সাত কোটি টাকার জব্দকৃত পাথর লুটের পরও প্রমোশন পেলেন গোয়াইনঘাট উপজেলার সাবেক নির্বাহী কর্মকর্তা তৌহিদুল ইসলাম। তিনি এখন কুমিল্লা জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (উন্নয়ন ও মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা)। খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় তার এই অনিয়মের তদন্ত করছে।
অভিযোগ রয়েছে, গোয়াইনঘাট উপজেলার বিছনাকান্দি পাথর কোয়ারিতে ৮টি মৌজায় ৯ লাখ ঘনফুট পাথর জব্দ করে স্থানীয় প্রশাসন। ট্রাস্কফোর্সের নেতৃত্বে ছিলেন সাবেক এই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। অভিযানে পাথর জব্দের বিষয়টি গণমাধ্যমেও প্রকাশিত, প্রচারিত হয়। এছাড়া অভিযানকালে পাথর বহনের দায়ে অসংখ্য ট্রাক ও বারকি নৌকা জব্দ দেখানো হয়।
অভিযোগে আরো জানা গেছে, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তৌহিদুল ইসলাম বদলী হওয়ার পূর্বে জব্দকৃত ৭ কোটি টাকা মূল্যের পাথর বিক্রি করে দিয়েছেন। বিক্রিত পাথরের টাকায় তিনি পদোন্নতি পেয়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক হিসেবে কুমিল্লা জেলা প্রশাসনে বদলী হয়ে যান বলেও জনস্রোতি রয়েছে।
উক্ত পাথরের ২ লাখ ৪৮ হাজার ৮০৯ ঘনফুট পাথর নিলামে বিক্রির পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেয় খনিজ সম্পদ ব্যুরো। বিজ্ঞপ্তির পর ২৬টি সিডিউল বিক্রি হয়। নিলামে অংশগ্রহনেচ্ছুকরা সোনালী ব্যাংকে ২ হাজার টাকা করে ফি জমা দিয়ে সিডিউল ক্রয় করেন।
সিডিউল কেনার পর নিলামে অংশগ্রহণকারীরা সরেজমিন গিয়ে দেখেন সিডিউলে উল্লেখিত ৮টি মৌজার মধ্যে কোনো পাথর নেই। তারা জানতে পারেন, জব্দকারী ইউএনও তৌহিদুল ইসলাম ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে বদলী হওয়ার আগে ৭ কোটি টাকার পাথর বিক্রি করে ভাগ-বাটোয়ারার মাধ্যমে আত্মসাত করে কুমিল্লা জেলায় চলে যান।
এছাড়া সাবেক নির্বাহী কর্মকর্তা তৌহিদুল ইসলাম প্রায় শতাধিক মানুষের সম্মুখে বিছানাকান্দি কোয়ারিতে ৮টি মৌজায় স্তুপকৃত ৯ লাখ ঘনফুট পাথর জব্দ করেন। যার বাজার মূল্য ৭ কোটি টাকা হবে বলে ধারণা করা হয়। পরে স্তুপকৃত পাথরের হিসাব না দিয়ে আত্মসাত করার কুমতলবে ২ লাখ ৪৮ হাজার ৮০৯ ঘনফুট পাথরের মিথ্যা প্রতিবেদন দিয়েছেন। ৭৫ টাকা ফুট হিসেবে ইউএনও কর্তৃক দেওয়া মিথ্যা তথ্যের ভিত্তিতে মূল্য দেখিয়েছেন এক লাখ ৮৬ হাজার ৬৭৫ টাকা ধায্যক্রমে নিলাম আহ্বান করা হয়। যে কারণে সিডিউল ক্রয় করে নিলামে অংশগ্রহণকারীরা যেমন প্রতারিত হয়েছেন, তেমনী সরকার হারিয়েছে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব। এই ঘটনায় স্থানীয়ভাবে তুলকালাম সৃষ্টি হয়। এ ইস্যুতে গোয়াইনঘাট উপজেলার ফেনাইকোনা গ্রামের মৃত মক্রমআলীর ছেলে মদরিছ আলী প্রধান উপদেষ্টা, বিদ্যুৎ জালানী ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়, দুদক চেয়ারম্যান, মন্ত্রী পরিষদ সচিব বরাবরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। অভিযোগে সরকারের কয়েক কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকি ও নিলামে অংশগ্রহণকারীরা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন দাবি করেন। এছাড়া প্রমাণ হিসেবে তারা জব্দকৃত পাথরের স্তুপ করে রাখার ছবিও বিভিন্ন লোকজন কর্তৃক খাস কালেকশনের আবদনের কপিও যুক্ত করে দেন।
এ বিষয়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) হোসাইন মো. আল জুনায়েদ বলেন, বালু পাথর জব্দকৃত কোনো তথ্য আমার কাছে নেই। মোবাইল কোর্ট সংক্রান্ত এসব তথ্য অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে থাকে।
অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ফারজানা আক্তার মিতা বলেন, আমার কাছেও এ সংক্রান্ত কোনো তথ্য নেই । আমরা যখনই কোনো পাথর জব্দ করি, তখন সাথে সাথে তা খনিজ সম্পদ অধিদপ্তরের কাছে হস্তান্তর করি। আর বালু জব্দ করা হলেও তা উপস্তিত মোবাইল কোর্ট সরেজমিন সমাধান করে আসেন।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে গোয়াইনঘাট উপজেলার সাবেক নির্বাহী কর্মকর্তা ও কুমিল্লা জেলা প্রশাসনের বর্তমান অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (উন্নয়ন ও মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা) তৌহিদুল ইসলামের মোবাইল নাম্বারে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।
শেয়ার করুন