
সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ নগরীর আইন-শৃঙ্খলা উন্নয়ন, ফুটপাত দখলমুক্তকরণ ও ট্রাফিক জ্যাম নিয়ন্ত্রণে একাধিক উদ্যোগ নিয়েছে। কমিশনার আবদুল কুদ্দুছ চৌধুরী, পিপিএম দায়িত্ব নেওয়ার পর তাঁর নেতৃত্বে নগরজুড়ে শুরু হয়েছে ‘আধুনিক নগর গড়ার’ কার্যক্রম।
হকার উচ্ছেদ ও ব্যাটারিচালিত রিকশার দৌরাত্ম্য কিছুটা কমলেও এবার বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে সিএনজি অটোরিকশার বেপরোয়া চলাচল ও অবৈধ স্ট্যান্ড।
‘নো পার্কিং জোন’ এখন ‘ইয়েস পার্কিং জোন’:
সিলেট নগরীতে যেখানে “নো পার্কিং জোন” নির্ধারিত—সেখানে আজ অনায়াসে সিএনজি অটোরিকশা পার্ক করে রাখা হয়। শহরের প্রায় প্রতিটি মোড়, হাসপাতাল, সরকারি অফিস, বাজার ও আবাসিক এলাকার পাশে গড়ে উঠেছে শতাধিক অবৈধ সিএনজি স্ট্যান্ড।
সিলেট সিটি করপোরেশন বা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এসব স্ট্যান্ডের কোনো অনুমোদন দেওয়া হয়নি। স্থানীয় শ্রমিক নেতারা নিজেদের প্রভাব ও গোষ্ঠী শক্তি ব্যবহার করে স্ট্যান্ড বসিয়ে ভাড়া আদায় করছেন।
শুধু মদিনা মার্কেট এলাকায়ই চারটি আলাদা সিএনজি স্ট্যান্ড রয়েছে—সবগুলোই অবৈধ।
সিলেটে বিআরটিএ অনুমোদিত সিএনজি-অটোরিকশার সংখ্যা ১৯ হাজার ২০০। কিন্তু বাস্তবে নগরে চলাচল করছে ৫০ থেকে ৬০ হাজার অটোরিকশা।
পরিবহন মালিক ও শ্রমিকদের দাবি, এই বিপুল সংখ্যক সিএনজি চলছে শুধুমাত্র ‘টোকেন ব্যবস্থায়’। অর্থাৎ, মালিক বা চালকরা নির্দিষ্ট সংগঠন বা গোষ্ঠীকে টাকা দিয়ে একটি টোকেন সংগ্রহ করেন—যা বৈধ লাইসেন্স নয়, তবু পুলিশ নজর এড়িয়ে চলাচল করছে অবাধে।
সিলেট মহানগর পুলিশ কমিশনার আবদুল কুদ্দুছ চৌধুরী, পিপিএম গত ২২ সেপ্টেম্বর ঘোষণা দিয়েছিলেন—
“নগরে কোনো অবৈধ যানবাহন চলবে না, কোনো অবৈধ স্ট্যান্ডও থাকবে না।”
এর পর থেকে অবৈধ যানবাহনের সংখ্যা কিছুটা কমলেও অবৈধ স্ট্যান্ড এখনো বহাল তবিয়তে চলছে।
এই বিষয়ে কথা বলতে সিলেট মহানগর পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের ডিসি মাহফুজুর রহমান-এর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
নগর পরিকল্পনাবিদ ও পরিবহন বিশ্লেষকরা বলছেন, সিলেটের ট্রাফিক জ্যামের মূল কারণগুলোর একটি হলো রাস্তার পাশে অবৈধ স্ট্যান্ড।সড়কের দুই পাশে সিএনজি অটোরিকশা সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করিয়ে রাখার কারণে রাস্তার প্রস্থ কমে যায়, ফলে যান চলাচল ব্যাহত হয়।রাস্তার জায়গা জনগণের, স্ট্যান্ডের নয়। নগরের মূল সড়ক দখল করে যেভাবে স্ট্যান্ড গড়ে উঠেছে, তাতে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ অসম্ভব হয়ে পড়েছে।
নগরবাসী মনে করেন রাস্তা থেকে সিএনজি স্ট্যান্ড সরিয়ে উন্মুক্ত জায়গা খুজে বের করা দরকার। এ প্রসঙ্গে তারা বলেন, রংমহল টাওয়ারের বিপরীতে পুরাতন জেলের জায়গা বর্তমানে সিটি করপোরেশনের যানবাহন রাখার জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে। এই স্থানে একটি কেন্দ্রীয় সিএনজি স্ট্যান্ড গড়ে তোলা যেতে পারে, যেখান থেকে শহরের বিভিন্ন রুটে অটোরিকশা চলাচল করবে। এতে সড়কের চাপ কমবে এবং ট্রাফিক ব্যবস্থাও সুশৃঙ্খল হবে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, শুধু পুলিশি অভিযান নয়, সিটি করপোরেশন, বিআরটিএ, পরিবহন মালিক সমিতি ও শ্রমিক ইউনিয়নের সমন্বিত উদ্যোগ ছাড়া সিলেটে ট্রাফিক শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়।
অন্যথায়, সিএনজির বেপরোয়া চলাচল, অবৈধ স্ট্যান্ড ও টোকেন বাণিজ্য বন্ধ করা যাবে না।
সিলেট মহানগর পুলিশ কমিশনারের নেতৃত্বে শুরু হওয়া এই ‘নগর সংস্কার অভিযান’ নগরবাসীর প্রত্যাশার নতুন দিগন্ত খুলেছে। তবে নাগরিকরা বলছেন, এই উদ্যোগ যেন সাময়িক না হয়—বরং ধারাবাহিকভাবে বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে সিলেট সত্যিকার অর্থে একটি আধুনিক, শৃঙ্খল ও চলাচলযোগ্য নগরে পরিণত হয়।
শেয়ার করুন


