নির্বাচন নিয়ে সরকারের সুস্পষ্ট অবস্থান জানতে চায় বিএনপি

রাজনীতি

জাতীয় নির্বাচন নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের সুস্পষ্ট অবস্থান জানতে চায় বিএনপি। সরকারের তরফ থেকে আগামী ডিসেম্বর থেকে পরবর্তী জুনের মধ্যে নির্বাচনের যে সময়সীমার কথা বলা হয়েছে, তাতে নির্বাচন নিয়ে দলটির মধ্যে এক ধরনের ‘শঙ্কা’ কিংবা ‘ধোয়াশা’ রয়েই গেছে। এই বিষয়ে সরকারের নীতিগত অবস্থান কী, ঠিক কবে নাগাদ তারা নির্বাচন অনুষ্ঠানের চিন্তা করছেন, সংস্কার প্রক্রিয়া এগুচ্ছে না কেন, তা জানতে শিগগিরই অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান ড. মুহম্মদ ইউনূসের সাথে আবারো বৈঠকের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি। গত সোমবার রাতে দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানা গেছে। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ঈদ পরবর্তী স্থায়ী কমিটির এই বৈঠকে বেশ কয়েকটি এজেন্ডা নিয়ে আলোচনা হয়। এর মধ্যে নির্বাচনী রোডম্যাপ ও সংস্কার প্রসঙ্গ ছিল অন্যতম।

বিএনপি গত ২৩ মার্চ জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কাছে পাঁচটি সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবনার ওপর দলীয় মতামত জমা দিয়েছে। মতামত দেয়ার পাশাপাশি দলটি সংস্কার ইস্যুতে সরকারকে পুরোপুরি সহযোগিতা করছে বলেও জানানো হয়। স্থায়ী কমিটির বৈঠকে নেতারা বলেন, সরকারের উচিত নির্বাচনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সংস্কারগুলো দ্রুত সম্পন্ন করা এবং চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন অনুষ্ঠান করা।

বিএনপি মনে করে, নির্বাচনকেন্দ্রিক যত সংস্কার রয়েছে, সেগুলো সরকার একটা অধ্যাদেশের মাধ্যমে করতে পারে। আর বাকি সংস্কারগুলো রাজনৈতিক ঐকমত্যের ভিত্তিতে পরবর্তী নির্বাচিত সংসদ করবে। তবে সরকারের তরফ থেকে নির্বাচনের বিষয়ে যে সময়সীমার কথা বলা হয়েছে, সে ব্যাপারে এখনো আশ্বস্ত নয় বিএনপি। তাদের মধ্যে নির্বাচন প্রলম্বিত হওয়ার নানান শঙ্কা এখনো রয়ে গেছে। সরকারের তরফ থেকে সর্বশেষ বলা হয়েছে, চলতি বছরের ডিসেম্বর থেকে আগামী বছরের জুনের মধ্যে নির্বাচন হতে পারে। বিএনপি মনে করে, এটি নির্বাচনের কোনো সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ না। কারণ, নির্বাচন নিয়ে সরকারের দায়িত্বশীল কেউ কেউ একেক সময় একেক কথা বলছেন। ফলে নির্বাচন নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার আসলে কী ভাবছে কিংবা তাদের অবস্থান কী, সেটা সুস্পষ্টভাবে জানতে খুব শিগগিরই প্রধান উপদেষ্টার সাথে দেখা করবে দলটি।

জানা গেছে, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সিঙ্গাপুর থেকে চিকিৎসা শেষে দেশে ফিরলে এই সাক্ষাৎ অনুষ্ঠিত হবে। সেখানে নির্বাচন নিয়ে বিএনপির যে উদ্বেগ ও সংশয়, সেটা প্রধান উপদেষ্টাকে জানাবে দলটি। একই সঙ্গে দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে বিএনপির যে মতামত, সেটাও তারা তুলে ধরবে। চিকিৎসার জন্য গত রোববার সিঙ্গাপুর গেছেন বিএনপি মহাসচিব। সপ্তাহখানেক পরে তার ঢাকায় ফেরার কথা রয়েছে। জানা গেছে, প্রধান উপদেষ্টার সাথে সাক্ষাতের পরই নির্বাচনী রোডম্যাপ ইস্যুতে দলের পরবর্তী কর্মসূচি নির্ধারণ করবে বিএনপি। এ ক্ষেত্রে তারা এ মাসের শেষ দিকে বা আগামী মাসে একাধিক সমাবেশও করতে পারে।

স্থায়ী কমিটিতে আরও আলোচনা হয়েছে, বিএনপি যেহেতু এই সরকারকে নানানভাবে সহযোগিতা করছে এবং আগামীতেও করবে; সে কারণে নির্বাচনী রোডম্যাপ ইস্যুতে তারা বড় ধরনের কোনো কর্মসূচিতে যেতে চান না। বিএনপির নীতি-নির্ধারকদের প্রত্যাশা, অন্তর্বর্তী সরকার দেশের বাস্তবতা, রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং বৈশ্বিক চাওয়া- এগুলো বিবেচনায় নিয়ে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করবেন। দলটি মনে করে, দ্রুত নির্বাচন হলে দেশে বিদ্যমান নানা সঙ্কট ধীরে ধীরে কেটে যাবে এবং দেশে স্থিতিশীলতা ফিরে আসবে।

জানা গেছে, স্থায়ী কমিটির বৈঠকে ফিলিস্তিনের ওপর ইসরাইলের বর্বরতা ও গণহত্যার ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করা হয়। দ্রুত এই নৃশংসতা বন্ধের দাবি জানিয়েছে তারা। একই সাথে তারা নিরীহ ফিলিস্তিনিদের ওপর চলমান বর্বর হামলা ও গণহত্যার বিরুদ্ধে দলীয়ভাবে খুব শিগগিরই রাজধানীতে বড় ধরনের বিক্ষোভ করবে। এ ছাড়া আগামী শনিবার রাজধানীতে অনুষ্ঠেয় ‘মার্চ ফর গাজা’ কর্মসূচিতে সংহতি জানাবে বিএনপি এবং দলটির নেতাকর্মীরা সেখানে অংশ নিতে পারেন।

ফিলিস্তিনের গাজায় সংঘটিত শতাব্দীর বর্বরোচিত গণহত্যার প্রতিবাদে ‘প্যালেস্টাইন সলিডারিটি মুভমেন্ট বাংলাদেশ’ এর পক্ষ থেকে রাজধানীতে ‘মার্চ ফর গাজা’ নামে এক বিশাল বিক্ষোভ সমাবেশ ও গণজমায়েতের ডাক দেয়া হয়েছে। আগামী ১২ এপ্রিল শাহবাগ থেকে শুরু হয়ে মানিক মিয়া এভিনিউয়ে গিয়ে এই কর্মসূচি শেষ হবে।

জানা গেছে, বৈঠকে আগামী ১৪ এপ্রিল পয়লা বৈশাখে দেশীয় সংস্কৃতি ফুটিয়ে তুলতে দলীয়ভাবে নানা কর্মসূচি গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। সে দিন দেশব্যাপী জেলা ও উপজেলায় র‌্যালি, মেলাসহ সাংস্কৃতিক বিভিন্ন অনুষ্ঠান হবে।

বৈঠকে বিএনপির নেতাদের বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পিনাকী ভট্টাচার্যের নানা নেতিবাচক মন্তব্য নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বিএনপির কোনো কোনো নেতা বলেন, পিনাকী হয়তো কোনো পক্ষের ‘উদ্দেশ্য’ বাস্তবায়নের জন্য এ ধরনের কাজ করে থাকতে পারেন। এটাকে তেমন গুরুত্ব দেয়ার কিছু নেই।

এ ছাড়া বিএনপির নিচের সারির নেতাদের কেউ কেউ সাম্প্রতিক সময়ে টকশোসহ বিভিন্ন জায়গায় যে উল্টা-পাল্টা কথা বলছেন, সেটা নিয়েও আলোচনা হয়েছে বৈঠকে। নেতারা মনে করেন, এ ধরনের কথাবার্তায় এক ধরনের প্রতিক্রিয়া তৈরি হচ্ছে। তাই এ ব্যাপারে দলের একটা গাইডলাইন দেয়া উচিত।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *