতে শুরু করেন।
ইরানের ইসলামপন্থী সরকার ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়ার পর দেশটির বিপ্লবী গার্ড বাহিনী (আইআরজিসি) লেবাননে হিজবুল্লাহ সৃষ্টিতে সহায়তা করে। লেবাননে ১৯৮২ সালে ইসরায়েলি আগ্রাসনের মুখে গঠিত হয় হিজবুল্লাহ। শেখ নাঈম কাসেম শুরু থেকেই এর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।
হাসান নাসরুল্লাহ জীবিত থাকাকালেই ৭১ বছর বয়সী নাঈম কাসেমকে হিজবুল্লাহর ‘দ্বিতীয় শীর্ষ নেতা’ হিসেবে উল্লেখ করা হতো। তিনি ১৯৮০-এর দশকের গোড়ার দিকে গোষ্ঠীটির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ধর্মীয় পণ্ডিত। নাঈম কাসেম ১৯৯১ সালে সশস্ত্র গোষ্ঠীটির তৎকালীন সেক্রেটারি জেনারেল আব্বাস আল-মুসাভির আমলে হিজবুল্লাহর উপপ্রধান হিসেবে নিযুক্ত হন।
মুসাভি পরের বছর ইসরায়েলি হেলিকপ্টার হামলায় নিহত হন। মুসাভি নিহত হওয়ার পর সাইয়েদ হাসান নাসরুল্লাহ হিজবুল্লাহর প্রধান হন। বয়সে নাসরুল্লাহর চেয়ে বড় হলেও গোষ্ঠীটির ডেপুটি হিসেবেই থেকে যান নাঈম কাসেম।
লেবাননে ১৯৯২ সালে যে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় সেই নির্বাচনে হিজবুল্লাহর হয়ে নির্বাচন পরিচালনা করেন শেখ নাঈম কাসেম। তিনি দলের মুখপাত্র হিসেবেও কাজ করেছেন দীর্ঘদিন। ইসরায়েলের হিজবুল্লাহর চলমান সংঘর্ষের মধ্যেই তিনি প্রায়ই বিদেশি গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেছেন।
শেখ নাঈম কাসেম ২০০৫ সালে হিজবুল্লাহর ইতিহাস নিয়ে একটি বই লিখেন। বইটির নামের ইংরেজি অর্থ করলে দাড়ায় ‘ইনসাইডারস লুক’। হিজবুল্লাহর এই নতুন প্রধান সাদা পাগড়ি পরিধান করেন। তার দুই পূর্বসূরি নাসরুল্লাহ ও সাইফুদ্দিন কালো পাগড়ি পরলেও তিনি সে পথে হাঁটেননি।
শেয়ার করুন