নেদারল্যান্ডসকে হারিয়ে বাংলাদেশের ইতিহাস

খেলাধুলা

সকাল থেকেই হোবার্টের আকাশের মুখ ভার। আর হঠাৎ হঠাৎ বাতাসের সঙ্গে হালকা বর্ষণ (পাসিং শাওয়ার)। এমন কন্ডিশনে টস করার সময় বাংলাদেশ অধিনায়ক সাকিব আল হাসান পাননি ভাগ্যের ছোঁয়া। কঠিন কন্ডিশনে করতে হবে ব্যাটিং। অচেনা হোবার্টে বিশ্বকাপ অভিযানের শুরুতে অনেক চ্যালেঞ্জই ছিল বাংলাদেশের। সব চ্যালেঞ্জ উতরে বেলেরিভ ওভালে সাকিবরা টুর্নামেন্ট শুরু করেছেন ৯ রানের জয় দিয়ে। প্রথমবারের মতো টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দ্বিতীয় রাউন্ডে জয় পেল বাংলাদেশ।

যুদ্ধের ময়দানে আজ বাংলাদেশ আর কোনো পরীক্ষা নিরীক্ষায় যায়নি। গত কদিনে মেকশিফট ওপেনার হিসেবে খেলা মেহেদী হাসান মিরাজকে রাখা হয়েছে একাদশের বাইরে। স্বীকৃত দুই ওপেনার নাজমুল হোসেন শান্ত আর সৌম্য সরকারকে পাঠানো হয়েছে ইনিংস বোধনে। তাঁরা দুর্দান্ত কিছু করেননি আবার হতাশও করেননি। সৌম্য-শান্তর জুটি ৩১ বলে ৪৩ রান তুলে এনে দেন দারুণ এক শুরু।

ফন মেকেরেনের গতিময় শর্ট বলটা ঠিকঠাক পড়তে না পেরে পুল করতে গিয়ে সৌম্য ফিরলেন ১৪ বলে ১৪ রান করে। তাঁর পদাঙ্ক অনুসরণ করে দ্রুত ফিরলেন শান্তও (২৫)। দারুণ এক শুরুর পরই মাঝ ইনিংসে সেই পুরোনো রোগ হঠাৎ ভর করল বাংলাদেশের ওপর। ৫ ওভারের মধ্যে ২৯ রান তুলতেই নেই ৪ উইকেট। লিটন দাস (৯), সাকিব আল হাসান (৭) আর ইয়াসির (৩) ফিরে গেলেন ঝটপট। তাসমান সাগরের শীতল হাওয়া হিমস্রোত যেন বয়ে গেল বাংলাদেশ দলের মিডল অর্ডারে।

এক প্রান্তে ভরসা হয়ে থাকা আফিফ হোসেন ষষ্ঠ উইকেটে নুরুল হাসান সোহানকে নিয়ে শুরু করলেন আরেক লড়াই। দুজনের ৩৭ বলে ৪৪ রানের জুটিতেই বাংলাদেশ পেয়েছে লড়াইয়ের স্কোর। সোহানের ১৮ বলে ১৩ রানের ইনিংস ছিল আফিফকে এগিয়ে যাওয়ার সমর্থন। আফিফের ২৭ বলে ৩৮ রান অবশ্যই পরিস্থিতি বিবেচনায় গুরুত্বপূর্ণ এক ইনিংস। কিন্তু একবার জীবন পাওয়া তরুণ বাঁহাতি ব্যাটারের কাছে ফিফটি পাওনাই হয়ে গিয়েছিল।

গত কিছুদিনে বাংলাদেশ দল থেকে যে ‘ইম্প্যাক্ট’ শব্দ ধ্বনিত-প্রতিধ্বনিত হয়েছে, আজ সেটি দেখা গেল শুধু মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতের ব্যাটিংয়েই। আটে নেমে ১২ বলে ২ চার আর ১ ছক্কায় ২০ রানের ইনিংস খেলে বাংলাদেশের স্কোর তিনি পৌঁছে দিলেন ১৪৪ রানে।

এই স্কোর ‘ডিফেন্ড’ করতে মেঘলা আকাশে দুর্দান্ত একটা শুরুর দরকার ছিল বাংলাদেশের। সেটি করে দিলেন তাসকিন আহমেদ। প্রথম দুই বলেই ২ উইকেট নিয়ে ইনিংসের শুরুতেই হ্যাটট্রিকের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। হ্যাটট্রিক না হলেও তাসকিন যে বোলিংটা করলেন পাওয়ার প্লেতে, ওখানেই ম্যাচের সুরটা তিনি বেঁধে দিয়েছেন বাংলাদেশের পক্ষে। পরে তাঁর দেখানো পথ অনুসরণ কর তোপ দাগলেন হাসান মাহমুদও। ৪ ওভারে  ১ মেডেনে ২ উইকেটশিকার তরুণ পেসারের। আর অসাধারণ গ্রাউন্ড ফিল্ডিং তো ছিলই। তবে দুর্দান্ত বোলিংয়ে করে তাসকিন যেন সেই ২০১৫ বিশ্বকাপের তাসকিনকেই ফিরিয়ে নিয়ে এলেন সেই অস্ট্রেলিয়ায়। ২৫ রানে ৪ উইকেট নিয়ে করলেন ক্যারিয়ারসেরা বোলিং। নেদারল্যান্ডসের ব্যাটিং লাইনআপে একমাত্র ব্যতিক্রম ৬২ রান করা কলিন একারমান।

একাধিকবার বৃষ্টিবাধায় খেলা থামলেও ম্যাচ ভালোভাবে শেষ হতে সেটা আর বাধা হয়নি। বাধা হয়নি বাংলাদেশের দুর্দান্ত জয় পেতেও। ছবির মতো সুন্দর হোবার্ট থেকে বাংলাদেশ বিশ্বকাপ অভিযান শুরু করল জয় দিয়ে। গত কদিনে ঘিরে ধরা রাজ্যের চাপ থেকে বের হতে বাংলাদেশ এর চেয়ে ভালো সুযোগ বোধ হয় পেত না!

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *