হালনাগাদ শেষ হচ্ছে কাল, বাড়ি বাড়ি যাননি তথ্য সংগ্রহকারীরা

জাতীয়

নির্বাচন কমিশনের (ইসি) ঘোষিত সময় অনুযায়ী আগামীকাল সোমবার শেষ হচ্ছে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটারের তথ্য সংগ্রহের কাজ। কিন্তু শেষ সময়েও রাজধানীর অনেক এলাকায় বাড়িতে বাড়িতে যাননি ইসির নিযুক্ত তথ্য সংগ্রহকারীরা। গতকাল শনিবার পর্যন্ত ইসির কেউ বাড়িতে না আসায় আমার দেশ-এর কাছে অনেক ভোটার হওয়ার যোগ্য নাগরিক তাদের দুশ্চিন্তার কথা জানিয়েছেন।

তারা জানান, এবার হালনাগাদে তারা ভোটার না হলে দীর্ঘসূত্রতায় পড়তে পারেন। আরো জানান, যারা এখন পর্যন্ত ভোটার হয়েছেন বলে তারা জেনেছেন, সবাই তথ্য সংগ্রহকারীদের কাছে নিজ উদ্যোগে গিয়ে হয়েছেন। বাড়ি আসবেন তথ্য সংগ্রহকারীরা এটা ভেবেই তারা যোগাযোগ করেননি বলেও জানান বাদ পড়াদের কেউ কেউ।

আমার দেশ-এর পক্ষ থেকে সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে সত্যতা পাওয়া যায়। এলাকাবাসীর অভিযোগ, রাজধানীর বেশির ভাগ এলাকায় তথ্য সংগ্রহকারীরা বাড়ি বাড়ি আসেননি। উল্লেখযোগ্য এলাকার মধ্যে রয়েছে, ঢাকার আজিমপুর, বনশ্রী, ডেমরা, খিলগাঁও, মাদারটেক, মিরপুর এবং মানিকদি। রাজধানীর অন্যান্য এলাকার চিত্রও একই বলে জানা যায়।

ইসির সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ জানান, আমরা বিষয়গুলো দেখছি। দুশ্চিন্তা করার কারণ নেই। আমরা কমিশনের পক্ষ থেকে উদ্যোগ গ্রহণ করব, যাতে একজন ভোটারযোগ্য নাগরিক তালিকা থেকে বাদ না পড়েন।

ঢাকার লালবাগ রোড এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ ফারুক। তিনি আমার দেশকে জানান, তার পরিবারে চারজন ভোটারযোগ্য মানুষ রয়েছেন। তার ছোট ভাইয়ের পরিবারে আরো পাঁচ সব মিলিয়ে ৯ জন। তিনি বলেন, আমি জেনেছি, আগামী ৩ ফেব্রুয়ারি ভোটার তালিকা হালনাগাদের তথ্য সংগ্রহের কাজ শেষ হবে। এখনো তার বাড়ি কিংবা এলাকায় ভোটার কাজে নিংযুক্ত তথ্য সংগ্রহকারী কেউ আসেননি। এ বছর ভোটার হতে না পারলে তারা দীর্ঘসূত্রতার মধ্যে পড়ে যেতে পারেন বলে তার আশঙ্কার কথা জানান।

তিনি আরো জানান, এই ভোটার হওয়া উপলক্ষে স্থানীয় ওয়ার্ড কমিশনারের কার্যালয়ে চলছে সনদ বাণিজ্য। কোনো নাগরিক প্রত্যয়নের জন্য গেলে তার কাছ থেকে জনপ্রতি আদায় করা হচ্ছে ৫০০ টাকা। অথচ একটা প্রত্যয়নের সরকারি রেট মাত্র ৫০ টাকা। তার পরিবারের ৯ জনের জন্য প্রায় ৫ হাজার টাকা লাগবে বলে জানান তিনি।

আজিমপুরের বাসিন্দা সালাউদ্দিন ভুলু। তিনিও অভিযোগ করে বলেন, তার নিকটাত্মীয়ের দুজন সন্তান এবার ভোটার হবেন। কিন্তু তথ্য সংগ্রহকারী কেউ না আসায় এখনো ভোটার হতে পারেননি। এ নিয়ে ওই পরিবারটি উদ্বিগ্ন বলে তিনি জানান। দুজনের একজন মুসিফ মোস্তফা মাহির এবং অন্যজন ওয়াসিফ মোস্তফা শিশির বলে তিনি জানান।

আবু বকর সিদ্দিকের বাসা ক্যান্টনমেন্টের মানিকদি এলাকায়। তার বাসা কিংবা ভবনে তথ্য সংগ্রহকারী যাননি বলে জানান।

আর খিলগাঁও মাদারটেক এলাকায় থাকেন বেসরকারি ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার নাজমূল হাসান রিপন। তিনি জানান, ভোটার হালনাগাদ চলছে এ সংক্রান্ত কোনো প্রচার তার নজরে পড়েনি। পাশেই থাকা তার স্ত্রীর কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, ভোটার ফরম পূরণের জন্য কেউ তাদের বাসায় আসেননি।

উল্লেখ্য, ১৮ বছরে পদার্পণ করা নাগরিকদের ভোটার করার উদ্যোগ নিয়ে গত ২০ জানুয়ারি থেকে ৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত টানা ১৫ দিন বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য সংগ্রহের কর্মসূচি হাতে নিয়েছিল কমিশন। আগামীকাল সেই তথ্য সংগ্রহের কাজ শেষ হচ্ছে।

পরবর্তী কর্মসূচি হিসেবে ফর্ম পূরণ করা নতুন নাগরিকদের ছবি তুলে ভোটার নিবন্ধন করার কাজ শুরু হবে আগামী ৫ ফেব্রুয়ারি থেকে। এ কর্মসূচি চলবে ১১ এপ্রিল পর্যন্ত। এখন পর্যন্ত ১৮ লাখের মতো নতুন নাগরিকের তথ্য সংগ্রহ করেছে ইসি। কিন্তু বাড়ি বাড়ি না যাওয়ায় এখনো তালিকার বাইরে আছেন অনেক ভোটার হওয়ার যোগ্য নাগরিক।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *