কুলাউড়া পৌরসভায় সেবা পেতে নাগরিকদের ভোগান্তি, সনদ পেতে সময় লাগে ৫-৬ দিন

মৌলভীবাজার

কুলাউড়া (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধিঃ

মৌলভীবাজারের কুলাউড়া পৌরসভা কার্যালয় থেকে ১৪ ধরনের নাগরিক সেবা দেওয়া হয়। এর মধ্যে অন্যতম সেবা হচ্ছে জন্ম, নাগরিক ও মৃত্যুর নিবন্ধন। এছাড়া চারিত্রিক, উত্তরাধিকারী, আয়, পারিবারিক সদস্য, বয়স্ক ও প্রতিবন্ধী ভাতার সত্যায়িত সনদও দেওয়া হয়। পাশাপাশি বিভিন্ন প্রত্যয়ন, অনাপত্তিপত্র (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে), জাতীয় পরিচয়পত্র ও ভোটার তালিকায় যাচাইকারী হিসেবে স্বাক্ষর দিতে হয় কাউন্সিলরকে। নিয়মিত কাজের অংশ হিসেবে মশক ও পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের কাজের তদারকি এবং টিসিবির পণ্য বিতরণের কাজও পরিচালিত হতো কাউন্সিলরদের মাধ্যমে। কিন্তু গত ৫ আগস্ট আওয়ামীলীগ সরকারের পতনের পর পরই সারাদেশের ন্যায় কুলাউড়া পৌরসভার মেয়র-কাউন্সিলরদের অপসারণ করে সরকার। এদিকে কাউন্সিলর না থাকায় উপজেলা প্রশাসনের বিভিন্ন কর্মকর্তাদের কাউন্সিলরের নাগরিক সেবা নির্দেশ দিয়েছে সরকার।

এদিকে কাউন্সিলররা না থাকায় টিসিবি পণ্য বিতরণেও নানা অনিয়ম হচ্ছে। আগে টিসিবি পণ্য বিতরণের জন্য কাউন্সিলররা ওয়ার্ডের সকল কার্ডধারী উপকারভোগীদের জানাতেন। বর্তমানে ওয়ার্ডের অনেক কার্ডধারী নাগরিক জানেন না কোনদিন টিসিবি পণ্য বিতরণ হচ্ছে।
সম্প্রতি পৌরসভা কার্যালয়ের সামনে পাওয়া যায় কয়েকজন সেবাগ্রহীতাকে। বেশির ভাগই এসেছেন জন্মনিবন্ধন সনদ নিতে। অন্যদিকে আরো অনেকে নাগরিকত্ব সনদ, উত্তরাধিকার সনদ এবং বয়স্ক ও বিধবা ভাতার প্রত্যয়নপত্রের জন্য অপেক্ষা করছিলেন।
নাগরিক সেবা নিয়ে কথা হয় কুলাউড়া পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের স্টেশন রোডের বাসিন্দা মৌসুমী আক্তারের সাথে। তিনি জানান, আমার স্বামী সায়েম মাহমুদ বর্তমানে ফ্রান্সে বসবাস করছেন। তার পুলিশ ক্লিয়ারেন্সের জন্য নাগরিক সনদের প্রয়োজন পড়লে পৌরসভায় যাই গত ৯ অক্টোবর। তখন পৌরসভা থেকে বলা হয়, ৫ নম্বর ওয়ার্ডের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কুলাউড়া থানার ওসি মো. গোলাম আপছারের সাথে যোগাযোগ করতে। কয়েকদিন ঘুরার পর থানায় গিয়ে ওসির কার্যালয়ে গিয়ে স্বাক্ষর নেয়ার পর ৬ দিন পর নাগরিক সনদ হাতে পাই।
ইমন আহমদ নামে এক ব্যবসায়ী বলেন, আমার আত্মীয় এক প্রবাসীর জরুরী প্রয়োজনে জন্মনিবন্ধন সনদের জন্য পৌরসভায় যাই। পৌরসভা থেকে বলা হয়, ৪ নম্বর ওয়ার্ডের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা মো. আব্দুল বাকির সাথে যোগাযোগ করতে। উনার অফিসে গেলে স্বাক্ষর নেওয়ার পর পৌরসভায় জমা দেই। পৌরসভা কর্তৃক বলা হয়, ওই প্রবাসীকে শনাক্ত করতে উনার বাসার ট্যাক্সের কপিসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে আসার জন্য। সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের কাউন্সিলর না থাকার কারণে ওই প্রবাসীর জন্মনিবন্ধন সনদ পেতে বিলম্ব হচ্ছে।
পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা সুরমান মিয়া ও সোনিয়া বেগম বলেন, গত রোববার দুপুর ১টার দিকে আমি হঠাৎ খবর পাই পৌরসভায় টিসিবি পণ্য বিতরণ হচ্ছে। দৌঁড়ে পৌরসভায় যাই। সেখানে গিয়ে ডিলারকে পণ্য দেওয়ার কথা বললে পণ্য শেষ হয়ে গেছে বলেন। বিগত দিনে কাউন্সিলর থাকাবস্থায় মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে বলা হতো এবং পৌরসভার ফেসবুক পেইজে টিসিবি পণ্য বিতরণের বিষয়টি জানানো হতো। কিন্তু কাউন্সিলর থাকাবস্থায় কোনদিনই টিসিবি পণ্য না নিয়ে বাড়ি ফিরিনি।
সাবেক পৌর কাউন্সিলররা বলেন, ‘আগে এক দিনে জন্মনিবন্ধন সনদ দিয়ে দিতাম। এখন লাগে এক সপ্তাহ। নাগরিকত্বের সনদ দিতে আগে লাগত পাঁচ মিনিট, এখন লাগে পাঁচ-ছয় দিন।’ এছাড়া টিসিবি পণ্য বিতরণ হলে আমরা ওয়ার্ডের কার্ডধারী সকল নাগরিকদের জানিয়ে দিতাম। কিন্তু এখন টিসিবি পণ্য বিতরণে নানা অনিয়ম হচ্ছে। সঠিক তদারকি না থাকায় যে যার মতো করে পণ্য নিচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, একজন সরকারি কর্মকর্তা তাঁর দপ্তরের কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকতে হয়। তারপরও নতুন করে দেয়া হয়েছে কাউন্সিলরের দায়িত্ব। তিনটি সংরক্ষিত ওয়ার্ডের কাগজপত্রে স্বাক্ষর করতে হচ্ছে। অন্যান্য দাপ্তরিক কাজ তো রয়েছেই। দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার কাছে এসে কেউ বিভিন্ন ধরণের সনদ চাইলে সেটি পৌর প্রশাসকের কাছে পাঠানো হচ্ছে। সেখানে স্বাক্ষর হয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার কাছে সেই সনদ ফিরে আসতে ৫-৬দিন সময় লেগে যাচ্ছে। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন পৌরবাসী।
পৌরসভায় সেবা নিতে আসা নাগরিকদের অভিযোগ, জন্ম-মৃত্যু, নাগরিকত্ব সনদসহ ১৪টি সনদ সহজে পাওয়া এখন দুষ্পাপ্য হয়ে পড়েছে। আগে কাউন্সিলর থাকতে দ্রুত সময়ের মধ্যে সেবা পাওয়া যেত। বর্তমানে সেবা প্রদানের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে উপজেলা প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তাদের। যারা কিনা পৌরসভার নাগরিকদের ভালো করে চিনেন না। এজন্য বিভিন্ন সনদ নিতে এক সপ্তাহ পর্যন্ত সময় লাগছে।
দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা বলছেন, বিভিন্ন কারণে নাগরিক সেবা দিতে বিলম্ব হচ্ছে। বড় কারণ হলো, ওয়ার্ডের নাগরিকদের তথ্য যাচাই। কাজটি করতে অনেক ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। যাচাইকারী হিসেবে আগে কাউন্সিলররা স্বাক্ষর করতেন, এখন সেটি আমাদের করতে হচ্ছে।
এ বিষয়ে পৌর নির্বাহী কর্মকর্তা শরদিন্দু রায় বলেন, বর্তমানে কাউন্সিলর না থাকায় কিছুটা সেবা পেতে বিলম্ব হচ্ছে এটা অস্বীকার কোন উপায় নেই। তারপরও বর্তমান প্রশাসক মহোদয়ের দিক নির্দেশনায় নাগরিকদের দ্রুত সেবা দিতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আগে কাউন্সিলর থাকতে দ্রুত সেবা দেয়া হয়েছিল কিন্তু এখন নাগরিকদের শনাক্ত করে সেবা দিতে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের কিছুটা সময় লাগছে।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *