নিজস্ব প্রতিবেদক:- সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার জাফলংয়ে সাবেক রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদের নাতি পরিচয়দানকারী কথিত সাংবাদিক হুমায়ুন আহমদকে নিয়ে শুরু হয়েছে গুঞ্জন।
সেই সাথে চায়ের দোকান থেকে শুরু সর্বত্র তাকে নিয়ে চলছে আলোচনা। রাতের আঁধারে ভারতীয় অবৈধ পণ্য চোরাচালান, দেশ থেকে ভারতে স্বর্ণ পাচারসহ সব কিছুর নিয়ন্ত্রক বলে অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে।
ইতিমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ কয়েকটি গনমাধ্যমে তার কর্মকান্ড নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করা হয়েছে।
সংবাদ মাধ্যম সুত্রে জানা যায়, জাফলং বাজারের অদূরে চৈলাখেল অষ্টমখন্ড গ্রামের ডাঃ আব্দুল কাদেরের ছেলে নিজস্ব বাসা থাকার পরও তিনি বাসায় না থেকে মামার বাজারের এক বস্তিতে রাত যাপন করেন।
এলাকার লোকজনের অভিযোগ, হুমায়ুন জাফলং এলাকার অঘোষিত চোরাচালান সম্রাট। তিনি রাতের আধারে তার বাহিনী নিয়ে ভারতীয় অবৈধ পণ্য চোরাচালান, ইসিএ ভুক্ত এলাকা থেকে পাথর উত্তোলনের চাঁদা আদায় করছেন বলেও কয়েকটি সুত্র নিশ্চিত করেছে।
লাইনম্যান নামে পরিচিত এই কথিত সাংবাদিক ৫ আগস্টের আগে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে অস্ত্র হাতে দেখিয়েছেন ক্ষমতার দাম্ভিকতা। ছাত্র-জনতা তার বাহিনীর কাছে হয়েছিলেন লাঞ্চিত ও আহত।

হুমায়ুনের ফেসবুক থেকে নেয়া
সুত্র জানায়, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট হাসিনা সরকারের পতন হলে এলাকা ছেড়ে আওয়ামিলীগের ধোসররা পালিয়ে গলেও হুমায়ুন ইসিএভুক্ত এলাকা থেকে পাথর লোটপাটে ছিলেন ব্যস্ত। তার নেতৃত্বে প্রায় ৫ কোটি টাকার পাথর লুট হয়েছে। তার এমন সাহসিকতার কারনে সবার মনে একি প্রশ্ন হুমায়ুনের খুটির জোর কোথায়?
সুত্র থেকে জানা যায়, সাবেক মন্ত্রী ইমরান আহমদের ঘনিষ্ট হওয়ায় হুমায়ুন জাফলং এলাকায় বেপরোয়া হযেছে উঠেন। তিনি নিজেকে সাবেক রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদের নাতী পরিচয় দিয়ে এলাকায় কায়পম করেন রাম রাজত্ব। মুলত তিনি একজন প্রতারক বলে স্হানীয়ভাবে জানা যায়।
তিনি মাইটিভির সংবাদদাতা, ইমরান আহমদের ঘনিষ্ট ও সাবেক রাষ্ট্রপতির নাতী এই ত্রিমুখি পরিচয়ে কামিয়েছেন লাখ লাখ টাকা। খোদ প্রশাসন তাকে সমিহ করে চলত। তার বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুললে রাতের আধারে মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার করিয়ে নিজে থানায় গিয়ে বাহাদুরি দেখাতেন।
পট পরিবর্তনের পর এখনও তারি বাহিনী পুরো জাফলং নিয়ন্ত্রণ করছে বলে জানা গেছে। অবৈধ পাথর উত্তোলন, ভারতীয় পণ্য চোরাচালান বাবত প্রতিদিন হুমায়ুনের বাহিনী কালেকশন করছে ৫ লক্ষাধিক টাকা। এসব চাঁদার টাকা তিনি পুলিশ, বিজিবি, সাংবাদিকের নামে উত্তোলন করেন বলে স্হানীয় সুত্র নিশ্চিত করে।
সোনার নৌকা উপহার:- কয়েক বছর আগে হুমায়ুন আহমদ রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদকে সোনার নৌকা উপহার দিয়ে তার আস্তাভাজন হয়েছিলেন। সেই সুযোগে রাষ্ট্রপতির কাছে তার যাওয়া আসা ছিল তার কাছে নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার।
পতিত ফ্যাসিস্ট সরকারের অনেক মন্ত্রী, এমপির সাথে ছবি তুলে তা ফেসবুকে আওলোড করতেন তিনি তার এসব ছবি এলাকার লোকজন দেখে ভয়ে হুমায়ুন আহমদের বিরুদ্ধে কেউ কোন অভিযেগ তুলতো না এমনকি গোয়াইনঘাটের প্রশাসনও সব সময় তাকে সমীহ করে চলতো।
তবে চতুর হুমায়ুন বর্তমানে আইনশৃংখলা বাহিনীর চোখকে ফাকি দিতে তার ফেসবুক থেকে আওয়ামিলীগের কর্তাব্যাক্তিদের সাথে তোলা সমস্হ ছবি ডিলিট করে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের পক্ষের শক্তিতে পরিণত হয়েছেন!
জানা যায়, অতিথে তার চাঁদাবাজীর একটি ভিডিও ভাইরাল হলে হুমায়ুন ক্ষনিকের জন্য পড়ে যায় বিব্রত অবস্থায়। ভাইরাল ভিডিওতে শোনা যায়, হুমায়ুন বলছে সে রাষ্ট্রপতির অতি কাছের লোক।

হুমায়ুন আহমদের ফেসবুক থেকে নেয়া
পুরো গোয়াইনঘাটের সাংবাদিক এক পাল্লায় আর সে এক পাল্লায়। তারপরও তার পাল্লা ভারী হবে।সাবেক রাষ্ট্রপতির নামে সে একজন চোরাচালান ব্যবসায়ীকে প্রতিদিন ১ লক্ষ টাকা চাঁদা দিতে বলে।
অনেকে এই ভিডিও ফেসবুকে শেয়ার করেছেন। এ নিয়ে হুমায়ুর আদালতে সাইবার মামলা করে। পরবর্তীতে চতুর হুমায়ুন মামলা মিথ্যা প্রমাণিত হবে বুঝতে পেরে বিবাদীদের কাছ থেকে কয়েক লক্ষ টাকা নিয়ে আদালত থেকে মামলা প্রত্যাহার করে নেয়।
সম্প্রতিও তার চাঁদাবাজির অনেক ছবি ও ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। এলাকাবাসী সুত্রে জানা যায়, জাফলং বল্লাঘাট জুমপাড় ও ইসিএ ভুক্ত এলাকায় পলাতক পতিত হাসিনা আমলের সাবেক রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদের নাতি পরিচয় দেওয়া মাইটিভির কথিত সাংবাদিক হুমায়ুন ও তার দুই সহযোগীর নেতৃত্বে চলছে পাথর লুটপাট।
থানা পুলিশ, ইউএনও, এসপি, ডিআইজির নাম ব্যবহার করে অন্যান্য পাথরের গর্ত থেকে প্রতিদিন ১৫ হাজার ও স্থানীয় সাংবাদিকদের মেনেজ করার জন্য প্রতি সাপ্তাহে ৫ হাজার টাকা চাদা উত্তোলন করছে।
পাথর কোয়ারী বালিবাড়ী মন্দিরের জুম পাড় তার নিয়ন্ত্রাধীন পাথরের গর্তের ছবি ও ভিডিওসহ বপশ কয়েকটি সংবাদপত্রে সংবাদ প্রকাশ হওয়ায় সাংবাদিকদের উপর ক্ষিপ্ত হয়ে অশালীন গালিগালাজ করে।
তার বড় ছেলে নিষিদ্ধ সংগঠন উপজেলা ছাত্রলীগের যগ্ন সম্পাদক। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র জনতার আন্দলনের সময় বাবা ছেলে মিলে ছাত্র জনতা নিধনে লাঠি হাতে রাস্তায় অবস্থান করার ভিডিও ফুটেজ ছবি অনেকের কাছে এখনও সংরক্ষিত রয়েছে।

হুমায়ুন আহমদের ফেসবুক থেকে সংগ্রহ
তিনি গত ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে রাষ্ট্রপতির দাপট ও দলের ক্ষমতা ব্যবহার করে সিলেটের সিনিয়র সাংবাদিকসহ স্থানীয় সাংবাদিকদের নামে তিনটি মিথ্যা মামলা দায়ের করেন। মানলাগুলি মিথ্যা প্রমাণিত হওয়ায় গোয়াইনঘাট থানায় রেকর্ড হয়নি। পরে আদালতে দাখিল করলে সাজানো মামলা বলে প্রমাণিত হয়।
এলাকাবাসী সুত্রে জানা যায়, কথিত সাংবাদিক হুমায়ুন নিজে চাদাবাজী ও নারী নির্যাতনসহ দুইটি মামলার আসামী।
ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসর চাদাবাজ, কথিত সাংবাদিক হুমায়ুনকে তদন্ত পূর্বক আইনের আওতায় আনার জোরদাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী। নতুবা এলাকাবাসী তার বিরুদ্ধে আন্দোলন করবেন বলেও জানা যায়।
হুমায়ুন আহমদের বিরুদ্ধে এসব অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে গোয়াইনঘাট থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তোফায়েল আহমদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি সংবাদ মাধ্যমে ঘটনা অবগত হয়েছি, কেউ লিখিত অভিযোগ দেয় নাই।
তিনি বলেন, হুমায়ুনের সাথে থানা পুলিশের কোন সম্পর্ক নাই। তিনি জানান, সংবাদ মাধ্যেমে হুমায়ুন আহমদের উপর আনিত অভিযোগের ব্যাপারে জাফলং বিট অফিসার ওবায়দউল্লাকে তদন্ত করার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে। প্রমান পাওয়া গেলে ব্যবস্হা নেয়া হবে।
এদিকে অভিযোগের সত্যতা জানতে হুমায়ুন আহমদের ফোনে কয়েকবার কল দেয়া হলেও তিনি তা রিসভ করেন নাই। যার কারনে তার কোন বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
শেয়ার করুন