এমজেএইচ জামিল : মধ্যখানে বাকী ৪ দিন। এরপরই পবিত্র ঈদুল আজহা। ঈদের সময় ঘনিয়ে এলেও এখনো জমে উঠেনি প্রবাসী অধ্যুষিত সিলেটের কোরবানির পশুর হাট। নগরীর একমাত্র স্থায়ী পশুর হাটে পশুর পাশাপাশি লোক সমাগম ঘটলেও হাটে নেই ক্রেতা। তবে শেষ মুহূর্তে বেচাকেনা জমার আশায় বসে আছেন পাইকাররা।
নগরীর প্রধান ও একমাত্র বড় পশুর হাট কাজিরবাজার ঘুরে দেখা যায়, দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ছোট-বড় বাহারি রংয়ের গরু নিয়ে বসে আছেন পাইকাররা। সাথে ছাগল-ভেড়ারও সমাগম রয়েছে বাজারে। কিন্তু ক্রেতা কম। যারা আসছেন গরু দেখে দরদাম করেই চলে যাচ্ছেন। বিক্রি নেই বললেই চলে।
এরই মধ্যে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় সিটি কর্পোরেশনের উদ্যোগে আরো ৭টি অস্থায়ী হাটের প্রস্তুতি ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। এসব অস্থায়ী হাটেও পশু আসতে শুরু হয়েছে। এছাড়া সদর উপজেলা প্রশাসন অনুমোদিত আরো ১০টি হাটও কেনাবেচার জন্য প্রস্তুত রয়েছে। সেসব হাটেও আসতে শুরু করেছে পশু।
সিসিক সূত্র জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার (২৯ মে) ইজারা প্রক্রিয়া শেষে ইজারাদারদের দায়িত্ব হস্থান্তর করা হয়েছে। ইতোমধ্যে এসব হাটে পশু আসাও শুরু হয়েছে। এবার সিসিকের পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসকের কাছে নগরীর ১২টি স্থানে অস্থায়ী পশুর হাটের জন্য আবেদন করা হয়। এরমধ্যে ৭টি হাটের অনুমোদন দেয় জেলা প্রশাসন। অনুমোদিত হাটগুলো হচ্ছে- দক্ষিণ সুরমা প্যারাইরচক ট্রাক টার্মিনাল, মিরাপাড়া আব্দুল লতিফ স্কুল সংলগ্ন মাঠ, টিলাগড় পয়েন্ট, মেজরটিলা বাজার, নতুন টুকেরবাজার, মাছিমপুর কয়েদীর মাঠ ও শাহপরান গেইট এলাকা।
এদিকে মঙ্গলবার সরেজমিনে কাজিরবাজার পশুর হাট ঘুরে দেখা গেছে, দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে গরু নিয়ে এসেছেন পাইকারিরা। সামিয়ানার নিচে যত্নে রাখা হয়েছি সারি সারি গরু। এর বাইরেও রয়েছে ছাগল-ভেড়া। একেক জন পাইকারী বিক্রেতা ২০ থেকে ৫০টি গরু তুলেছেন বাজারে। কিন্তু তার মধ্যে দুয়েকটি ছাড়া বিক্রি তেমন নেই। কেউ কেউ এখনো একটিও বিক্রি করতে পারেন নি।
বিক্রেতারা বলেন, দেশের অন্যান্য অঞ্চল থেকে প্রবাসী অধ্যুষিত সিলেটে গরু নিয়ে আসার অন্যতম উদ্দেশ্য বেশি বিক্রি। কিন্তু এবার বাজারের অবস্থা খুবই বেহাল। অবশ্য শেষ সময়ে বিক্রি বাড়বে এমন প্রত্যাশা ব্যবসায়ীদের।
কাজিরবাজারের গরু বিক্রেতা আব্দুল গফুর বলেন, এই হাটে স্থানীয় প্রায় ৫০ জন এবং বাইরে দেড় শতাধিক পাইকার গরু নিয়ে এসেছেন। এবার গরুর দাম তুলনামুলক কম থাকায় বিক্রেতাদের মাঝে আগ্রহ কিছুটা কম পরিলক্ষিত হচ্ছে। অথচ পশু খাদ্যের দাম ও পরিচর্যা মূল্য তুলনামূলক বেড়েছে।
বিক্রেতা নবী হোসেন বলেন, নেত্রকোনা থেকে সিলেটে গরু নিয়ে আসেন ২ দিন আগে। কিন্তু এখনো বিক্রি নেই বললেও চলে। ক্রেতা নাই দেখে লোকজন দামও কম হাঁকাচ্ছে।
স্থানীয়ভাবে গরু নিয়ে আসা সিলেট সদর উপজেলার শিবেরবাজারের ময়না মিয়া বলেন, সিলেটে ঈদের হাটে শেষ সময়ে পশু বিক্রি বাড়ে। দামও পাওয়া যায় ভালো। নিজের টাকার জরুরী প্রয়োজন তাই ৫টি গরু নিয়ে এসেছি। ২দিন থেকে হাটে থেকে মাত্র ১টি বিক্রি করেছি। ক্রেতারা আসেন দাম করেন। কিন্তু ন্যায্য দাম না পাওয়ায় বিক্রি করতে পারছিনা।
ছাগল বিক্রেতা শেরেনুর বলেন, এবার শুরুতেই বাজারে মন্দাভাব দেখছি। ছাগলের বাজার সাধারণত এমন থাকেনা। রাখা ও খাবারের ঝামেলা এড়াতে অনেকেই শেষ সময়ে গরু কিনেন। কিন্তু ছাগলে তেমন ঝামেলা না থাকায় আগেই কিনতে দেখা গেছে। তবে এবার সেটা দেখা যাচ্ছেনা। শেষ মুহূর্তে বাজার জমে উঠবে আশা প্রকাশ করছেন তিনি। এবার ২০টি ছাগল নিয়ে হাটে এসেছেন বলেও জানান তিনি।
নগরীর টিলাগড়স্থ অস্থায়ী পশুর হাটের ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য মোহাম্মদ লিলু মিয়া বলেন, আমরা পুরোপুরি প্রস্তুত রয়েছি। ইতোমধ্যে পশুও আসা শুরু হয়েছে। নগর এলাকায় শেষ ২/৩ দিনই ব্যবসা হয়। এবারও শেষ দিকে বাজার জমে উঠবে বলেই মনে হচ্ছে।
এ ব্যাপারে কাজিরবাজার পশুর হাটের ব্যবস্থাপক শাহাদাত হোসেন লোলন দৈনিক জালালাবাদকে বলেন, হাটে ইতোমধ্যে পশু আসা শুরু হয়েছে। প্রতিদিনই নতুন নতুন পশু যোগ হচ্ছে। এবার দামও কম। এখন পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিও ভালো। শেষ সময়ে বিশেষ করে বৃহস্পতি ও শুক্রবার থেকে হাট পুরোদমে জমে উঠবে বলে আশা করছি।
তিনি বলেন, শহরের অনেক মানুষ আছেন শেষ সময়ে পশু কিনে থাকেন। কারণ আগে কিনে রাখার জায়গা, খাবার সংগ্রহ ও পরিচর্যার বিষয়টি মাথায় রেখেই অনেক কুরবানীদাতা শেষ দিকে পশু ক্রয় করেন। সিটি কর্পোরেশন থেকে ৭টি অস্থায়ী হাটের অনুমতি মিলেছে বলে শুনেছি। এর বাইরে অবৈধ হাট না বসলে বিক্রেতা এবং ক্রেতা উভয়েই লাভবান হবে। কিন্তু শেষ দিকে পুরো নগরী হাটে পরিনত হলে অনেক পাইকার পশু নিয়ে শহরে আসতে ভয় পান। এ বিষয়ে সিটি কর্পোরেশন ও প্রশাসনকে কার্যকর উদ্যোগ নেয়ার আহ্বান জানান তিনি।
সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের মিডিয়া কর্মকর্তা অতিরিক্ত উপ-কমিশনার মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, সিলেট সিটি কর্পোরেশন ও সিলেট সদর উপজেলায় স্থায়ী-অস্থায়ী মিলে ২০টি হাটের তালিকা পেয়েছি। এসব হাটের নিরাপত্তায় পর্যাপ্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। ক্রেতা-বিক্রেতাদের নিরাপত্তায় সাদা পোষাকের গোয়েন্দা পুলিশও কাজ করছে।
সিলেট সিটি কর্পোরেশনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মতিউর রহমান দৈনিক জালালাবাদকে বলেন, সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে ১২টি স্থানে পশুর হাটের অনুমোদন চেয়ে জেলা প্রশাসক বরাবরে আবেদন করা হয়। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৭টির অনুমোদন দেয়া হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার ইজারাদারদেরকে সকল কাগজপত্র বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে। এখন হাট জমানোর দায়িত্ব ব্যবসায়ীদের। এর বাইরে যাতে কোনো হাট কেউ বসাতে না পারে, সেদিকে সিসিকের বিশেষ দৃষ্টি থাকবে। এছাড়া জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
শেয়ার করুন