র‍্যাগিং করলে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার

জাতীয়

র‍্যাগিংয়ের বিরুদ্ধে শূন্য সহিষ্ণু নীতি অবলম্বন করেছে দিনাজপুরের হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (হাবিপ্রবি)। এ লক্ষ্যে ২০২১ সালে গঠিত নীতিমালা অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

ক্যাম্পাসের বিভিন্ন চত্বর, আবাসিক হল, একাডেমিক ভবন ও ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে রাস্তাগুলোতে র‍্যাগিং বিরোধী পোস্টার লাগানো হয়েছে। নবীন শিক্ষার্থীদের প্রথম ক্লাসে  র‍্যাগিং বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কঠোর অবস্থানের কথা জানান দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. এনামউল্যা। হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে তিনি বলেন,  হাবিপ্রবিতে র‍্যাগিং এর কোন স্থান নেই। এ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে র‍্যাগিং চিরতরে বিলীন করা হবে। কেউ র‍্যাগিং এর সাথে জড়িত থাকলে তদন্ত সাপেক্ষে তার বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রচলিত আইনে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান উপাচার্য।

গত বছর র‍্যাগিংয়ের দায়ে দিনাজপুরের হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (হাবিপ্রবি) বহিষ্কারের সংখ্যা দশকের ঘর অবধি পৌঁছায়।

যাগিং মূলত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নতুন শিক্ষার্থীদের উপর পুরানো শিক্ষার্থীদের কর্তৃক চালানো একটি নেতিবাচক ও অপ্রীতিকর আচরণ। এটি একটি অপ্রত্যাশিত প্রক্রিয়া, যেখানে নবাগতদের মানসিকভাবে অথবা শারীরিকভাবে হয়রানি করা হয়। বিভিন্ন সময়ে র‌্যাগিংয়ের নামে তাদের বিব্রতকর প্রশ্ন করা, অসম্মানজনক আচরণ এবং কখনো কখনো শারীরিক নির্যাতনের ঘটনাও ঘটে থাকে। শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্য ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিবেশের উপর এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। তাই র‌্যাগিং বন্ধে বিভিন্ন দেশে কড়া আইন ও শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে এবং সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে একটি নিরাপদ ও বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশ নিশ্চিত করার প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে।

শিক্ষাবিদ ও মনোবিজ্ঞানীদের মতে, র‌্যাগিংয়ের প্রভাব শিক্ষার্থীদের মানসিক ও সামাজিক জীবনে গুরুতর প্রভাব ফেলে। মানসিকভাবে এটি শিক্ষার্থীদের মধ্যে ভয়, উদ্বেগ এবং হতাশা সৃষ্টি করে, যা তাদের স্বাভাবিক শিখন প্রক্রিয়ায় বাধা হয়ে দাঁড়ায়। বিশেষ করে নবাগত শিক্ষার্থীরা প্রথমেই এক ধরনের নিরাপত্তাহীনতার শিকার হন, যা তাদের আত্মবিশ্বাস হ্রাস করতে পারে।

র‌্যাগিংয়ের কারণে কিছু শিক্ষার্থীর মধ্যে দীর্ঘমেয়াদি মানসিক সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে, যেমন পোস্ট-ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডার (PTSD), বিষণ্নতা, এবং আত্মহত্যার প্রবণতা। এই ধরনের হয়রানি অনেক সময় সামাজিক বিচ্ছিন্নতা সৃষ্টি করে। কারণ ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা নিজেদের বন্ধুবান্ধব ও সমবয়সীদের থেকে দূরে সরিয়ে নিতে চায়। এছাড়াও, কিছু ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীরা তাদের পড়াশোনায় আগ্রহ হারিয়ে ফেলে এবং মাঝপথেই শিক্ষা ছেড়ে দেয়।

এর একটি খারাপ উদাহরণ হলো হাবিপ্রবি। র‍্যাগিংয়ের কারণে বিগত বছরগুলোতে দেখা যায়, ৪ বছরে ৪ জন হাবিপ্রবি থেকে চলে যান। গত বছরের ২৬ ফেব্রুয়ারি যা নিয়ে ইত্তেফাকে একটি রিপোর্ট প্রকাশিত হয়।

মনোবিজ্ঞানীদের মতে, র‌্যাগিংয়ের মাধ্যমে অপরাধ প্রবণতার একটি সংস্কৃতি তৈরি হয়। নতুন শিক্ষার্থীদের উপর এই প্রভাব পরবর্তীতে তাদের মধ্যেই একটি সহিংস প্রবণতা তৈরি করতে পারে, যা আবার পরবর্তীতে তাদের মধ্যেই স্থায়ী হতে পারে। এবং এটি চেইন আকারে কাজ করে। অন্যকে নিজের দাস বানানোর মনোবৃত্তি কাজ তাদের ভেতরে।

শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম. এনামউল্যা বলেন, র‍্যাগিং নামক অপসংস্কৃতি দেশের শিক্ষাঙ্গনে মারাত্মকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। যা সত্যি বেদনাদায়ক। অথচ বিশ্ববিদ্যালয় হল মুক্ত জ্ঞানচর্চার জায়গা। যেখানে একজন নবীন শিক্ষার্থী শুরুতেই র‍্যাগিংয়ের নামে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছে। যা আমাদের কাম্য নয়।

হাইকোর্টের নির্দেশনা মোতাবেক ২০২১ সালে একটি র‍্যাগিং প্রতিরোধ ও প্রতিকার নীতিমালা তৈরি করে বিশ্ববিদ্যালয়। সেখানে র‍্যাগিংয়ের সাথে কেউ জড়িত থাকলে বিভিন্ন শাস্তির আওতায় আনার কথা বলা হয়েছে। যেমন: সতর্কতা, বিভিন্ন মেয়াদে শিক্ষা কার্যক্রম হতে সাময়িক বহিষ্কার, শিক্ষা কার্যক্রম হতে স্থায়ী বহিষ্কার, আবাসিক হল হতে সাময়িক ও প্রয়োজনে স্থায়ী বহিষ্কার এবং ঘটনার গুরুত্ব বিবেচনা করে প্রচলিত ফৌজদারি কার্যবিধি অনুযায়ী আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী বরাবর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রেরণ ইত্যাদি।

র‍্যাগিংয়ের বিষয়ে নিজেদের কঠোর অবস্থানের কথা জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. সামসুজ্জোহা বলেন, উপাচার্য স্যারের সুস্পষ্ট নির্দেশনা আছে। সেই আলোকে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হল এবং মেসগুলোতে মনিটরিং কার্যক্রম চালাচ্ছি। নবীন শিক্ষার্থীরা যাতে একটি ভয়হীন নিরাপদ ক্যাম্পাস পায় সেই লক্ষ্যে প্রক্টরিয়াল টিম সবসময় তৎপর আছে। র‍্যাগিং কোনো অবস্থাতেই কাম্য নয়। আমরা সবাইকে এ ব্যাপারে সচেষ্ট থাকার অনুরোধ জানাচ্ছি।

 

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *