এবারের মৌসুমে টেকনাফ থেকে সেন্ট মার্টিনে জাহাজ যাবে না

জাতীয়

মিয়ানমার সীমান্তে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি এবং নাফ নদীতে ডুবোচর দেখা দেওয়ায় এবার পর্যটন মৌসুমে টেকনাফ থেকে সরাসরি সেন্ট মার্টিনে জাহাজ চলাচল বন্ধ থাকবে; তবে কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম থেকে বঙ্গোপসাগরের বিচ্ছিন্ন এই দ্বীপ ভ্রমণে যেতে পারবেন পর্যটকরা।

সাধারণত অক্টোবর মাসের শুরু থেকে এই নৌ-পথে জাহাজ চলাচল শুরু হয়। পর্যটকরা এপ্রিল-মে মাস পর্যন্ত ভ্রমণে যেতে পারেন। পরে বর্ষা মৌসুমে সমুদ্র উত্তাল হয়ে উঠলে নিরাপত্তা বিবেচনায় এই পথে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

টেকনাফ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) দায়িত্বে থাকা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. এরফানুল হক চৌধুরী রোববার বিকালে বলেন, “টেকনাফ-সেন্ট মার্টিন নৌ-পথের নাফ নদীর মোহনা ও মিয়ানমারের নাইক্ষ্যংদিয়া এলাকায় একাধিক ডুবোচর জেগে ওঠায় নাব্য সংকট দেখা দিয়েছে। বিভিন্ন সময়ে পর্যটক নিয়ে জাহাজ ডুবোচরে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকা পড়ার খবর গণমাধ্যমে এসেছে।”

ডুবোচরে আটকা পড়ে গত এপ্রিল ও মে মাসে মিয়ানমার থেকে টেকনাফ স্থলবন্দরে আমদানি করা পণ্য নিয়ে আসা ট্রলারের মধ্যে কাঠভর্তি সাতটির বেশি ট্রলার ডুবির ঘটনা ঘটে। সব দিক বিবেচনা করে এবার টেকনাফ থেকে সেন্ট মার্টিনে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল বন্ধ রাখা হচ্ছে”, যোগ করেন এরফানুল।

জাহাজ মালিকদের সংগঠন সি-ক্রুজ অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশের (স্কোয়াব) সাধারণ সম্পাদক হোসাইন ইসলাম বাহাদুর জানান, সরকারি সিদ্ধান্ত মেনে টেকনাফের পরিবর্তে এবার কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম থেকে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল করবে।

এর মধ্যে ৬ অক্টোবর থেকে কক্সবাজার শহরের বাঁকখালী নদীর নুনিয়াছটার বিআইডব্লিউটিএ ঘাট থেকে ছাড়া হবে ৬৩২ জন ধারণক্ষমতার জাহাজ ‘এমভি কর্ণফুলী’। একই ঘাটে ১৫ অক্টোবর থেকে ছাড়বে ৫৫০ জন ধারণক্ষমতার ‘এমভি বারো আউলিয়া’।

বাহাদুর আরও বলেন, প্রতিদিন সকাল ৭টার দিকে জাহাজ দুটি ঘাট থেকে সেন্ট মার্টিনের উদ্দেশে ছেড়ে যাবে। বঙ্গোপসাগর পাড়ি দিয়ে জাহাজ সেন্ট মার্টিন দ্বীপে পৌঁছাবে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে।

স্কোয়াব সভাপতি তোফায়েল আহমদ জানায়, প্রতি বছর সাধারণত অক্টোবর থেকে সেন্ট মার্টিনের পথে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল শুরু হয়। এ বছরও তাই সেপ্টেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে জাহাজ চলাচলের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিলেন জাহাজ মালিকেরা। কিন্তু এর মধ্যেই স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের জাহাজ চলাচল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।

সর্বশেষ বৃহস্পতিবার কক্সবাজারে আয়োজিত এক সেমিনারেও পর্যটন সচিব মো. মোকাম্মেল হোসেন টেকনাফ-সেন্ট মার্টিন পথে চলতি মৌসুমে জাহাজ চলাচল না করার সিদ্ধান্তের কথা জানান।

টেকনাফ কেয়ারী সিন্দাবাদ জাহাজের ব্যবস্থাপক মো. শাহ আলম বলেন, জাহাজ চলাচল বন্ধ করে দিলে টেকনাফ হয়ে যাওয়া বিভিন্ন জাহাজ পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর পাশাপাশি টেকনাফ ও সেন্ট মার্টিন এলাকায় পর্যটননির্ভর অনেক ব্যক্তি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এ ছাড়া কক্সবাজার থেকে টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কে চলাচলকারী যানবাহনের মালিকেরাও ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।

তবে পরিস্থিতির উন্নতি হলে আবার জাহাজ চলাচল শুরু হবে বলে আশাবাদী জাহাজ মালিকেরা।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *