যদিও গত দু’দিন ধরে বিভিন্ন সূত্রের বরাত দিয়ে গণমাধ্যমে গ্রেফতার হওয়া নেতাদের বিরুদ্ধে ‘ধর্ষণ,গাড়ি ভাঙচুর, লুট ও অবৈধ অনুপ্রবেশের’ মামলা রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়।
এ ব্যাপারে ভারতের মেঘালয়ে অবস্থানরত আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল মঙ্গলবার রাতে জানিয়েছেন, যে ঘটনায় আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের চার নেতাকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে- এ বিষয়ে থানায় রেকর্ড হওয়া মামলার এজাহারে তাদের কারও নাম নেই। সন্দ্ধিগ্ধ হিসেবে তাদের গ্রেফতার করা হয়। মঙ্গলবার মেঘালয়ের আদালতে তাদের জামিন শোনানির কথা ছিল, কিন্তু শুনানি হয়নি। অবশ্য আজ বুধবার সে দেশের আদালতে তাদের হাজির করে জামিন আবেদন করা হবে।
এ প্রশ্নের জবাবে শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল বলেন, ভারতে আমরা বৈধভাবে অবস্থান করছি। আওয়ামী লীগ নেতাদের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে, এর কোনো সত্যতা নেই। যে কারণে সে দেশের পুলিশও বিষয়টি গভীরভাবে তদন্ত করছে। আশাকরি আমরা ন্যায় পাব। গ্রেফতার হওয়া নেতারাও মুক্তি পাবেন।
এদিকে মেঘালয়ের ডাউকি পুলিশ স্টেশনে দায়েরকৃত মামলার এজাহারের কপি হস্তগত হয়েছে। অভিযোগ পর্যালোচনা করে দেখা যায়, গত ১৬ অক্টোবর দায়েরকৃত মামলার বাদি ওয়েস্ট জৈন্তা হিলস ট্রাক মালিক সমিতির সভাপতি ইউ হেনরি মানার। মামলায় তার গাড়ি ভাঙচুর ও লুটপাটের অভিযোগ এনে অজ্ঞাত আসামি করে মামলা দায়ের করেন। মামলার এজাহারে গ্রেফতার হওয়া আওয়ামী লীগের চার নেতাতো দূরের কথা কোনো আসামিরই নাম উল্লেখ করা হয়নি।
এজাহারে বর্ণনা অনুযায়ী, চলতি বছরের ১৬ অক্টোবর বেলা দেড়টার দিকে তার দু’টি ট্রাক (এম এল০৪-এ ৫২১২ এবং এমএল০৪ বি ৪১০৯) ভাঙচুর, লুটপাট ও চালককে মারধরের অভিযোগ আনা হয়। এতে অজ্ঞাত বাংলাদেশী নাগরিকও জড়িত থাকার থাকার কথা উল্লেখ করা হয়।
ডাউকি থানা পুলিশ ভারতীয় ন্যায় সংহিতার (বিএনএস) অধীন ১১৮(১) মিথ্যা বিবৃতি/মিথ্যা নথি ব্যবহার), ৩০৯ (৪) ও ৩১০ (২) (ডাকাতি, ছিনতাই), ৩২৪ (৪) (বিপজ্জনক অস্ত্র দ্বারা আঘাত করা) এবং ১৪ ফরেনার্স অ্যাক্ট ধারায় এ মামলাটি (কেস নম্বর ১৯(১০)/২৪) রেকর্ড করে।
এ মামলায় ডাউকি পুলিশ সন্দেহজনকভাবে সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সিলেট জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট নাসির উদ্দিন খান, সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের কার্যকরি কমিটির সদস্য ইলিয়াছ আহমদ জুয়েল, সিলেট মহানগর যুবলীগের সভাপতি আলম খান মুক্তি ও সিলেট মহানগর যুবলীগের সহ সভাপতি আব্দুল লতিফ রিপনকে শনিবার গভীর রাতে কলকাতা শহরের হাতিয়াড়া এলাকার একটি বাসা থেকে গ্রেফতার করে মেঘালয় পুলিশ। গ্রেফতারের পর দিন রোববার সাপ্তাহিক ছুটির দিনে বারাসাত কলকাতা জেলা দায়রা আদালতের বিশেষ ক্রিমিনাল আদালতে তাদের হাজির করা হয়। কিন্তু বিচারক উপস্থিত না থাকায় ভারতীয় আইন অনুযায়ী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে শিলংয়ের স্থানীয় আদালতে অপরাধীদের হাজির করা হবে এমন আশ্বাসে ট্রানজিট রিমান্ড না নিয়েই তাদের মেঘালয়ের জুওয়াই থানার উদ্দেশ্যে নিয়ে যায় পুলিশ। সোমবার রাত ১১টার দিকে তাদেরকে ডাউকির জুওয়াই থানায় নিয়ে আসা হয়। মঙ্গলবার সেখানকার আদালতে তাদের হাজির করা হয়।
এ সময় আইনজীবীর মাধ্যমে তাদের জামিনের আবেদন জানানো হলে আদালতে শুনানি হয়। আজ বুধবার আদালতে তাদের জামিন শুনানির দিন ধার্য্য করা হয়েছে।
ডাউকি থানা পুলিশের বরাত দিয়ে শিলং টাইমসের সাংবাদিক অঘোর পরাগ জানিয়েছেন, গ্রেফতার হওয়া চারজনসহ পাঁচ বাংলাদেশিকে ইতোমধ্যে পুলিশ মামলার বাদি মুখোমুখি করেছে। মামলার বাদি পুলিশকে জানিয়েছে, এই পাঁচ বাংলাদেশি নাগরিক তার মামলায় অভিযুক্ত নন। ঘটনার সময় অকূস্থলে তাদের কেউই ছিলেন না। বুধবার পুলিশ আসামিদের সঙ্গে মামলার বাদিকে আদালতে হাজির করবে বলে জানা গেছে।