বিশ্বনাথে চাউলধনী হাওরে অবৈধভাবে মাছ আহরণের অভিযোগ

সিলেট

ফারুক আহমদ
স্টাফ রিপোর্টার

সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার চাউলধনী হাওরে অবৈধভাবে মাছ আহরণ ও ইজারাদার পক্ষের লোকজনের উপর হামলা-খুন-জখমের হুমকি প্রদান ও নৌকাসহ মালামাল চুরির অভিযোগে মামলা দায়ের করা হয়েছে। দশঘর মৎস্যজীবি সমবায় সমিতি লিমিটেডের সহ সভাপতি ও মৎস্যজীবি জুনাব আলী রোববার (৯ অক্টোবর) মামলাটি দায়ের করেন। মামলা নং ৬ (তাং ৯.১০.২২ইং)। মামলার বাদী জুনাব আলী উপজেলার কামারগাঁও গ্রামের মৃত আব্দুল মনাফের পুত্র।

মামলার এজাহারভূক্ত অভিযুক্তরা হলেন- উপজেলার মীরগাঁও গ্রামের মৃত আব্দুল গফুরের পুত্র আবুল কালাম, উত্তর দৌলতপুর গ্রামের মৃত ইমান আলীর পুত্র আনোয়ার হোসেন ধন মিয়া, চৈতননগর গ্রামের মৃত কলমদর আলীর পুত্র আফজল, উত্তর দৌলতপুর গ্রামের মৃত ছনুফর আলীর পুত্র কুতুব উদ্দিন, দশপাইকা গ্রামের আনফর আলীর পুত্র গিয়াস উদ্দিন, মৌলভীরগাঁও গ্রামের আব্দুর রাজ্জাকের পুত্র মাহফুজুর রহমান, কামারগাঁও গ্রামের মৃত আব্দুল রজাকের পুত্র রুশন আলী, মৌলভীরগাঁও গ্রামের সাইবুর রহমানের পুত্র হোসন মিয়া, দশপাইকা গ্রামের মোবারক আলীর পুত্র জুনাব আলী, উজাইজুরী গ্রামের আব্দুল কদ্দুছের পুত্র আব্দুল কাদির, মৌলভীরগাঁও গ্রামের মৃত মোশাহিদ আলীর পুত্র জাহিদুল হক। এছাড়া মামলায় আরো ৫/৬ জন অজ্ঞাতনামা অভিযুক্ত রয়েছেন।

বাদী মামলার অভিযোগপত্রে উল্লেখ করেছেন- দশঘর মৎস্যজীবি সমবায় সমিতি লিঃ বিগত ১৪২৪-২৯ বাংলা পর্যন্ত চাউলধনী হাওর জলমহালটি বন্দোবস্থ এনে মাছ আহরণ করে আসছে। কিন্তু মামলার অভিযোক্তরা তাদের সহযোগী সন্ত্রাসী বাহিনী লেলিয়ে দিয়ে বন্দোবস্থকৃত জলমহালে বিভিন্ন সময়ে বে-আইনীভাবে প্রবেশ করে সন্ত্রাসী কার্যকলাপ ও খুন-জখমের ভয়ভীতি দেখাইয়া মৎস্য আহরণ, বিষ প্রয়োগে মৎস্য সম্পদের ক্ষতিসাধন ও মাছ চুরি করিয়া ক্ষতিগ্রস্থ করে আসছে। এনিয়ে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা-মোকাদ্দমা চলমান ও বিচারাধীন আছে। এমনকি অভিযুক্তরা নিজেদের প্রভাব কাটিয়ে চৈতননগর গ্রামে জমিতে পানি সেচ ও রাস্তা নির্মাণকে কেন্দ্র করে দু’পক্ষের মারামারি ও সুমেল হত্যা মামলায় বাদীসহ মৎস্যজীবি সম্প্রদায়ের অনেককে শত্রুতামূলকভাবে অভিযুক্ত করেছে। বিগত ১৪২৭-২৮ বাংলা সনে বন্দোবস্থকৃত গ্রুপ জলমহালে মৎস্য আহরণ ও চুরি করিয়া ক্ষতিগ্রস্ত করায় সমিতির পক্ষে বাদী ও আব্দুল জলিল জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার বরাবরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। এর প্রেক্ষিতে গত ১৪ সেপ্টেম্বর উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে বিশ্বনাথে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও), থানার অফিসার ইন-চার্জ (ওসি), জনপ্রতিনিধি ও সাংবাদিকসহ এলাকার গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গের উপস্থিতি অনুষ্ঠিত সভায় আলোচনা সাপেক্ষে সিদ্ধান্ত হয় মাছ আহরণে ইজারাদারদের কেউ কোন প্রকার বাঁধা দিতে পারবে না বলে সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু সেই সভার সিদ্ধান্তের পর মামলার ১নং অভিযুক্তের নেতৃত্বে বন্দোবস্তকৃত জলমহালের বিভিন্ন পয়েন্টে ভেল জাল, কারেন্ট জাল, ফুরা জাল উরফে কোনা জাল দিয়ে অন্যায় ও বেআইনিভাবে মাছ শিকার করিতে থাকিলে আমরা (সমিতির নেতৃবৃন্দ) প্রশাসনের বিভিন্নস্তরে অভিযোগ করিলেও অভিযুক্তরা ও তাদের সন্ত্রাসী বাহিনীর সদস্যরা বে-আইনী মৎস্য আহরণ বন্ধ করে নাই। উল্টো অভিযুক্তরা একে অন্যের সহযোগীতায় বিভিন্ন সময়ে অস্ত্রের মহড়া দিয়ে বন্দোবস্তকৃত জলমহালের শ্রমিক ও পাহাড়াদার মৎস্যজীবিদের খুন-জখমের ভয়-ভীতি দেখাইয়া তাড়াইয়া দেয়।

বাদী মামলার অভিযোগপত্রে আরো উল্লেখ করেছেন- জলমহালটি অরক্ষিত করার পায়তারার অংশ হিসেবে গত ৩ অক্টোবর সকালে মামলার ৩-৭নং স্বাক্ষীগণ বাশের লাটি, খুঁটি, জাল নিয়ে লিজকৃত বিলে যাওয়ার পথিমধ্যে প্রধান অভিযুক্তের নেতৃত্বে অপরাপর অভিযুক্তরা দেশীয় অস্ত্র-সস্ত্রে (রামদা, ডেগার, লোহার লাইপ) সজ্জিত হয়ে তাদের (৩-৭নং স্বাক্ষীগণ) পথরোধ করে হামলা করে গূরুত্বর আহত করে।
এসময় অভিযুক্তরা মৎস্য আহরণে ব্যবহৃত বিভিন্ন সাইজের প্রায় ৫০ হাজার টাকার বাঁশের খুটিসহ প্রায় ২ লাখ ২০ হাজার টাকা মূলের মালামাল ও মৎস্য আহরণে ব্যবহৃত প্রায় দেড় লাখ টাকা মূল্যের দুটি নৌকা চুরি করে নিয়ে যায়। এরপর আমরা গূরুত্বর আহত আমতৈল গ্রামের সিরাজ আলীর পুত্র মাসুম আহমদকে ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য প্রথমে বিশ্বনাথ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও ৬ অক্টোবর এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করি।

এব্যাপারে মামলার প্রধান অভিযুক্ত আবুল কালাম ও দ্বিতীয় অভিযুক্ত আনোয়ার হোসেন ধন মিয়ার সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্ঠা করা হলে তাদের পাওয়া যায়নি।

এঘটনায় মামলা দায়েরের সত্যতা স্বীকার করে বিশ্বনাথ থানার অফিসার ইন-চার্জ (ওসি) গাজী আতাউর রহমান বলেন, তদন্ত সাপেক্ষে এব্যাপারে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *