সুনামগঞ্জের দিরাইয়ে জলমহালের মাছ লুটের মহা উৎসব

সুনামগঞ্জ

দিরাই উপজেলা প্রতিনিধিঃ

সুনামগঞ্জের দিরাইয়ে বেশ কয়েকটি জলমহালের মাছ লুটের মহা উৎসবে মেতে উঠার ঘটনা ঘটেছে। হাজার হাজার মানুষ মাছ লুট করে উল্লাস করতে দেখা গেছে।
রবিবার (২ ফেব্রুয়ারি) উপজেলার চরনারচর ইউনিয়নের হাতনী জয়পুর মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির (হাতনী বিল)ও রফিনগর ইউনিয়নের উদির হাওর মেঘনা বারঘর মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির (মেঘনা বিলে) এর প্রায় দেড় কোটি টাকার মাছ লুট করা হয়েছে বলে জানায় দুটি সমিতির সভাপতি সুধীর চন্দ্র দাস, সাধারণ সম্পাদক বিকাশ রঞ্জন দাস।

চরনারচর ইউনিয়নের হাতনী জয়পুর মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক বিকাশ রঞ্জন দাস বলেন, এই বিলটি সরকারের কাছে ছয় বছরের জন্য ইজারা নেওয়া হয়েছে। এবং প্রতি বছর ৮৬ লক্ষ্য টাকা রেন্ডট দিয়ে আসতেছি। তিনি বলেন, রবিবার ভোর রাত থেকে বেশ কয়েকটি গ্রামের ১০/১৫ হাজার মানুষ পলো, ছোট ছোট জাল, মাছ ধরার বিভিন্ন উপকরণ নিয়ে হাতনী বিলের মাছ লুটপাট করেছে ও বিলে থাকা বাঁশ খাঁঠা ভেঙে প্রায় দেড় কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। আমরা বাধা দিতে গেলে আমাদের তেরে আসে। নিষেধ অমান্য করে তারা বিলের মাছ লুট করে নিয়ে যায়। এখন আমি একেবারেই সর্ব শান্ত। আগামী বছর সরকারের রেন্ডট কইতাইক্কা দিমু।

এদিকে রফিনগর ইউনিয়নের উদির হাওর মেঘনা বারঘর মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির ৬০/৭০ লক্ষ টাকা ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানায় সমিতির সভাপতি সুধীর চন্দ্র দাস। তিনি আরও বলেন, বিভিন্ন গ্রামের লোকজন রবিবার ভোর ছয়টা থেকে বেলা এগারোটা পর্যন্ত বিলের মাছ লুট করে নিয়ে যায়। সরকারের কাছে ছয় বছরের জন্য এই জলমহাল ইজারা নিয়েছি এবং প্রতি বছর ৮৯ লক্ষ্য টাকা রেন্ডট দিয়ে আসতেছি। সুধীর চন্দ্র দাস আরও বলেন, বিলের মাছ লুট হওয়ায় আমাদের মাথায় বারি পরেছে। তিনি আরও বলেন, ১৯৭১ সালের যুদ্ধের সময়ও এমন বর্বরতা দেখি নাই।
এখন সরকারের রেন্ডট দিয়ে ভিটেমাটি বিক্রি করেও সরকারের রেন্ডট দেওয়া সম্ভব হবে না, এই ক্ষতি কিভাবে পোসাবো।

রবিবার(২ ফেব্রুয়ারি) সরজমিনে গিয়ে জানা যায়, গত শুক্রবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) সকাল ১০টায় বিভিন্ন গ্রামের হাজার খানেক মানুষ পলো, ছোট ছোট জাল, মাছ ধরার বিভিন্ন উপকরণ নিয়ে কামান বিলে মাছ শিকার করেন। এসময় কামান বিলের ইজারা প্রাপ্ত চরনারচর এবিএম মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির লোকেরা বাধা দিলেও তারা শুনেনি। এ ঘটনায় দেড় কোটি টাকার মাছ লুট হয়েছে বলে ধারনা সমিতির সদস্যদের। এদিকে ঘটনার পর থেকে গত শুক্রবার সারাদিন ও রাতে হাজার হাজার মানুষ সেখানে জড়ো হতে থাকে। শনিবার সকালে সেখানে প্রায় ২০ হাজারেরও বেশি মানুষ জড়ো হয় বলে স্থানীয়রা জানায়।

চরনারচর এবিএম মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক সুধির বিশ্বাস জানান, বিলটি ১৯৭ একর জায়গা জুড়ে। বিলের মাছ ধরতে পাঁচ মাস সময় লাগে। ৪০ জন জেলে দীর্ঘদিন ধরে পিছন দিক থেকে জাল দিয়ে বেড় দিয়ে দিয়ে ১ বিঘা জায়গার মধ্যে সমস্ত মাছ আটক করে নিয়ে এসেছে। তিন বছর ফাইল করে যে সমস্ত মাছগুলো ধরা হয় বিলের ওই অংশে এই বড় মাছগুলো ছিল। নির্দিষ্ট সময় ও পরিকল্পনা নিয়ে মাছ ধরতে হয়। আমরা এর আগে গত বুধবার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম শুক্রবারে মাছ ধরব। কিন্তু এলাকার ধর্মীয় অনুষ্ঠান কীর্তন থাকায় তারিখটা পিছিয়ে শুক্রবারে নেই। কিন্তু এর আগেই শুনতে পাই শ্যামারচর বাজারে নাকি কথা রটেছে, আগামীকাল কামনা বিলে পলো বাইচ হবে। আমরা তাদের বুঝানোর চেষ্টা করি। আমাদের একটা সপ্তাহ সময় দেবার অনুরোধ করি। কিন্তু তারা আমাদের কথা শুনেনি। স্থানীয়রা ও সমিতির সদস্যরা জানায় একটি প্রভাবশালী মহলের ইন্দনে জলমহালের মাছ লুটের মহা উৎসবে মেতে উঠেছে।

দিরাই থানার ওসি মুহাম্মদ আব্দুর রাজ্জাক বলেন, আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। হাজার হাজার মানুষ মাছ ধরে নিয়ে গেছে। এ ঘটনায় এখনও কোন মামলা করা হয়নি। মামলা হলে তদন্তক্রমে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *