ভারত সফর থেকে এসে নির্বাচন নিয়ে বেফাঁস মন্তব্য করে সমালোচনার মুখে পড়া পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেনের মন্ত্রিত্ব থাকবে কি না, সেটা প্রধানমন্ত্রীর এখতিয়ার বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
সচিবালয়ে বুধবার (৭ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশ সেক্রেটারিয়েট রিপোর্টার্স ফোরাম (বিএসআরএফ) সংলাপে তিনি এ কথা জানান।
এক প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের বলেন, ‘পররাষ্ট্রমন্ত্রী সবসময় প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হবেন এমন কোনো কথা নেই। নরেন্দ্র মোদি এসেছেন। তখন কি (তাদের) পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাথে ছিলেন? পররাষ্ট্রমন্ত্রীও তো মানুষ, একজন মানুষ অসুস্থও হতে পারেন
‘তার বাসা থেকে শুনেছি তিনি কিছুটা অসুস্থ। এটা হতেই পারে…কিছুদিন আগে তার হয়তো একটা স্লিপ হয়েছে, কথাবার্তা বলা, সেটার জন্য তার মন্ত্রিত্ব চলে যাবে কি না, এ এখতিয়ার তো আমার নেই। এ এখতিয়ার প্রধানমন্ত্রীর। তিনি চাইলে বাদ দিতে পারেন। এ বিষয়ে অন্য কারও কিছু বলার নেই। বললে সেটা হবে অতিকথন।’
মন্ত্রিসভার সদস্যদের মধ্যে সম্প্রতি তুমুল আলোচিত পররাষ্ট্রমন্ত্রী। একের পর এক বেফাঁস মন্তব্যে ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষ নেতৃত্ব থেকে অসন্তোষের বিষয়টিও প্রকাশ পায়।
সম্প্রতি তিনি শেখ হাসিনার সরকারকে টিকিয়ে রাখতে ভারত সরকারকে অনুরোধ জানিয়েছেন বলে বক্তব্য দেয়ার পর সেটি নিয়ে তুমুল সমালোচিত হন।
শেখ হাসিনার ভারত সফর থেকে মন্ত্রী বাদ পড়ে যাবেন, এমনটি ধারণায় ছিল না। কারণটা হলো সাধারণত রাষ্ট্রীয় সফরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী সরকারপ্রধানের সঙ্গেই থাকেন
গত সোমবার শেখ হাসিনা দেড় শতাধিক সফরসঙ্গী নিয়ে ভারতযাত্রার সময় মোমেন যাননি। দুই দেশের মধ্যকার অমীমাংসিত নানা সমস্যার সমাধানে দুই দেশের সরকারের কী চিন্তা, এ নিয়ে যখন সংবাদ বা আলোচনা বেশি হওয়ার কথা, তখন চর্চাটা হচ্ছে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর না যাওয়া নিয়ে।
আগের দিন মন্ত্রী যখন এই সফর নিয়ে ব্রিফিং করছিলেন, তখন তিনি জানিয়েছেন, তিনিও যাচ্ছেন প্রতিবেশী দেশটিতে, তবে সেটির ব্যতিক্রম হলো কেন, এ বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে কোনো ব্যাখ্যা দেয়া হয়নি।
গত ১৮ আগস্ট পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যের দুই দিন পর ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে ১৫ আগস্ট স্মরণে আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিকবিষয়ক উপকমিটির অনুষ্ঠান শেষে এ বিষয়ে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করেন দলটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রহমানকে। উত্তরে তিনি বলেন, ‘পররাষ্ট্রমন্ত্রী আওয়ামী লীগের কেউ নন।’
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সর্বশেষ কমিটিতে রয়েছেন ড. এ কে আব্দুল মোমেন।
চট্টগ্রামে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যের পর ২১ আগস্ট তার পদত্যাগ চেয়ে রেজিস্ট্রি ডাকযোগে আইনি নোটিশ পাঠান এরশাদ হোসেন নামের এক আইনজীবী।
নোটিশে বলা হয়, ‘গত ১৮ আগস্ট চট্টগ্রামে জন্মাষ্টমীর এক অনুষ্ঠানে আপনি বলেছেন, ভারতের কাছে আপনি অনুরোধ করেছেন, যেকোনো মূল্যে শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় রাখা দরকার। আপনার এ বক্তব্যের মাধ্যমে আপনি আপনার শপথ ভঙ্গ করেছেন। আপনি সংবিধানকে লঙ্ঘন করেছেন; দেশের সার্বভৌমত্বের ওপর আঘাত করেছেন।
‘এ অবস্থায় নোটিশপ্রাপ্তির ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে আপনার পদ থেকে পদত্যাগ করতে হবে। অন্যথায় আপনার বিরুদ্ধে পরবর্তী আইনগত পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হবো।’
শেয়ার করুন