হাদি হত্যাকাণ্ডে ভারতে দুজন গ্রেপ্তার, চাঞ্চল্যকর তথ্য দিল পুলিশ

বাংলাদেশ

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শহীদ শরীফ ওসমান হাদিকে হত্যার ঘটনা পূর্বপরিকল্পিত ছিল বলে জানিয়েছে ডিএমপি। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত মোট ১১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তবে হত্যাকাণ্ডে মূল অভিযুক্ত আসামি দেশ ছেড়ে পালিয়েছে। তাদের সহযোগিতার অভিযোগে ভারতে দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

আজ রবিবার হাদি হত্যা মামলার বর্তমান অগ্রগতি তুলে ধরে অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ডিএমপি) এস এন মো. নজরুল ইসলাম এসব তথ্য জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, ‘শরীফ ওসমান বিন হাদিকে হত্যার ঘটনা পূর্বপরিকল্পিত। এর ফলে আসামিদের চিহ্নিত করার আগেই তারা সীমান্ত পার হতে সক্ষম হয়। ফয়সালসহ আরো একজন ময়মনসিংহ দিয়ে সীমান্ত পার হয়ে ভারতে পালিয়েছে।

তিনি আরো বলেন, ‘ওসমান হাদির হত্যাকারীদের সহযোগিতা করা দুই ভারতীয়কে স্থানীয় পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। ফিলিপ তাদের সীমান্ত পার করে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের জনৈক পুত্তির কাছে পৌঁছে দেন। পুত্তি এরপর তাদের এক ট্যাক্সি ড্রাইভার সামির কাছে হস্তান্তর করেন। তিনি আসামিদের মেঘালয়ের পুরা নামক একটি শহরে পৌঁছে দেন।

ইনফরমাল চ্যানেলের মাধ্যমে মেঘালয় পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে জানা যায়—পুত্তি এবং তার স্বামীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।’ 

নজরুল ইসলাম বলেন, ‘তদন্তে প্রাপ্ত তথ্য, বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদন এবং গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের জবানবন্দি বিশ্লেষণে দেখা যায়—ফয়সাল ও আলমগীর ঘটনাস্থল থেকে ঢাকা থেকে সিএনজি করে আমিনবাজারে যান। পরে তারা মানিকগঞ্জের কালামপুরে পৌঁছান এবং সেখানে পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী একটি প্রাইভেটকারে ময়মনসিংহের হালুয়াঘাটে পৌঁছান।’

তিনি আরো জানান, হালুয়াঘাটে পৌঁছানোর আগে মুনফিলিং স্টেশনে ফিলিপ এবং সঞ্জয় তাদের গ্রহণের জন্য অপেক্ষা করছিল। ফিলিপ তাদের সীমান্ত পার করে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের জনৈক পুত্তির কাছে পৌঁছে দেন।পুত্তি এরপর তাদের এক ট্যাক্সি ড্রাইভার সামির কাছে হস্তান্তর করেন। ওই ট্যাক্সি ড্রাইভার তাদের মেঘালয়ের পুরা নামক একটি শহরে পৌঁছে দেন।

 

অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার বলেন, ‘ইনফরমাল চ্যানেলের মাধ্যমে মেঘালয় পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে জানা যায়—পুত্তি এবং তার স্বামীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘পুলিশ সন্দেহ করছে আসামিরা অবৈধ পথে সীমান্ত পার হয়েছেন।’

গ্রেপ্তার আসামিদের মধ্যে ৬ জন স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। দ্রুত এই মামলার অভিযোগপত্র দেওয়া হবে। আগামী ৭-৮ দিনের মধ্যে অভিযোগপত্র দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে ডিএমপি।

গত ১২ ডিসেম্বর দুপুর আনুমানিক ২টা ২০ মিনিটে পল্টন থানার বক্স কালভার্ট রোডে হামলার শিকার হন শরীফ ওসমান বিন হাদি। মতিঝিল মসজিদ থেকে জুমার নামাজ শেষে প্রচারণা চালিয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের দিকে যাওয়ার পথে মোটরসাইকেলে আসা প্রধান আসামি ফয়সাল করিম মাসুদ রাহুল দাউদ ও তার অজ্ঞাত পরিচয় সহযোগী হাদিকে লক্ষ্য করে চলন্ত অবস্থায় গুলি চালায়। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে প্রথমে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এবং পরে এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়। শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটলে ১৫ ডিসেম্বর তাকে সিঙ্গাপুরে পাঠানো হয়। সেখানে সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৮ ডিসেম্বর রাত ৯টা ৪৫ মিনিটে তিনি মারা যান।

এ ঘটনায় গত ১৪ ডিসেম্বর ইনকিলাব মঞ্চের সদস্যসচিব আব্দুল্লাহ আল জাবের বাদী হয়ে পল্টন থানায় হত্যাচেষ্টার মামলা করেন। মামলায় অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র, হত্যাচেষ্টা ও বিপজ্জনক অস্ত্র ব্যবহারের অভিযোগ আনা হয়। তবে হাদির মৃত্যুর পর গত ২০ ডিসেম্বর আদালতের আদেশে মামলায় দণ্ডবিধির ৩০২ ধারা (হত্যা) সংযোজনের আদেশ দেন ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সিদ্দিক আজাদ।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *