সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন পদ্ধতি চালুর ওপর জোর দিয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কাছে সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে মতামত দিয়েছে জামায়াতে ইসলামী। গতকাল সকালে সংসদ ভবনে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কো-চেয়ারম্যান আলী রীয়াজের কাছে সংবিধান, নির্বাচন, বিচার বিভাগ, জনপ্রশাসন ও দুর্নীতি দমন কমিশনসহ মোট ৫টি কমিশনের সংস্কার প্রস্তাব সম্পর্কে তাদের মতামত জমা দেন দলটির সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার। জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ ও কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য মতিউর রহমান আকন্দ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
প্রস্তাব জমা দেয়ার পরে গোলাম পরওয়ার সাংবাদিকদের বলেন, জামায়াতে ইসলামী একটি সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের লক্ষ্যে সংস্কারের ওপর গুরুত্ব আরোপ করে আসছে। আমরা ৫টি বিষয়ের ওপর মতামত তুলে ধরেছি। কমিশনের প্রস্তাবের সঙ্গে কিছু কিছু ক্ষেত্রে আমরা একমত হতে পারিনি। আবার অনেক বিষয়েই একমত হয়েছি। আমরা ব্যাখ্যাসহ আমাদের বক্তব্য তুলে ধরেছি। আমরা সংখ্যানুপাতিক নির্বাচনের ব্যাপারে গুরুত্ব আরোপ করেছি। আমীরে জামায়াতসহ নেতৃবৃন্দ প্রয়োজনীয় সংস্কার সম্পন্ন করে দ্রুত একটি অর্থবহ নির্বাচন দেয়ার জন্য বার বার বলে আসছেন।
এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আমরা আশা করি, দ্রুত সময়ের মধ্যেই সংস্কার সম্পন্ন করে একটি অর্থবহ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কাজ শুরু করবে।
নির্বাচন নিরপেক্ষ করার ব্যাপারে জামায়াতে ইসলামী বেশ কিছু প্রস্তাব দিয়েছে বলে জানান মিয়া গোলাম পরওয়ার। প্রস্তাবে তারা বলেছেন, নির্বাচন হতে হবে সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে। দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদের বিষয়ে তারা একমত প্রকাশ করেছেন। তবে এ ক্ষেত্রে তাদের কিছু বক্তব্য আছে।
এর আগে এক ব্রিফিংয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, কাজের অগ্রগতি অবশ্যই জানানো হবে। তবে প্রতিদিন ব্রিফিং নাও হতে পারে, কিন্তু অবশ্যই কাজের অগ্রগতি জানানো হবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাদের ওপর কোনোরকম চাপ নেই। এ ক্ষেত্রে স্মরণ করিয়ে দেই জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রধান হলেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস, সে ক্ষেত্রে ঐকমত্য কমিশনের ওপর চাপের প্রশ্নই আসে না। রাজনৈতিক দলগুলো অবশ্যই তাদের অবস্থান বলবে। কিন্তু কমিশন হিসেবে আমাদের দায়িত্ব সংস্কার কমিশনগুলোর সুপারিশগুলো তুলে ধরা এবং তার পরিপ্রেক্ষিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করা।
আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিএনপি’র পক্ষ থেকে আমাদের জানানো হয়েছে দু’একদিনের মধ্যে তারা আমাদের মতামত জানাবেন। আমরা অপেক্ষা করছি, আশা করছি, দু’একদিনের মধ্যেই তারা মতামত জানাবে।
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সঙ্গে কবে আলোচনা হবে-এমন প্রশ্নের জবাবে আলী রীয়াজ বলেন, দলটির সঙ্গে দু-তিন দিনে বৈঠক হচ্ছে না। দলটির মতামত পাওয়া গেলে ঈদের পর থেকে অন্য যেসব দলের সঙ্গে তারা আলোচনা করবেন, তার মধ্যে এনসিপিও থাকবে।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গত ১৫ই ফেব্রুয়ারি কাজ শুরু করে। এতে সহ-সভাপতি হিসেবে আছেন সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান অধ্যাপক আলী রীয়াজ। কমিশনের সদস্য হিসেবে রয়েছেন- জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন প্রধান আবদুল মুয়ীদ চৌধুরী, পুলিশ সংস্কার কমিশনের প্রধান সফর রাজ হোসেন, নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মজুমদার, বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের সদস্য বিচারপতি এমদাদুল হক এবং দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কার কমিশনের প্রধান ইফতেখারুজ্জামান।
২০২৪ সালের জুলাই-অগাস্টের গণঅভ্যুত্থানের পর মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার রাষ্ট্রসংস্কারের লক্ষ্যে ১১টি সংস্কার কমিশন গঠন করেন। এরইমধ্যে সংবিধান, নির্বাচন ব্যবস্থা, বিচার বিভাগ, জনপ্রশাসন, দুর্নীতি দমন কমিশন এবং পুলিশ সংস্কারের জন্য গঠিত ৬ কমিশন তাদের সুপারিশসহ প্রতিবেদন জমা দিয়েছে।
প্রতিবেদনে আসা গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশগুলোর ওপর ১৩ই মার্চের মধ্যে মতামত জানাতে ৩৮টি দলকে অনুরোধ জানিয়েছিল ঐকমত্য কমিশন। তার মধ্যে অর্ধেক দল এখনো তাদের মতামত দেয়নি।
