সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে নির্বাচন নিয়ে জামায়াত-বিএনপির দ্বৈরথ, চ্যালেঞ্জিং বলছেন বিশ্লেষকরা

রাজনীতি

২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারির শুরুতে অথবা এপ্রিলে হতে পারে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এ লক্ষ্যে ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন আয়োজনে সব ধরনের প্রস্তুতি শেষ করতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এমন পদক্ষেপের জন্য ইতোমধ্যে প্রধান উপদেষ্টাকে ‘সাধুবাদ’ জানিয়েছে বিএনপি।

তবে জনমতের প্রতিফলন আর কালো টাকার দৌরাত্ম্য রোধে সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন চায় জামায়াতে ইসলামী। যদিও এই পদ্ধতির বিরোধিতা করছে বিএনপি।

দলটির দাবি, একটি দলকে সুবিধা দিতে এই পদ্ধতিতে নির্বাচন হতে পারে না। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে নির্বাচনে যেমন সুবিধা আছে, তেমনি অনেক চ্যালেঞ্জও রয়েছে।

বর্তমানে বিশ্বের প্রায় ৯০টি দেশে পিআর বা সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। রাষ্ট্রবিজ্ঞানী সাব্বির আহমেদের মতে, দল যে পরিমাণ ভোট পাবে, তা অনুযায়ী ৩০০ আসনের মধ্যে কোন দল কতটি আসন পাবে, সেটি নির্ধারণ হয়। তবে প্রপোরশনেট রিপ্রেজেন্টেশন (পিআর) বা সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতির প্রয়োজন রয়েছে। এমনকি এই পদ্ধতিতে নির্বাচনের জন্য দলগুলোরও প্রস্তুতির প্রয়োজন রয়েছে।

গত ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের আগে পিআর নিয়ে আলোচনা খুব একটা ছিল না। কিন্তু ফ্যাসিস্ট শাসন ব্যবস্থার অবসানের পর সংসদে সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্বের বিষয়টি বেশ আলোচিত হচ্ছে।

গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনতে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) এই পদ্ধতিতে নির্বাচন চায়। এ ক্ষেত্রে জামায়াতের যুক্তি- পিআর পদ্ধতিতে জনমতের প্রতিফলন হয়। সেই সঙ্গে নির্বাচনে কালো টাকার দৌরাত্ম্যও কমে।

জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, বেশিরভাগ জনগণ যাকে সরকার গঠনের দায়িত্ব বা সমর্থন দিল, তারা আসন কম পেলে কিন্তু সরকার গঠন করতে পারবে না। আর স্থানীয়ভাবে আসনভিত্তিক প্রার্থী হলে জয়ের জন্য ‘মাসলম্যান’ ব্যবহার ও টাকার দৌরাত্ম্যও রোধ হবে।

তবে এই পদ্ধতিতে নির্বাচনের বিপক্ষে অবস্থান বিএনপির। দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন হলে যারা ভোট দেবে, তারা কেউ জানবে না যে তাদের প্রতিনিধি কে হবেন। আর বিশেষ কোনো দলের সুবিধা হবে এমন পদ্ধতিতে নির্বাচন করতে হবে, এমনটা হতে পারে না।

বহুল আলোচিত এই নির্বাচন পদ্ধতি নিয়েও অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোরও নিজস্ব অবস্থান রয়েছে। গণসংহতি আন্দোলনের নির্বাহী সমন্বয়কারী আবুল হাসান রুবেল জানান, বাংলাদেশে দলের মেনিফেস্টো দেখে ভোট দেন, এমন ভোটারের সংখ্যা অনেক কম। এ ক্ষেত্রে আঞ্চলিক দলগুলো বড় ধরনের অসুবিধার সম্মুখীন হতে পারে।

অন্যদিকে নির্বাচনের আগে সংস্কার ও জুলাই সনদ নিয়ে শঙ্কায় জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। দলটির ভাষ্য, দুইবার বলা হলেও এখনো জুলাই ঘোষণাপত্র দেয়নি সরকার। এ ক্ষেত্রে বাঁধার বিষয়টি সরকারের পক্ষ থেকে স্পষ্ট করা জরুরি বলেও মনে করে দলটি।

তবে পিআর বা সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে নির্বাচনের নানামুখী চ্যালেঞ্জ রয়েছে বলে জানিয়েছেন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী সাব্বির আহমেদ। তার মতে, সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতি চালু হলে বড় দলগুলোতে অস্বস্তি তৈরি হতে পারে। এতে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ার সম্ভাবনা কমে যাবে। এমন হলে সরকার গঠনে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে জোট।

তিনি বলেন, ভোট কখনো নষ্ট হয় না। তাছাড়া নির্বাচনে রিলিজিয়াস ডাইভার্সিটি থাকে, নারী প্রতিনিধিত্বের বিষয় থাকে, অ্যান্টি গ্রুপ থাকে- পিআর পদ্ধতিতে এদের প্রতিনিধিত্ব বাড়ে। আর পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো- দুই-তৃতীয়াংশ মেজরিটি কেউ পায় না। এমনকি সিম্পল মেজরিটিও পাওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *