
বাংলাদেশের রাজনীতির এক অবিস্মরণীয় নাম বেগম খালেদা জিয়া। একসময় যিনি ছিলেন কেবলই এক সেনাপতির ঘরোয়া ঘরণী, সময়ের পরিক্রমায় তিনিই হয়ে উঠেছিলেন রাজপথের আপসহীন কান্ডারি।
মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) তার জীবনাবসানের মধ্যদিয়ে অবসান হলো বাংলাদেশের রাজনীতির একটি দীর্ঘ ও ঘটনাবহুল অধ্যায়ের। দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে সৃষ্টি হয়েছে একটি বিশাল শূন্যতা।
১৯৪৫ সালে দিনাজপুরে জন্ম নেয়া খালেদা খানম পুতুল ১৯৬০ সালে সেনা কর্মকর্তা জিয়াউর রহমানের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। দীর্ঘ দুই দশক পর্দার আড়ালে থেকে সংসার সামলেছেন তিনি। কিন্তু ১৯৮১ সালে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের হত্যাকাণ্ডের পর এক চরম অনিশ্চয়তার মুখে জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির হাল ধরতে বাধ্য হন তিনি। ১৯৮২ সালের ২ জানুয়ারি প্রাথমিক সদস্য হিসেবে যোগদানের মাধ্যমে শুরু হয় তার রাজনৈতিক অভিযাত্রা। পর্দার আড়ালে থাকা এক সাধারণ গৃহবধূ থেকে দেশনেত্রী হয়ে ওঠার সেই শুরু।
স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে রাজপথে তার আপসহীন ভূমিকা তাকে গণমানুষের নেত্রীতে পরিণত করে। ফলশ্রুতিতে, ১৯৯১ সালের সাধারণ নির্বাচনে জয়লাভ করে তিনি বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার গৌরব অর্জন করেন। তার প্রধানমন্ত্রিত্বকালেই দেশে সংসদীয় গণতন্ত্রের পুনঃপ্রবর্তন ঘটে। মেয়েদের উপবৃত্তি চালু এবং শিক্ষাক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধিত হয়। পরবর্তী সময়ে ১৯৯৬ এবং ২০০১ সালেও তিনি প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন।
তবে তার এই দীর্ঘ পথচলা কুসুমাস্তীর্ণ ছিল না। ১৯৯০-এর দশকের আন্দোলন থেকে শুরু করে পরবর্তী সময়ে কারাবরণ এবং শারীরিক অসুস্থতার মধ্যেও তিনি দলীয় নেতাকর্মীদের কাছে ছিলেন প্রেরণার উৎস। আজ (মঙ্গলবার) ভোরে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর মৃত্যুতে রাষ্ট্রপতি, প্রধান উপদেষ্টা, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা এবং বিভিন্ন দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানরা গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।
বাংলাদেশ সরকার ৩১ ডিসেম্বর থেকে ২ জানুয়ারি পর্যন্ত তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোক এবং বুধবার (৩১ ডিসেম্বর) সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এক কিংবদন্তি হয়েই বেঁচে থাকবেন ‘আপসহীন নেত্রী’ হিসেবে পরিচিত এই মহীয়সী নারী।



