সিলেটে ছাত্রলীগকে নিজ কার্যালয়ে অস্ত্র রাখার সুযোগ দেন এসপি মান্নান

সিলেট

জুলাই-আগস্টে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় সিলেটের পুলিশ সুপার ছিলেন সদ্য গ্রেফতার হওয়া আব্দুল মান্নান। আন্দোলনের সময় মান্নান তার নিজ কার্যালয়ে ছাত্রলীগকে অস্ত্রশস্ত্র রাখার সুযোগ দিয়েছিলেন।

গত শুক্রবার রংপুর রেঞ্জে সংযুক্ত পুলিশ সুপার আব্দুল মান্নানকে আটক করে রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ। পরে তাকে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশে নেওয়া হয়। রোববার সেখান থেকে সিলেটে নেওয়া হয়। বিকাল ৪টার দিকে হাজির করা হয় আদালতে। ১৫ মিনিটের মধ্যেই তাকে আদালত থেকে কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়।

২৫তম বিসিএস (পুলিশ) ক্যাডারের কর্মকর্তা আব্দুল মান্নান গত বছরের ১০ জুলাই সিলেট জেলার পুলিশ সুপার হিসেবে যোগদান করেন। এর আগে তিনি কুমিল্লার পুলিশ সুপার ছিলেন। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর ৪৮ দিনের মাথায় গত ২৭ আগস্ট তাকে বদলি করা হয়।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হামলা ও হত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগে সম্প্রতি গ্রেফতার চার পুলিশ কর্মকর্তার নানা অপকীর্তি একের পর এক বেরিয়ে আসছে। এর মধ্যে গ্রেফতার হওয়া সিলেটের সাবেক পুলিশ সুপার আব্দুল মান্নান সম্পর্কে জানা গেছে বিভিন্ন চাঞ্চল্যকর তথ্য। এসপি আব্দুল মান্নান ওসি পোস্টিংয়ে নিতেন ২০-৩০ লাখ টাকা। পুলিশ ফাঁড়িতে ইনচার্জ বদলিতে নিতেন ১০ লাখ টাকা। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় ছাত্রলীগকে নিজ কার্যালয়ে অস্ত্র রাখার সুযোগ দেন তিনি।

জুলাই-আগস্টে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় সিলেটের পুলিশ সুপার ছিলেন সদ্য গ্রেফতার হওয়া আব্দুল মান্নান। ৪ আগস্ট সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গুলিতে নিহত হন ৬ জন। ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর গোপনে সিলেট ছাড়েন এসপি মান্নান।

তার সম্পর্কে পুলিশের এক গোয়েন্দা প্রতিবেদনে উঠে আসে চাঞ্চল্যকর তথ্য। প্রতিবেদনে বলা হয়, আব্দুল মান্নানের কপাল খুলে যায় কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইমে (সিটিটিসি) বদলি হয়েই। সেখানে যোগদান করে মন জয় করে নেন সে সময়ের সিটিটিসির প্রধান মনিরুল ইসলামের। সে সময় গাজীপুরের কিছু লোকজন তার কাছে আসেন তাদের জমিজমার বিরোধ নিয়ে সমাধান চাইতে। কিন্তু তাদের কাছ থেকে কৌশলে হাতিয়ে নেন সেই জমি। সেখানেই গড়ে তোলেন ‘শালদহ ইকো-রিসোর্ট’। সঙ্গে নেন সরকারের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তাকে। যাদের অনেকেই এখন সচিব। সিটিটিসি থেকে মনিরুলের আশীর্বাদপুষ্ট মান্নান বাগিয়ে নেন কুমিল্লা জেলা পুলিশ সুপারের পদ। সেখানেও টাকা ছাড়া ওসি পোস্টিং দেননি তিনি।

প্রতিবেদন অনুযায়ী প্রতি থানায় ওসি পোস্টিং দিতে আব্দুল মান্নান হাতিয়ে নিয়েছেন ২০ থেকে ৩০ লাখ টাকা। ফাঁড়ির ইনচার্জ হিসাবে পোস্টিং দিতে নিয়েছেন ৮ থেকে ১০ লাখ টাকা। সবশেষ গুরু মনিরুলের ইচ্ছায় ২০২৪ সালের ২৩ জুন সিলেটের পুলিশ সুপার হিসাবে বদলি হন। এখানে এসেও তিনি ঘুস ছাড়া কোনো থানার ওসি পোস্টিং দেননি। সিলেটে যোগদানের পর থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত সিলেট জেলার জকিগঞ্জ ও কোম্পানীগঞ্জ থানায় ওসি পোস্টিং দিয়ে হাতিয়ে নিয়েছেন ৬০ লাখ টাকা।

এই গোপন প্রতিবেদনে বলা হয়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় তিনি ফোর্সকে সঠিক দিকনির্দেশনা প্রদান করেননি। ফলে ৪ আগস্ট পুলিশ আন্দোলনকারীদের কাছে অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। এ সময় ৬ জন আন্দোলনকারী গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান এবং ৩০ থেকে ৪০ জন আহত হন।

প্রতিবেদনে অভিযোগ আনা হয়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় তৎকালীন পুলিশ সুপার আব্দুল মান্নান তার নিজ কার্যালয়ে ছাত্রলীগকে অস্ত্রশস্ত্র রাখার সুযোগ দিয়েছিলেন। যে কারণে আন্দোলনকারীরা ক্ষুব্ধ হয়ে ৫ আগস্ট জেলা পুলিশের কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর চালায়। আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা দেশ ত্যাগ করার পর মাঠপর্যায়ের পুলিশ সদস্যদের কোনো প্রকার নির্দেশনা না দিয়ে আত্মগোপনে চলে যান মান্নান। যে কারণে পুলিশের বিভিন্ন স্থাপনায় ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ঘটনায় পুলিশ কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেনি।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *